১৯৭১ মুক্তিযোদ্ধার চিঠি

মুক্তিযোদ্ধার চিঠি সংগ্রহ : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
কিছু আলো নীল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২ | ২২:০৯
মুক্তিযুদ্ধের এক প্রামাণ্য চিহ্ন প্রকাশ পায় ওই সময়ে লেখা চিঠিপত্রের মাধ্যমে। ১৯৭১-এর উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক, সাহস ও বীরত্বের প্রকাশ মুক্তিযোদ্ধাদের লেখার ছত্রে ছত্রে। চার মুক্তিযোদ্ধার চিঠিতে দেশমাতৃকার জন্য অনিঃশেষ মমতা, সর্বোচ্চ ব্যাকুলতা ও চূড়ান্ত আত্মত্যাগের প্রস্তুতি ফুটে উঠেছে...
আব্বাজান,
প্রথমে আমার সালাম জানাইব। আশা করি, খোদার ফজলে ভালোই আছেন। কামালের সঙ্গে আমার দেখা হইয়াছে। তাহার বাসা হইতে যেন কাপড়চোপড় পাঠাইয়া দেয়। আব্বা, আপনি বাবুর আব্বা ছালাম খান সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখিবেন। আর সুলতান দাদাকে দিয়া নুরুল আমিন সাহেবকে ধরেন। আপনারা আমার জন্য কোনো রকম চিন্তা করিবেন না। এখন পর্যন্ত আপনাদের কোনো সংবাদ না পাইয়া চিন্তিত আছি। যদি পারেন তবে আমার সঙ্গে দেখা করিতে পারেন। আমার জন্য কাউকে টাকা দিবেন না। যদি পারেন নিজেরা কিনে জেল গেটে জমা দিয়া দিবেন। আপনি আম্মাকে সান্ত্বনা দিয়া রাখিবেন। আম্মাকে আমার সালাম ও দোয়া করিতে বলিবেন। এরশাদ ভাই ও মামাদের আমার সালাম জানাইবেন ও দোয়া করিতে বলিবেন।
ইতি
কবির
চিঠির লেখক :মুক্তিযোদ্ধা কবির
নোয়াখালী
প্রাণপ্রিয় বঙ্গবন্ধু,
আপনার প্রতি আমার আন্তরিক ভালোবাসা। আমার সংসারে আমার বলিতে একমাত্র মেয়ে। সে কলেজের ছাত্রী ছিল। তাহাকে দিয়া আমার আশা-ভরসা ছিল। স্বাধীনতার প্রাক্কালে বর্বর পাক সৈনিকরা এবং এই দেশের দালাল রাজাকার আমার সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা শেষ করিয়া দেয়। বিগত ৭১ সালের ১৩ই ডিসেম্বর দেশীয় রাজাকারদের সঙ্গে লইয়া পাক বাহিনী আমাদের এলাকা ঘেরাও দেয়। যথেচ্ছ লুটতরাজ ও বাড়ি-বাড়িতে যুবকদের নির্বিচারে হত্যা করে। সেই সময় আমার একমাত্র মেয়েকে তাহারা ধরিয়া লইয়া আমরা ফেরত পাই না।
১৬ তারিখে স্বাধীনতার পর ১৭ তারিখে সে বাসায় ফিরিয়া আসে। কিন্তু মান-ইজ্জত সমস্তই বিসর্জন দিয়া। এখন সে বীড়াঙ্গনা। আমি এই বীড়াঙ্গনা মেয়েকে নিয়া খুব অসুবিধায় আছি। শুনিতে পাইলাম এই দেশের ২০,০০০ নির্যাতিত ও অগণিত বীড়াঙ্গনা মহিলার পুনর্বাসনের জন্য আপনি আলাদা দপ্তর খুলিয়াছেন। আমার এই বীড়াঙ্গনা মেয়ের একটা বিহিত করিবেন, এই আশা নিয়েই লিখনী শেষ করিলাম।
বঙ্গবন্ধুকে লেখা এক নির্যাতিত নারীর বাবার চিঠি
কামরুল ভাই,
আমাদের যে সমস্ত Painter রা এখান থেকে এসেছেন, তাদের সবার নাম-ঠিকানা কি আপনার কাছে আছে?
সবার নাম এবং ঠিকানাগুলো অবিলম্বে দরকার। Painter দের সবার জন্যে কিছু টাকা-পয়সার আয়োজন হচ্ছে। তাদের সবার সঙ্গে অবিলম্বে আমার একটু যোগাযোগ হওয়া দরকার। আমি একমাত্র আপনার আর মোস্তফা মনোয়ার ছাড়া আর কারও ঠিকানা জানি না। সবার নাম এবং ঠিকানা আপনার কাছে থাকতে পারে, তাই লিখলাম।
আমি দু'এক দিনের মধ্যে আপনার সঙ্গে দেখা করবো। কমার্শিয়াল পেইন্টাররা যদি কেউ এসে থাকে তাদেরও নাম-ঠিকানা দরকার।
জহির রায়হান
চিঠির লেখক :শহীদ জহির রায়হান চলচ্চিত্রকার ও কথাশিল্পী
প্রাপক :চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান
আম্মা, ১-১১-৭১
সালাম নিবেন। আমরা জেলে আছি। জানি না কবে ছুটবো। ভয় করবেন না। আমাদের ওপর তারা অকর্ত্য অত্যাচার করেছে। দোয়া করবেন। আমাদের জেলে অনেক দিন থাকতে হবে। ঈদ মোবারক।
কামাল
চিঠির লেখক :মোস্তফা আনোয়ার কামাল প্রাপক :মা, আনোয়ারা বেগম
- বিষয় :
- মুক্তিযোদ্ধার চিঠি
- মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর