জন্মদিন
শুভ জন্মদিন, রফিকুন নবী

রফিকুন নবী [জন্ম :২৮ নভেম্বর, ১৯৪৩]
হামিদুজ্জামান খান
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০
প্রথম আকর্ষণ
রফিকুন নবী আমার দুই কি তিন বছরের বড়। তাঁর প্রতি প্রথম আকর্ষণ তৈরি হওয়ার গল্পটা বলি। অনেক কাল আগের কথা। একবার তিনি আর হাশেম খান মিলে প্রদর্শনী করলেন। চারুকলার গ্যালারিতে। জলরঙের প্রদর্শনী। সেখানে তাঁর একটা ছবি দেখলাম। অনেক ডিটেইল দিয়ে করা একটা নৌকার ছবি। অপূর্ব ছিল ওটা। ততদিনে তাঁর সৃষ্ট টোকাইকে দেখেছি। টেলিভিশন, পত্রপত্রিকায় সবসময় তাঁকে নিয়ে কিছু না কিছু হচ্ছে। কিন্তু আমাকে বেশি আকৃষ্ট করল সেই নৌকার ছবি।
তাঁর ছবিগুলোকে আলাদা করা যায়। একটা ফিগারেটিভ বৈশিষ্ট্য থাকে, যেটা আমাকে ভাস্কর হিসেবে আকৃষ্ট করে। অনেকটা সময় নিয়ে ছবি আঁকেন রফিকুন নবী। বড় ভালো লাগে। তাঁর ছবি আঁকার প্রথম বিকাশটা হয়েছে আমার বিশ্বাস, গ্রিসে গিয়ে।
গ্রিসে পড়তে গিয়ে ছাপচিত্র আর কাঠ খোদাইয়ে বিশেষ দক্ষতা আসে। কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পান। সেই পথে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসে। ক্রমশ ছাপচিত্রে তিনি অনন্য হয়ে ওঠেন। বর্তমানে দেশের সেরা প্রিন্ট মেকারদের তিনি একজন। কাঠে কত বড় বড় কাজ করেন! দেখে অবাক লাগে। ভালো লাগে।
আমাদের সময়ে চারুকলা
আমাদের সময়ে চারুকলায় ঐচ্ছিক বিষয় নেওয়ার সুযোগ ছিল। সেভাবে অনেক শিক্ষকের সংসর্গে আসতাম। যেমন মোহাম্মদ কিবরিয়া স্যারের ক্লাস করতাম আমরা অন্য ডিপার্টমেন্টে গিয়ে। সবার সঙ্গে একটা ভালো বোঝাপড়া তৈরির সুযোগ ছিল। তখন প্রি-ডিগ্রি বলে একটা কোর্স ছিল; দুই বছরের। তারপর এলো তিন বছরের ডিগ্রি। আমরাই প্রথম ডিগ্রি কোর্স করি। এর আগের যাঁরা, তাঁরা সার্টিফিকেট কোর্সের ছাত্র। রফিকুন নবীও তাই।
আমরা যখন চারুকলায় ছিলাম, তখন সবাই ছিলেন। বাসেত স্যার (কাজী আবদুল বাসেত), আমিনুল ইসলাম স্যার, রাজ্জাক স্যার (আবদুর রাজ্জাক), সমরজিৎ স্যার (সমরজিৎ রায়চৌধুরী), কিবরিয়া স্যার (মোহাম্মদ কিবরিয়া)। এর পরের ধারায় এসেছেন রফিকুন নবী, হাশেম খান।
ব্যক্তিত্ব, কাজের ধরন
রফিকুন নবী খুব মিশুক এবং সবার সঙ্গে রসিকতা করেন। কোথাও বেড়াতে গেলে রাতে তাঁর ঘরে ডাকেন; অনেক গল্প করেন। খুব সুন্দর করে গল্প বলতে পারেন রফিকুন নবী। যখন চারুকলায় বা কোথাও তাঁর কাছে বসি, দেখি সারক্ষণ কিছু না কিছু আঁকছেন। তাঁর সৃষ্ট টোকাইয়ের জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, তখনও একইভাবে সারাক্ষণ কলম চালাতেন। জিজ্ঞেস করলে বলতেন, 'দেখ হামিদ, কী করতে হচ্ছে। কী করব বলো? আমাকে প্রতিদিনই পত্রিকায় কিছু না কিছু পাঠাতে হয়।' এখনও তিনি এমন। তবু আমাকে দেখলেই বলেন, 'তুমি তো ওয়ার্কাহোলিক। সারাক্ষণ কাজ করো। তোমার সাথে আমি পারলাম না হামিদ।'
