নিবন্ধ
সিমন দ্যু ব্যুঁভোয়া: সাদা-কালো ধূসরে খোদাই

সিমন দ্যু ব্যুঁভোয়া [১৯০৮-১৯৯৬]
অদিতি ফাল্গুনী
প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০
লেখক ও দার্শনিক সিমোন দ্য বোভোয়া (১৯০৮-১৯৯৬) আজকের নারীবাদী চিন্তাভাবনার প্রধান মুখপাত্র বলে সর্বসাধারণ্যে মনে করা হয়।
জাঁ পল সার্ত্রের সঙ্গিনী সিমোন সার্ত্রের সাথে মিলে এক ‘লেখক জুটি’ গড়ে তুলে তাঁদের সমকালীন প্যারিসের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন এবং সিমোনের জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ ‘লা দোজিয়েম সেক্স’ বা ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’ গ্রন্থটি একই সঙ্গে নারীবাদী এবং অস্তিত্ববাদী চিন্তার সম্মিলনের জন্য সারা বিশ্বে আজও বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়ে থাকে। আজও বহির্বিশ্বে সবচেয়ে অনূদিত ফরাসি লেখকদের ভেতর তিনি অন্যতম। ‘লেইজ ম্যান্ডারিনস’ উপন্যাসের জন্য তিনি ‘গঙ্কো’ (Grandcourt) পুরস্কারে ভূষিত হন।
শৈশব যেন ‘বিলুপ্ত স্বর্গ’
১৯০৮ সালের ৯ জানুয়ারি লুসি আর্নেস্ট মেরি বার্ট্রান্ড দ্য বোভোয়া নামে নারীবাদী ভাবনার এই ভুবনজয়ী চিন্তাবিদের জন্ম। তিনিই পরে বিশ্বজুড়ে তুলনামূলক সংক্ষিপ্ততর ‘সিমোন দ্য বোভোয়া’ নামে পরিচিত হবেন। তিনি জন্মেছিলেন প্যারিস শহরের ব্যুলভাঁ দ্যু মোঁতাপাসের (boulevard de Montparnasse) ‘আখরোট কাঠের নির্মিত সাদা নানা আসবাব ভরা এক কক্ষে’ (এক ধোপদুরস্ত তরুণীর স্মৃতি– Mémoire dÕune jeune fille rangée)। তাঁর বাবা জর্জেস দ্য বোভোয়া পেশায় ছিলেন একজন আইনবিদ (জন্ম: ১৮৭৮) ও তাঁর মা ফ্রাঁসোয়া ছিলেন মফস্বলের এক তরুণী। দু’জনের পারিবারিকভাবে দেখেশুনে বিয়ে হয় এবং সিমোন ছিলেন এই বিয়ের সন্তান।
জীবনের প্রথম বছরগুলো সিমোন দ্য বোভোয়ারের অশেষ আনন্দে কেটেছে যেহেতু নিজ স্মৃতিকথায় শৈশবকে ‘হারানো স্বর্গ‘ বলে অভিহিত করেছেন। শৈশব থেকেই সিমোন ছিলেন স্বাধীনচেতা। ‘এক ধোপদুরস্ত তরুণীর স্মৃতিকথা’ (Mémoire dÕune jeune fille rangée)-য় সিমোন স্মরণ করছেন যে মাত্র চার বছর বয়সেই তিনি পড়তে শেখেন। পাঁচ বছর বয়সে ক্যাথলিক বালিকাদের জন্য পরিচালিত একটি স্কুলে ভর্তি হন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বোভোয়া ‘মার্গারিতের যত দুর্ভাগ্য (Les Malheurs de Marguerite)’ নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন, তবে সেটা অপ্রকাশিতই থাকে।
প্রথম মহাযুদ্ধের বছরগুলোয় সিমোন
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সিমোনের পরিবারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষার ভিত নড়ে উঠলে কিশোরী সিমোনের জীবনও প্রথম বহিঃপৃথিবীর সাথে ধাক্কা খেলো। তাঁর বাবাকে আফ্রিকায় ফরাসি সেনাবাহিনীর পদাতিক বিভাগে যোগ দিতে হলো। যে ‘ক্যাথলিক বালিকা বিদ্যালয়’-এ তিনি পড়তেন, সেটা একটি ঝটিতি হাসপাতালে বদলে গেল এবং বালিকাদের ওপর কঠোর ক্যাথলিক শিক্ষা এর নতুন পরিচালক তথা এক আয়কর সংগ্রাহকের নির্দেশে য়ে উঠল আরও কঠোর। যুদ্ধ ফ্রন্টে সহসা হার্ট অ্যাটাকের পর তাঁর পিতাকে প্রত্যক্ষ রণাঙ্গন থেকে পাঠানো হয় ‘সমর মন্ত্রণালয়ে’ তবে তাঁর বেতন অনেক কমে যায় এবং যা পান তা-ও তিনি উড়িয়ে দিতে থাকেন। নতুন করে আইন ফার্ম চালানোর চেষ্টার বদলে সামান্য বেতন তিনি উড়িয়ে দিতে থাকেন বাসা থেকে বহু দূরের নানা ক্যাফেতে এবং গণিকাদের পেছনে। খুবই অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া সিমোনের মা ‘কিছুতেই আর বিস্মিত হতেন না।’ জীবনের এসব অভিঘাতই বিয়ে ও মাতৃত্বের নামে নারীর কাঁধে চাপানো জোয়াল সম্পর্কে সিমোনকে প্রথম প্রশ্ন করতে শেখায়। পাশাপাশি, পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় বাড়ির মেয়েদেরও বাইরে কাজ করায় আর বাধা থাকে না আর এটাই সিমোনকে জানাল মুক্তির নব আস্বাদন। এ ছাড়া শৈশব থেকেই পাঠানুরাগী সিমোন ১৫ বছর বয়সেই লেখক হবার শপথ নিয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ ও সার্ত্রের সাথে যুগলবন্দি : সময়ের নিরিখে অনন্য
১৯২৮ সালে প্যারিসের সোরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সাহিত্য অনুষদে (Les Malheurs de Marguerite)’ পড়ার সময় সার্ত্রের সাথে প্রথম পরিচয় হয়। প্রেমময়, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বৌদ্ধিক যে সম্পর্ক দু’জনের ভেতর প্রতিষ্ঠিত হলো, তা টিকে থাকল আর ১৯৮০ সালে সার্ত্রের মৃত্যু অবধি। যদিও তাঁরা দু’জন কখনোই বিয়ে করেননি, তবে ১৯২৯ সালে সার্ত্রে তাঁকে প্রস্তাব দেন যেন পড়াশোনা শেষ করার পর দু’জনেই একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন। সিমোন রাজি হননি এবং এই কথা পরবর্তী সময়ে তিনি তাঁর আত্মজীবনের দ্বিতীয় খণ্ড ‘যুগের শক্তি (La Force de l’âge)’-তে স্মরণ করবেন। ‘যুগের শক্তি’ তিনি লিখেছিলেন ১৯৬০ সালে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোভোয়া : প্রতিরোধী, বিরোধী অথবা সহযোগী?
১৯৪০ সালের মে নাগাদ হিটলারের নাজি জার্মান বাহিনী নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ ও ফ্রান্স দখল করে। সে বছরই জুনের ২২ তারিখে ফ্রান্স নাজি বাহিনীর কাছে পরাজয় মেনে নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৪৪ সাল অবধি ফ্রান্স ছিল জার্মানি কর্তৃক উত্তর ও পশ্চিম অবধি দখলীকৃত ও দক্ষিণ-পূর্বে ইতালি কর্তৃক অধিকৃত এলাকা। তবে অক্ষশক্তির সাহায্যেই লোকদেখানো একটি ‘মুক্তাঞ্চল’ গঠিত হয়েছিল যার ক্ষমতায় ছিলেন মার্শাল ফিলিপ পেতাইন এবং পিয়ের লাভাল। এদের সরকারকে ‘ভিচি শাসনামল’ বলা হতো। সিমোন ও সার্ত্র দু’জনেই ভিচি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধা ছিলেন।
তবে সাম্প্রতিক সময়ের কিছু গবেষণায় সার্ত্রে ও সিমোনের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন ভূমিকা নিয়ে কিছু বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এ অধ্যাপক ইনগ্রিড গ্যালস্টের এবং ডিয়ান জনসনসহ অনেকেই হালে বলছেন যে হাতে অস্ত্র তুলে না নিলেও সিমোন ও সার্ত্রে ভিচি সরকারের বিরোধী ছিলেন এবং ১৯৪১ সালে তাঁরা দু’জন ‘সমাজতন্ত্র এবং মুক্তি (Socialisme et liberté)’ নামে বুদ্ধিজীবীদের একটি স্বল্পায়ু গোষ্ঠী গড়ে তোলেন। কিন্তু দার্শনিক মিশেল অঁফ্রে মনে করেন যে সিমোন ভিচি সরকারের পক্ষে ছিলেন: যেমন, তিনি রেডিও ভিচির মিউজিক হলে কলামিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ইতালিতে মুসোলিনি সরকারের দেওয়া টিকিটে (মূল্য পরিশোধ না করেই) তিনি ও সার্ত্রে কিছুদিনের জন্য ঘুরতে গিয়েছিলেন। টিকিটের দাম দিয়েছিল মুসোলিনি সরকার।
