ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সবজি চাষে স্বাবলম্বী ১০ নারী কৃষক

সবজি চাষে স্বাবলম্বী  ১০ নারী কৃষক

মাঠে কাজ করছেন নারী কৃষকরা

মোশারফ হোসেন মিন্টু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০

কলাপাড়া উপজেলার চম্পাপুর ইউনিয়নের মাছুয়াখালী গ্রামের ১০ নারী কৃষক সংঘটিত হয়ে যৌথভাবে ১২০ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তাঁরা নিজেরাই চাষবাদ, বীজ রোপণ, জমিতে সেচ দেওয়ার কাজ করছেন। এ নারী কৃষকরা সবজি চাষের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করেন। সেই সঙ্গে তরমুজ চাষে সফলতা তাঁদের পরিবারে সচ্ছলতা এনেছে।

গত দুই মাস আগে একশনএইড বাংলাদেশ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আভাস-এর সহযোগিতায় ১০ নারী কৃষক মিলে গঠন করেছেন কদম রিফ্লেকশন অ্যাকশন দল। তাহমিনা বেগম সেই দলের সভাপতি। কদম রিফ্লেকশন অ্যাকশন দলের সদস্যরা উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে জৈব কম্পোস্ট ও কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

মাছুয়াখালী গ্রামের কদম রিফ্লেকশন অ্যাকশন দলের সভাপতি তাহমিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের দলের সব সদস্যের আগে থেকেই নিজ বাড়িতে কৃষিকাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা বারো মাসই কোনো না কোনো সবজি চাষ করি। বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করে প্রায় ২২ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। গত বছর ধান তোলার পর নিজেদের তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। এতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এ বছরও তরমুজ চাষ করছি।’

এ দলের আরেক নারী কৃষক সুবর্ণা রানী বলেন, ‘বাড়িতে কৃষিকাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। সেই পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা সবাই মিলে তরমুজ চাষ করছি। তবে কৃষিকাজে সহায়ক যন্ত্রপাতি না থাকায় ভাড়া এনে ব্যবহার করায় উৎপাদন খরচ বেশি হয়।’ পপি রানী বলেন, ‘এবার আমরা দলবদ্ধ হয়ে তরমুজ চাষ শুরু করেছি। ভালো ফলন পেলে আগামীতে আরও বেশি জমি নিয়ে চাষাবাদ করতে চাই।’ রোকসানা বেগম বলেন, ‘আমি বাড়িতে সবজি চাষ করি। এবার বাড়তি আয়ের জন্য যৌথভাবে তরমুজ চাষে নেমেছি।’ শিপ্রা রানী  বলেন, ‘বাড়ির কাজকর্ম শেষ করে প্রতিদিন আমরা সবাই মিলে তরমুজ ক্ষেতে গিয়ে চারায় পানি দেওয়া, মাটি নেড়ে দিই। কেউ কাজে না আসতে পারলে তাঁর কাজও আমরা সবাই মিলে করি। এতে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। কৃষিকাজের সহায়ক যন্ত্রপাতি ও সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা পেলে ব্যাপক হারে কৃষিকাজ করার ইচ্ছা রয়েছে আমাদের।’

কদম রিফ্লেকশন অ্যাকশন দলের সদস্যরা বলেন, ‘আমরা সবাই বন্ধুর মতো থেকে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছি। আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই যে আমরাও পারি। আমাদের দেখে অন্য নারীরা যেন উৎসাহিত হয়ে কৃষিকাজ করেন।’

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আভাস অফিস সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়া উপজেলায় ৫০০ জন নারী কৃষক বাছাই করেছে তারা। তিন ইউনিয়েনে ২০টি নারী কৃষক সংগঠন করা হয়। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে জৈব কম্পোস্ট ও কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরির উপকরণ দেওয়া হয়েছে। প্রদর্শনী প্লটের জন্য ১২০ শতাংশ জমি লিজ নিতে ৩০ হাজার টাকা ও বীজ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। নারী কৃষক যাতে সহজেই কৃষিপণ্য বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারেন, সে জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে দোকানঘর করে দেওয়ার কাজ চলমান। সেই সঙ্গে কৃষিবীজের জন্য যাতে বাজারে যেতে না হয়, সে জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে বীজ ব্যাংক গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে আমাদের এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ। বেশিরভাগ সময় উৎপাদিত ফসল বাড়িতে কম দামে বিক্রি করেন তাঁরা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে নিয়মিত বাজারে ফসল বিক্রি করে আরও লাভবান হতে পারতেন বলে জানালেন তাহমিনা। 

আরও পড়ুন

×