একবার আমি বুলগেরিয়া যাব, তাঁকে বললাম। তিনি বললেন, 'বুলগেরিয়ায় আমার শ্যালক থাকে। তুমি গিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।' সে দেশে আমি তিন মাস ছিলাম। রফিকুন নবীর শ্যালক ভদ্রলোক অত্যন্ত সজ্জন এবং সে দেশের গাইনোকোলজি বিভাগের একজন চিকিৎসক। তিনি আমাকে অশেষ সাহায্য করেছেন।
রফিকুন নবীর বাবার সঙ্গেও আমার ভালো পরিচয় ছিল। তাঁরা পুরান ঢাকায় থাকতেন। বাবার সঙ্গে দেখা হলেই আমাকে বলতেন, 'হামিদ, আমাকে একটু মাটি দাও।' আমি অনেকবার তাঁর জন্য মাটি নিয়ে গেছি। রফিকুন নবীর বাবা ভালো ভাস্কর ছিলেন। ছোট ছোট অনেক ভাস্কর্য বানাতেন। ভালো ছবিও আঁকতেন। রফিকুন নবী খুশি হয়ে আমাকে জানাতেন, তাঁর বাবা কী কী করছেন।
একবার ইন্দোনেশিয়ার বালি গিয়েছি তিনিসহ; গিয়েছি ভুটান। দেশের ভেতর সুন্দরবন, সিলেট অনেক জায়গাতেই গিয়েছি। সবখানে দেখেছি দারুণ সব কাজ সেখানেই তৈরি করে ফেলতেন। জলরঙের কাজগুলো বেশি সুন্দর তাঁর। ইন্দোনেশিয়ায় তো অবকাঠামো সুন্দর; ভুটানেও। রফিকুন নবী আকৃষ্ট হতেন। আঁকতেন। ইন্দোনেশিয়ায় তিনি প্রচুর জলরঙের কাজ করেছেন। সমুদ্র এঁকেছেন। আঁকা ছবির দিকে তাকালে দেখা যায়, বিশেষ কোথাও কোথাও অনেক মনোযোগ দিয়েছেন। ওইটুকু অংশে ডিটেল বেশি। কোথাও আবার ছেড়ে দিয়েছেন। বেশি কাজ করেননি। এভাবে বৈচিত্র্য আসে। ভারসাম্য থাকে। খুব সুন্দর দেখায়। রং করার ক্ষেত্রে তিনি মৌলিক রংগুলো বেশি ব্যবহার করেন। যে কারণে ছবি উজ্জ্বল দেখায়। ভালো লাগে। নীল রঙের প্রতি তাঁর একটা ঝোঁক লক্ষ্য করেছি। প্রুশিয়ান ব্লু, কোবাল্ট ব্লু ব্যবহার করেন ছবিতে। তাঁর কাজে বিশেষ কারও প্রভাব আছে বলে মনে করি না। তবে একজন মার্কিন শিল্পীর কাজে খানিক অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন (শুলজ)।
ছবি আঁকার ক্ষেত্রে প্রাণির প্রতি তাঁর একটা আকর্ষণ আছে। বিশেষ করে ছাগলকে সাবজেক্ট করেছেন বিভিন্ন সময়। ছাগল এমন এক প্রাণী যে, এক মুহূর্ত স্থির নেই।
ষাটের দশক ও স্বৈরাচারবিরোধী সময়
আমার জন্ম একেবারে গ্রামে। সেখান থেকে ১৯৬২ সালে ঢাকা শহরে আসি। এখানকার ব্যাপার-স্যাপার বুঝতে আমার একটু সময় লেগে যায়। ঢাকা ক্রমশ উত্তাল হয়ে ওঠে রাজনৈতিকভাবে। ওদিকে চারুকলায়ও আন্দোলন চলে। চারুকলাকে কলেজ করা, কোর্সের স্থলে ডিগ্রি চালু করা- সবই আন্দোলনের মাধ্যমে হয়েছে। আর রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্দোলন তো আছেই। পরে এলো স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। রফিকুন নবী আন্দোলন-সংগ্রামে সব দশকেই খুব তৎপর ছিলেন। আমরা তাঁদের সাহায্য করতাম। এটা-সেটা এগিয়ে দিয়েছি।
আরেকজন খুব কাজ করতেন- মুস্তাফা মনোয়ার। ছাত্র ইউনিয়নের ছোট কাগজগুলো হতো। সেখানেও রফিকুন নবী অনেক কাজ করেছেন। মুস্তাফা মনোয়ারও।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় চারুকলার সামনে খুব গণ্ডগোল হতো; প্রায়ই। আমি তখন বঙ্গবন্ধু হলে ছিলাম। দেখেছি কাছে থেকে। আমাদের সময়টা খুব রেস্টলেস ছিল। হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হয়ে যেত। বাসায় শুয়ে আছি, হঠাৎ গুলি। খাটের নিচে গিয়ে লুকোতে হলো। ক্লাস নিচ্ছি, হঠাৎ দেখি কিছু ছেলে এসে সমানে জানালার কাচ ভাঙচুর করছে। তখন আমার ছাত্ররা আমাকে নিরাপদে বের করে নিয়ে যায়। কিছুকাল হলের প্রভোস্ট ছিলাম। তখন দেখেছি। ওই সময়ে আন্দোলন-কর্মকাণ্ডে রফিকুন নবী ব্যস্ত ছিলেন।
মজার দিক, বিশেষ গুণ
রফিকুন নবীর সঙ্গে আমি দেশে, দেশের বাইরে নানান জায়গায় গিয়েছি। ওই সময়ে তাঁকে খুব কাছে থেকে দেখা হয়। রফিকুন নবী একসঙ্গে চার-পাঁচটা ডিম খান। দেখে আমি অবাক। এটা একটা মজার দিক।
তিনি ভালো বক্তা। নানান সভায় গিয়ে কথা বলেন; আমরা শুনে মুগ্ধ হই। তিনি লেখেনও ভালো। বই আছে অনেক। অনেক গুণের সন্নিবেশ তাঁর মধ্যে। এমন কমই দেখি। তিনি সুস্থভাবে বেঁচে আছেন; কাজ করে যাচ্ছেন- খুব ভালো লাগে। আমার চেয়ে বয়সে বেশি বড় না হলেও কিন্তু আমার হৃদয়ে তিনি অনেক বড়। ৭৯ পেরিয়ে তাঁর ৮০-তে পদার্পণে আমরা আনন্দিত। তাঁর কর্মক্ষমতা অটুট থাকুক; আরও দীর্ঘ সময় আমাদের মাঝে বেঁচে থাকুন- এই প্রত্যাশা করি।
রফিকুন নবী আমার দুই কি তিন বছরের বড়। তাঁর প্রতি প্রথম আকর্ষণ তৈরি হওয়ার গল্পটা বলি। অনেক কাল আগের কথা। একবার তিনি আর হাশেম খান মিলে প্রদর্শনী করলেন। চারুকলার গ্যালারিতে। জলরঙের প্রদর্শনী। সেখানে তাঁর একটা ছবি দেখলাম। অনেক ডিটেইল দিয়ে করা একটা নৌকার ছবি। অপূর্ব ছিল ওটা। ততদিনে তাঁর সৃষ্ট টোকাইকে দেখেছি। টেলিভিশন, পত্রপত্রিকায় সবসময় তাঁকে নিয়ে কিছু না কিছু হচ্ছে। কিন্তু আমাকে বেশি আকৃষ্ট করল সেই নৌকার ছবি।
তাঁর ছবিগুলোকে আলাদা করা যায়। একটা ফিগারেটিভ বৈশিষ্ট্য থাকে, যেটা আমাকে ভাস্কর হিসেবে আকৃষ্ট করে। অনেকটা সময় নিয়ে ছবি আঁকেন রফিকুন নবী। বড় ভালো লাগে। তাঁর ছবি আঁকার প্রথম বিকাশটা হয়েছে আমার বিশ্বাস, গ্রিসে গিয়ে।
গ্রিসে পড়তে গিয়ে ছাপচিত্র আর কাঠ খোদাইয়ে বিশেষ দক্ষতা আসে। কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পান। সেই পথে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসে। ক্রমশ ছাপচিত্রে তিনি অনন্য হয়ে ওঠেন। বর্তমানে দেশের সেরা প্রিন্ট মেকারদের তিনি একজন। কাঠে কত বড় বড় কাজ করেন! দেখে অবাক লাগে। ভালো লাগে।
আমাদের সময়ে চারুকলা
