গরম জলে স্নান

ইসরাত জাহান
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ | ২২:৫৪
শীতে কুসুম গরম জলে স্নান ভুলিয়ে দেয় ক্লান্তি। শরীরকে করে সতেজ। ব্যস্ততা, কর্মমুখরতার পর জলধারার সান্নিধ্য দেহ ও মনকে করে প্রশান্ত। দিনের শুরুতে হোক কিংবা শেষে, রোজ একবার স্নান করতে হবে। নয়তো জীবাণুর আক্রমণ ও বিভিন্ন কারণে শরীর অসুস্থ হয়ে যাবে। স্নানের সময় বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখলে মোহনীয় আবেশে স্নান করা যায়। যেমন- মোমবাতি, এয়ার ফ্রেশনার ইত্যাদি কাছে রাখতে হবে। এতে মোহনীয় আবেশ বজায় থাকবে।
শোভন'স মেকওভারের রূপবিশেষজ্ঞ শোভন সাহা বলেন, 'বাথরুমে খুব ভালো এয়ার ফ্রেশনার রাখতে হবে। ব্যাটারি দেওয়া মোমবাতি রাখতে পারেন। কিছু ইনডোর প্লান্ট, অ্যারোমা স্টিক রাখলে খুব ভালো হবে। বাথরুম খুব পরিচ্ছন্ন ও শুস্ক রাখতে হবে সব সময়।' তিনি আরও বলেন, 'গরম পানি দিয়ে গোসল করলে রক্ত চলাচল ভালো হবে। শরীরে ব্যথা বা বাত রোগ থাকলে খুব আরাম দেবে, কিন্তু এই পানি কুসুম গরম হতে হবে।'
কখন স্নান করবেন
স্নান মূলত সকালে করাই ভালো। যেহেতু গরমের সময় খুব বেশি গরম পড়ে, তাই চাইলে আপনি এই সময়টাতে প্রতিদিন দু-তিনবার স্নান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রতিবার কুসুম গরম জলে স্নান করার দরকার নেই। সকালে, দুপুরে খাবার আগে আর সারাদিনের কাজের শেষে বা রাতে ঘুমের আগে স্নান করতে পারেন। তবে শীতের সময় শুধু সকালে স্নান করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। খাবারের পরপর স্নান করা ঠিক নয়। খাওয়াদাওয়ার অন্তত তিন-চার ঘণ্টা পর স্নান করুন। ব্যায়ামের পর স্নান করতে চাইলেও ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ঘাম শুকিয়ে নিন। ঘেমে থাকা অবস্থায় স্নান করা ঠিক নয়। এতে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।
পরিচ্ছন্নতায় প্রাকৃতিক উপাদান
সাবানের তুলনায় প্রাকৃতিক স্ট্ক্রাব ত্বকে নিয়ে আসে উজ্জ্বলতা, সজীবতা। ত্বককে করে তোলে মোহনীয়। প্রথমে সমপরিমাণ দই, বেসন, মসুর ডাল ও চালের গুঁড়া মিশিয়ে শরীরে মালিশ করতে হবে। এর পর দুই থেকে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে ভালোভাবে ত্বক পরিস্কার করে ফেলুন। এ ছাড়া পুরো শরীর এবং মাথার ত্বকে মুলতানি মাটি মালিশ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন।
গরম জলে স্নানের উপকারিতা
কুসুম গরম জল ত্বকের জন্য উপকারী। সুস্থ থাকতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম। অনেকেই অনিদ্রার সমস্যায় ভোগেন। তাদের জন্য খুবই উপকারী এই গরম জলে স্নান। বিশেষজ্ঞরা বলেন, গরম জলে স্নান ভালো ঘুমের জন্য উপকারী। এতে শরীর প্রশান্ত ও নির্ভার হয়। পেশিগুলোও আরাম পায়। এর ফলে ঘুম চলে আসে। নিয়মিত গরম জলে স্নান রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক রাখার পাশাপাশি ক্যালরি কমাতেও সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে নিয়মিত গরম জলে স্নান। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হূৎপিণ্ডকে সচল রাখতে সাহায্য করে এই গরম জল।
এ ছাড়া শরীরে রক্ত সঞ্চালন সঠিক রাখতে সাহায্য করে গরম জলের স্নান। রক্ত সঞ্চালন সঠিক থাকলে শরীরে এনার্জিও পরিপূর্ণ থাকে। অনেকের পেশিতে টানের সমস্যা রয়েছে। হঠাৎ করেই পেশিতে টান লেগে খুব ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পেশিগুলো সচল রাখতে সাহায্য করে গরম জলে স্নান। কাঁধ, পিঠ, ঘাড়ে ম্যাসাজের মতো কাজ করে গরম জল। গরম জল ত্বক থেকে যাবতীয় দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। মাথাব্যথা- এটা যেন অনেকেরই নৈমিত্তিক ব্যাপার। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালন সঠিক না হলেই মাথা যন্ত্রণার সমস্যা দেখা দেয়। মাথা যন্ত্রণার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে গরম জলের স্নান। এ ছাড়া স্ট্রেস, উদ্বেগের মতো সমস্যাও প্রতিরোধ করে গরম জল।
অপকারিতা
শীতকালে অনেকেই যেহেতু গরম জল ব্যবহার করেন, তাই অনেক সময় অসাবধানতাবশত শরীর পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। যা খুবই দুঃখজনক। এ কথা খুবই প্রচলিত, মাথায় গরম জল দিতে নেই। এতে অনেকের মাথার ত্বক গরম হয়ে যায় এবং মাথায় যন্ত্রণা দেখা দেয়। পাশাপাশি চুল পড়ে। চুলে খুশকি সমস্যাও দেখা দেয়। প্রচণ্ড ঠান্ডায় গরম পানি দিয়ে গোসল করলে হঠাৎ করে হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, এমনটা করলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও বাড়ে। তাই যাঁদের হার্টের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা গরম জল এড়িয়ে চলুন। রোজ বেশি গরম পানি দিয়ে স্নান করলে ত্বকের আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। ত্বক রুক্ষ হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ত্বকের সৌন্দর্য হ্রাস পেতে থাকে। গরম জলে গোসলের পরে ব্রণ ও এসিডিটি সমস্যা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, ছেলেদের ক্ষেত্রে ফার্টিলিটি ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
বাথটাবে স্নান
যদি আরাম-আয়েশে গোসল করতে চান তাহলে বেছে নিতে পারেন বাথটাব। এ ক্ষেত্রে আপনি চাইলে পরিবেশটা মোহনীয় করে রাখতে পারেন। বাথটাব নির্বাচনের আগে নজর দিতে আপনার বাথরুমের টাইলসে। এখানে আপনি ব্যবহার করতে পারেন নজরকাড়া বিভিন্ন ডিজাইনের টাইলস। চাইলে নুড়িপাথরও ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার বাথটাবের নকশায় নতুনত্ব নিয়ে আসবে। বাথটাবের পাশে কিছু ইনডোর প্লান্ট রাখতে পারেন। এটি আপনাকে দেবে সতেজ ভাব। বাথটাবের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেবে মোমবাতি। সারাদিনের বিভিন্ন কাজ শেষে যখন বাথটাবের পাশে মোমবাতির আলোয় স্নান করবেন, আপনার মন প্রফুল্ল থাকবে।
মডেল :পুষ্প; ছবি :ফাহিম