তাঁর যেসব রচনা ও ভাবনা সবাইকে ধাক্কা দিয়েছে
১৯৪৩ সালে সিমোন তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নিমন্ত্রিত’ প্রকাশ করেন। কল্পিত কিছু চরিত্রের মাধ্যমে মূলত এই উপন্যাসে সার্ত্রে, কোসাকিউইটজ এবং সিমোনের ভেতরকার সম্পর্কই এখানে ব্যক্ত হয়েছে। যদিও উপন্যাসটি প্রকাশের সাথে সাথে বিপুল সাফল্য পায়, ফ্রান্সের ‘জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়’ তাঁর উপন্যাস বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি এক ‘নাবালককে ব্যভিচারে প্ররোচিত করা’র অভিযোগে তাঁর চাকরি যায়। যদিও ১৯৪৫ সালে নাজি অবরোধ থেকে ফ্রান্স মুক্ত হলে সিমোন তাঁর চাকরি ফিরে পান, তবে তিনি আর কখনও শিক্ষকতা করেননি।
‘মেয়ে হয়ে কেউ জন্মায় না, তবে সে মেয়ে হয়ে ওঠে’
১৯৪৯ সালে সিমোন প্রকাশ করেন দুই খণ্ডে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লা দোজিয়েম সেক্স’ বা ‘দ্য সেকেন্ড সেক্স’। এই বইটিকে ব্যক্তি সিমোনের চিন্তা ও দর্শনের পাশাপাশি সারা পৃথিবীর নারীবাদী তত্ত্ব ও অনুশীলনের ভিত্তি হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। এই রচনায় তিনি সহস্রাব্দ ধরে পুরুষের প্রত্যাশার ছাঁচে গড়া নারীত্বের পুরাণ বিনির্মাণ করেন। তাঁর মতে, ‘নারীত্ব’ না মেয়েদের প্রকৃতি না এর সারমর্ম, বরং ‘নারীত্ব’ হচ্ছে ইতিহাস ও সমাজ আরোপিত একটি শর্ত। নারীকে ‘বস্তা’ হিসেবে গড়ে তোলা যাবতীয় কুসংস্কার এবং সমাজের প্রচলিত ছাঁচকে তিনি চ্যালেঞ্জ করেন। পাশাপাশি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষদের সব সময়ই ‘কর্তা’ ও ‘পরম সত্তা’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বইয়ে বিয়েকে তিনি বুর্জোয়া একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করেছেন; যা প্রায় পতিতাবৃত্তির মতোই ভয়ানক, যেহেতু নারী বা স্ত্রীকে সব সময়ই তাঁর স্বামীর আধিপত্য মেনে নিতে হয়। সেই সময়ে যখন কিনা গর্ভপাতকে ‘নরহত্যা’ এবং প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হতো, তিনি গর্ভপাতকে ‘অপরাধ’ মনে করেননি। বইটি শুরুতেই প্রচণ্ড সাফল্যের মুখ দ্যাখে– প্রকাশনার পর প্রথম সপ্তাহেই ২২,০০০ কপি বিক্রি হয়। ব্লখের মতো বুদ্ধিজীবীরা কেউ কেউ প্রশংসা করলেও আর্মান্ড হুগের মতো অনেক লেখক-বুদ্ধিজীবীও বইটির বিরুদ্ধে সে সময়ে ধিক্কারে ফেটে পড়েন। ভ্যাটিক্যান বইটি নিষিদ্ধ করার তালিকায় ওঠায়।
১৯৬৪ সালে সিমোন একটি সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনীমূলক গল্প লেখেন। গল্পটির নাম ছিল ‘খুব মিষ্টি এক মৃত্যু (Une mort très douce)’ যেখানে সিমোন তাঁর মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের সাথে কাটানো শেষ মূহুর্তগুলোর বর্ণনা করেন। এই গল্পে তিনি ইউথ্যানাসিয়া বা স্বেচ্ছামৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন। এ ছাড়া মৃত্যুকে তাঁর ‘নিরীশ্বরবাদী’ বা নাস্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ও তাঁর ধর্মপ্রাণ মায়ের চোখে ‘মৃত্যু’ কীভাবে প্রতিভাস হয়েছিল, সেটাও তিনি আলোচনা করেন।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা
১৯৪৫ সালে সার্ত্রে, রেমন্ড আরন এবং আরও কিছু বন্ধু ও সহযোগীর সাথে মিলে সিমোন প্রকাশ করেন ‘আধুনিক সময় (Les Temps Modernes)’ নামে এক সাহিত্য জার্নাল ও জার্নালের সূত্র ধরে লেখক গোষ্ঠী গড়ে তোলেন। ‘আধুনিক সময় (Les Temps Modernes)’ কিন্তু আজও সক্রিয়। আলজেরিয়ার প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় (১৯৫৪-১৯৬২), সিমোন সংঘর্ষে অত্যাচারিত নারীদের পক্ষে স্বীকৃতি আদায়ে প্রভাব বিস্তার করেন। ফ্রাঙ্কো-তিউনিসীয় নারীবাদী অ্যাক্টিভিস্ট জিসেল হালিমির সাথে মিলে ১৯৭১ সালে সিমোন প্রতিষ্ঠা করেন ‘বেছে নাও (Choisir)’ নারীবাদী গোষ্ঠী যারা ফ্রান্সে গর্ভপাতকে আইনগত অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দানের জন্য আন্দোলন করেন। একই বছরে সিমোন রচনা করেন ‘৩৪৩ জনের সাক্ষ্য (the Manifeste des 343)’ নামে ৩৪৩ জনের স্বাক্ষরিত এক আবেদনপত্র যাদের সাহস হয়েছিল ‘আমার একটি অ্যাবরশন হয়েছে’ বা ‘আমি একবার গর্ভপাত করেছি’ নামে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করার। এই আবেদনপত্রের শুরুতেই বলা হয়:
‘ফ্রান্সে প্রতি বছর দশ লাখ নারী গর্ভপাত করায়। বিষয়টি ঘিরে গোপনীয়তার কারণে তারা গর্ভপাত করায় অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিবেশে যদিও ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়াটি খুবই সাধারণ। এই লাখ লাখ নারী সম্পর্কে আমরা নিশ্চুপ থাকি। আমি ঘোষণা করছি যে আমি এই নারীদের একজন। আমি ঘোষণা করছি যে আমি গর্ভপাত করেছি। ঠিক যেমন আমরা গর্ভনিরোধকের দাবি তুলি, আজ আমরা গর্ভপাতকে অপরাধমুক্ত করে সবার জন্য আইনসম্মত করার দাবি তুলছি।’ এই ঘোষণাপত্র ১৯৭৩ সালে আর একটি ঘোষণাপত্রের জন্ম দেয় যেখানে ৩৩১ জন ফরাসি ডাক্তার নিজেদের ‘গর্ভপাতের সপক্ষে’ বলে ঘোষণা করেন। অবশেষে ১৯৭৫ সালে একটি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ফ্রান্সে গর্ভপাতকে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়া হয়। হালে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত নিষিদ্ধ হওয়া বা বাঙালি কবির ‘মেয়েরা শেফালীর ঝুড়িতে আগুন চেপে ঘুরে বেড়ায়/অথচ ওরা মা হতে পারত (আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ)’ জাতীয় ভাবালু পঙ্ক্তির উল্টোদিকে সিমোন গর্ভপাতকে দেখেছেন মেয়েদের স্বাস্থ্যগত অধিকারের বিষয় হিসেবে। দাঙ্গা, যুদ্ধ, ধর্ষণসহ নানা বিপদে-দুর্বিপাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধেও কত নারীকে গর্ভবতী হতে হয়। তাঁদের তবে কি প্রতিকার?
আজও অস্তিত্ববাদী দার্শনিক ও নারীবাদী তাত্ত্বিক এবং অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে বোভোয়াকে বিবেচনা করা হয়। নারী ও পুরুষ সম্পর্কে তাঁর নতুনভাবে দেখার ক্ষমতা, সার্ত্রের সাথে বিয়েবহির্ভূত যৌথ জীবনযাপনের সাহস আজকের অনেক নারীও করেন না। ১৯৮৬ সালে তাঁর শেষকৃত্যের সময় তাই দার্শনিক ও নারীবাদী এলিজাবেথ ব্যাডিন্টার বলেছিলেন, ‘মেয়েরা– তাঁর কাছেই তোমাদের আজকের সবকিছুর পেছনেই তিনি আছেন।’
সিমোনের স্মরণে
সিমোনের স্মরণেই ২০০৮ সালে ফ্রান্স সরকার ‘সিমোন দ্য বোভোয়া পদক (Le Prix Simone de Beauvoir)’ চালু করে। শৈল্পিক নানা কাজের মাধ্যমে পৃথিবীজুড়ে মেয়েদের স্বাধীনতার লক্ষ্যে যারা কাজ করেন, তাঁদের সম্মানিত করতেই এই পুরস্কার চালু করা হয়।
তথ্যসূত্র : ফরাসি সাহিত্যপত্রিকা SP Edicoes
- বিষয় :
- নিবন্ধ
- অদিতি ফাল্গুনী