আমাদের সময়ে চারুকলায় ঐচ্ছিক বিষয় নেওয়ার সুযোগ ছিল। সেভাবে অনেক শিক্ষকের সংসর্গে আসতাম। যেমন মোহাম্মদ কিবরিয়া স্যারের ক্লাস করতাম আমরা অন্য ডিপার্টমেন্টে গিয়ে। সবার সঙ্গে একটা ভালো বোঝাপড়া তৈরির সুযোগ ছিল। তখন প্রি-ডিগ্রি বলে একটা কোর্স ছিল; দুই বছরের। তারপর এলো তিন বছরের ডিগ্রি। আমরাই প্রথম ডিগ্রি কোর্স করি। এর আগের যাঁরা, তাঁরা সার্টিফিকেট কোর্সের ছাত্র। রফিকুন নবীও তাই।
আমরা যখন চারুকলায় ছিলাম, তখন সবাই ছিলেন। বাসেত স্যার (কাজী আবদুল বাসেত), আমিনুল ইসলাম স্যার, রাজ্জাক স্যার (আবদুর রাজ্জাক), সমরজিৎ স্যার (সমরজিৎ রায়চৌধুরী), কিবরিয়া স্যার (মোহাম্মদ কিবরিয়া)। এর পরের ধারায় এসেছেন রফিকুন নবী, হাশেম খান।
ব্যক্তিত্ব, কাজের ধরন
রফিকুন নবী খুব মিশুক এবং সবার সঙ্গে রসিকতা করেন। কোথাও বেড়াতে গেলে রাতে তাঁর ঘরে ডাকেন; অনেক গল্প করেন। খুব সুন্দর করে গল্প বলতে পারেন রফিকুন নবী। যখন চারুকলায় বা কোথাও তাঁর কাছে বসি, দেখি সারক্ষণ কিছু না কিছু আঁকছেন। তাঁর সৃষ্ট টোকাইয়ের জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, তখনও একইভাবে সারাক্ষণ কলম চালাতেন। জিজ্ঞেস করলে বলতেন, 'দেখ হামিদ, কী করতে হচ্ছে। কী করব বলো? আমাকে প্রতিদিনই পত্রিকায় কিছু না কিছু পাঠাতে হয়।' এখনও তিনি এমন। তবু আমাকে দেখলেই বলেন, 'তুমি তো ওয়ার্কাহোলিক। সারাক্ষণ কাজ করো। তোমার সাথে আমি পারলাম না হামিদ।'
একবার আমি বুলগেরিয়া যাব, তাঁকে বললাম। তিনি বললেন, 'বুলগেরিয়ায় আমার শ্যালক থাকে। তুমি গিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।' সে দেশে আমি তিন মাস ছিলাম। রফিকুন নবীর শ্যালক ভদ্রলোক অত্যন্ত সজ্জন এবং সে দেশের গাইনোকোলজি বিভাগের একজন চিকিৎসক। তিনি আমাকে অশেষ সাহায্য করেছেন।
রফিকুন নবীর বাবার সঙ্গেও আমার ভালো পরিচয় ছিল। তাঁরা পুরান ঢাকায় থাকতেন। বাবার সঙ্গে দেখা হলেই আমাকে বলতেন, 'হামিদ, আমাকে একটু মাটি দাও।' আমি অনেকবার তাঁর জন্য মাটি নিয়ে গেছি। রফিকুন নবীর বাবা ভালো ভাস্কর ছিলেন। ছোট ছোট অনেক ভাস্কর্য বানাতেন। ভালো ছবিও আঁকতেন। রফিকুন নবী খুশি হয়ে আমাকে জানাতেন, তাঁর বাবা কী কী করছেন।
একবার ইন্দোনেশিয়ার বালি গিয়েছি তিনিসহ; গিয়েছি ভুটান। দেশের ভেতর সুন্দরবন, সিলেট অনেক জায়গাতেই গিয়েছি। সবখানে দেখেছি দারুণ সব কাজ সেখানেই তৈরি করে ফেলতেন। জলরঙের কাজগুলো বেশি সুন্দর তাঁর। ইন্দোনেশিয়ায় তো অবকাঠামো সুন্দর; ভুটানেও। রফিকুন নবী আকৃষ্ট হতেন। আঁকতেন। ইন্দোনেশিয়ায় তিনি প্রচুর জলরঙের কাজ করেছেন। সমুদ্র এঁকেছেন। আঁকা ছবির দিকে তাকালে দেখা যায়, বিশেষ কোথাও কোথাও অনেক মনোযোগ দিয়েছেন। ওইটুকু অংশে ডিটেল বেশি। কোথাও আবার ছেড়ে দিয়েছেন। বেশি কাজ করেননি। এভাবে বৈচিত্র্য আসে। ভারসাম্য থাকে। খুব সুন্দর দেখায়। রং করার ক্ষেত্রে তিনি মৌলিক রংগুলো বেশি ব্যবহার করেন। যে কারণে ছবি উজ্জ্বল দেখায়। ভালো লাগে। নীল রঙের প্রতি তাঁর একটা ঝোঁক লক্ষ্য করেছি। প্রুশিয়ান ব্লু, কোবাল্ট ব্লু ব্যবহার করেন ছবিতে। তাঁর কাজে বিশেষ কারও প্রভাব আছে বলে মনে করি না। তবে একজন মার্কিন শিল্পীর কাজে খানিক অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন (শুলজ)।
