ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

আচার দিয়ে মন জয়

আচার দিয়ে মন জয়

এম আতিকুল ইসলাম বুলবুল

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০

লাকী ভৌমিকের জীবনের শুরুটা সহজ-সরল ছিল না। বাবার সঙ্গে কখনও কথা বলতে পারেননি তাঁরা– তিন বোন সাথী, লাকী ও লাবনী ভৌমিক । নেই বাবার কাছে কোনো বায়না ধরার মতো জীবনের নিগূঢ় কোনো গল্প। ইশারায় বোঝাতে ও বুঝতে হয় তাঁদের বাবা-মেয়ের আদর, স্নেহ ও ভালোবাসার বিষয়গুলো। কেননা বাবা মহাদেব চন্দ্র ভৌমিক জন্মগত বাক–প্রতিবন্ধী। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের আর্থিক অসংগতিও কষ্ট দিয়েছে তাঁদের। যে কারণে পড়াশোনা শেষ করার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় লাকীকে। তবে তিনি দমে যাননি। বিয়ের পরও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। নিজ প্রচেষ্টায় হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। স্বপ্ন দেখেন আচার তৈরির প্রতিষ্ঠান গড়ার।

বর্তমানে লাকী স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করছেন। তাঁর স্বামী অনুপ কুমার দাস ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। সংসার করতে গিয়ে লাকী লক্ষ্য করেন, স্বামীর বেতনের টাকায় ঢাকায় ভাড়া বাসায় থেকে চলতে গিয়ে হাতে আর কিছুই থাকে না। তখন লাকী কিছু একটা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এ নিয়ে কথা বলেন অনুপের সঙ্গে। তাঁরা স্থির করেন অনলাইন পেজ খুলে আচারের ব্যবসা শুরু করবেন। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে অনলাইনে ‘দেশি পণ্যের স্বাদ’ নামের একটি পেজ খুলে আচারের বর্ণনা দিয়ে প্রচার চালাতে থাকেন। এ সময় অল্প অল্প করে আচারের অর্ডার পেতে থাকেন তাঁরা এবং ঢাকার ভাড়া বাসায় আচার তৈরি করতে থাকেন স্বামী-স্ত্রী মিলে। প্রথম মাসেই তাঁদের আচার বিক্রি থেকে আয় হয় প্রায় দশ হাজার টাকা। ফলে উৎসাহিত হতে থাকেন লাকী। লাকীর এসব কাজে গভীর রাত পর্যন্ত স্বামী অনুপ দাসও সাহায্য করেন।

লাকী প্রতি কেজি আমের আচার ৬০০ টাকা, আমসত্ত্ব ৮০০ টাকা, চালতার আচার ৫৫০, জলপাই ৫৫০ টাকা, বড়ই ৫৫০ টাকা, রসুন ৭০০ টাকা, আলুবোখারা ৯০০ টাকা, তেঁতুল-বরই মিশ্র আচার ৫৫০, আলুর পাঁপড় ৬০০, চাল ও সাবুদানার পাঁপড় ৫৫০ টাকায় বিক্রি করেন। সেইসঙ্গে এলাকার খাঁটি গাওয়া ঘি ও চলনবিলের বিশুদ্ধ সরিষার মধুও বিক্রি করছেন এখন।

লাকী জানান, গত দেড় বছর ধরে আচার বিক্রিতে খরচ বাদে তাঁর মাসিক আয় এখন গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। তাঁর আচারের বেশিরভাগ ক্রেতাই প্রবাসী। তাঁরা দেশে আসার আগে অনলাইনে আচারের অর্ডার করেন এবং নেওয়ার তারিখ জানিয়ে দেন। যাতে করে ফিরে যাওয়ার সময় তাঁরা সুস্বাদু এ আচার বিদেশে নিয়ে যেতে পারেন। সেভাবেই ঢাকার বাসা থেকে আচার সরবরাহ করা হয়। লাকী আরও জানান, বর্তমানে একজন তরুণীকে মাসিক বেতনে নিয়োগ দিয়েছেন তাঁরা।

উদ্যোক্তা জীবন শুরুর পর লাকীকে কখনোই পেছনে তাকাতে হয়নি। সফল এ উদ্যোক্তার গল্প এখন তাঁর এলাকার প্রতিবেশী ও বন্ধু স্বজনেরা গর্ব করে বলেন। তবে লাকীর স্বপ্ন এখন আরও বড়। তিনি বলেন, ‘আমি এখন স্বপ্ন দেখি একটি আচার তৈরির বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান গড়ার। সেখানে চাকরি না পাওয়া অনেক তরুণ-তরুণী কাজ করবেন ও স্বাবলম্বী হবেন।’ 

আরও পড়ুন

×