ছবি আঁকার ক্ষেত্রে প্রাণির প্রতি তাঁর একটা আকর্ষণ আছে। বিশেষ করে ছাগলকে সাবজেক্ট করেছেন বিভিন্ন সময়। ছাগল এমন এক প্রাণী যে, এক মুহূর্ত স্থির নেই।
ষাটের দশক ও স্বৈরাচারবিরোধী সময়
আমার জন্ম একেবারে গ্রামে। সেখান থেকে ১৯৬২ সালে ঢাকা শহরে আসি। এখানকার ব্যাপার-স্যাপার বুঝতে আমার একটু সময় লেগে যায়। ঢাকা ক্রমশ উত্তাল হয়ে ওঠে রাজনৈতিকভাবে। ওদিকে চারুকলায়ও আন্দোলন চলে। চারুকলাকে কলেজ করা, কোর্সের স্থলে ডিগ্রি চালু করা- সবই আন্দোলনের মাধ্যমে হয়েছে। আর রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্দোলন তো আছেই। পরে এলো স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। রফিকুন নবী আন্দোলন-সংগ্রামে সব দশকেই খুব তৎপর ছিলেন। আমরা তাঁদের সাহায্য করতাম। এটা-সেটা এগিয়ে দিয়েছি।
আরেকজন খুব কাজ করতেন- মুস্তাফা মনোয়ার। ছাত্র ইউনিয়নের ছোট কাগজগুলো হতো। সেখানেও রফিকুন নবী অনেক কাজ করেছেন। মুস্তাফা মনোয়ারও।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় চারুকলার সামনে খুব গণ্ডগোল হতো; প্রায়ই। আমি তখন বঙ্গবন্ধু হলে ছিলাম। দেখেছি কাছে থেকে। আমাদের সময়টা খুব রেস্টলেস ছিল। হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হয়ে যেত। বাসায় শুয়ে আছি, হঠাৎ গুলি। খাটের নিচে গিয়ে লুকোতে হলো। ক্লাস নিচ্ছি, হঠাৎ দেখি কিছু ছেলে এসে সমানে জানালার কাচ ভাঙচুর করছে। তখন আমার ছাত্ররা আমাকে নিরাপদে বের করে নিয়ে যায়। কিছুকাল হলের প্রভোস্ট ছিলাম। তখন দেখেছি। ওই সময়ে আন্দোলন-কর্মকাণ্ডে রফিকুন নবী ব্যস্ত ছিলেন।
মজার দিক, বিশেষ গুণ
রফিকুন নবীর সঙ্গে আমি দেশে, দেশের বাইরে নানান জায়গায় গিয়েছি। ওই সময়ে তাঁকে খুব কাছে থেকে দেখা হয়। রফিকুন নবী একসঙ্গে চার-পাঁচটা ডিম খান। দেখে আমি অবাক। এটা একটা মজার দিক।
তিনি ভালো বক্তা। নানান সভায় গিয়ে কথা বলেন; আমরা শুনে মুগ্ধ হই। তিনি লেখেনও ভালো। বই আছে অনেক। অনেক গুণের সন্নিবেশ তাঁর মধ্যে। এমন কমই দেখি। তিনি সুস্থভাবে বেঁচে আছেন; কাজ করে যাচ্ছেন- খুব ভালো লাগে। আমার চেয়ে বয়সে বেশি বড় না হলেও কিন্তু আমার হৃদয়ে তিনি অনেক বড়। ৭৯ পেরিয়ে তাঁর ৮০-তে পদার্পণে আমরা আনন্দিত। তাঁর কর্মক্ষমতা অটুট থাকুক; আরও দীর্ঘ সময় আমাদের মাঝে বেঁচে থাকুন- এই প্রত্যাশা করি।
- বিষয় :
- জন্মদিন
- হামিদুজ্জামান খান
- রফিকুন নবী