ঔষধি গাছে সুনজর

আল আমীন
প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১০ মে ২০২৩ | ০৪:৩৯
সর্দি-কাশি কিংবা ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ঘরোয়া কিছু দাওয়াই হতে পারে উত্তম সমাধান। ঘরে কিংবা বারান্দায় যদি থাকে ঔষধি গাছ, তাহলে ছোট-বড় বেশ কিছু রোগ সারাতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয় না। আর ঘরের পরিবেশও ভালো থাকে। বাতাস থাকে বিষমুক্ত। লিখেছেন আল আমীন।
বাড়ির আঙিনা, আশপাশের পতিত জায়গা, বারান্দা, ছাদ, ব্যালকনি এমনকি ঘরের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগালে শোভা বাড়ে। ঔষধি গাছগুলো শোভা বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন উপকারে আসে। তুলসী, পুদিনা, থানকুনি পাতাসহ অন্যান্য গাছ বাড়িতে থাকলে জরুরি ছোটখাটো শারীরিক সমস্যায় টোটকা হিসেবে ব্যবহার করে দারুণ ফল পাওয়া যায়। বেঁচে যায় ওষুধ কেনার টাকাও। এ ছাড়া এমন কিছু গাছ আছে যেগুলোর ফল, ফুল, পাতা, শিকড় বা মূল টোটকা হিসেবে নিয়মিত ব্যবহার করলেও বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়। শুধু শারীরিক সমস্যা নয়, রূপচর্চায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ঔষধি গাছও আপনি বাড়িতেই চাষ করতে পারেন। এতে আপনার অর্থ সাশ্রয় হবে। আর এখন যেহেতু গ্রীষ্মকাল, এ সময় অনেকেই বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হন। মৌসুমি রোগে অনেক ক্ষেত্রেই ঔষধি গাছগাছড়া ব্যবহারে উপশম পাওয়া যায়।
আঙিনায় যেসব ঔষধি গাছ লাগানো যেতে পারে : গ্রামের বাড়ি বা পতিত জমিতে নিম, অর্জুন, শজিনাসহ অনেক ঔষধি গাছই লাগানো যেতে পারে। তবে এসব গাছ শহুরে বাসাবাড়িতে লাগানো সম্ভব নয়। আবার গ্রামে বাড়ির আশপাশে অযত্নেই অনেক উদ্ভিদ জন্মে থাকে; যেগুলো টোটকা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যেহেতু শহুরে জীবনে বিষয়টি একটু ভিন্ন, তাই আপনাকে বেছে নিতে হবে এমন কিছু গাছ যেগুলো টবে বা ছোট পরিসরেই বেড়ে উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে তুলসী, পাথরকুচি, পুদিনা, হলুদ, আদা, থানকুনি, অ্যালোভেরা, লজ্জাবতী ও দুধসাগর গাছ লাগানো যেতে পারে। এগুলোর প্রতিটিতেই ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে। এ ছাড়া গাঁদা, জবা, শিউলি, অপরাজিতাসহ আরও কিছু ফুল গাছ আছে, যেগুলো টবে লাগানো যায় আবার ঔষধি গুণাগুণও রয়েছে।
এমন কিছু ইনডোর প্লান্ট রয়েছে, যেগুলো টোটকা হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও কাজে লাগে। যেমন বাতাস পরিশোধনকারী হিসেবে অ্যালোভেরা, ইংলিশ আইভি, স্নেক প্লান্ট, পিস লিলি, ফিলোডেনড্রন, ব্যাম্বো পাম, স্পাইডার প্লান্ট বেশ পরিচিত।
যত্নআত্তি : ইনডোর প্লান্ট অনেকটা পোষা প্রাণী বা শৌখিন জিনিসের মতো। যেহেতু এগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছোট পাত্র বা টবে লাগানো হয়, তাই বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি।
গাছগুলো এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে ঠিকঠাক আলো-বাতাস পেতে পারে। বদ্ধঘরে বা প্রতিকূল পরিবেশে কিছু কিছু গাছ বেঁচে থাকতে পারলেও বেশিরভাগ গাছের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়। তাই গাছগুলো যাতে ঠিকমতো আলো-বাতাস পায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আবার অতিরিক্ত রোদেও গাছের ক্ষতি হতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবে নিয়মিত পানি দিতে হবে। যাতে খরায় গাছগুলো শুকিয়ে না যায়। তবে এত বেশি পানি দেওয়া যাবে না, যাতে পানি জমে গাছে পচন ধরে। মাঝেমধ্যে আগাছা, মরা পাতা বা অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। এতে গাছগুলো সজীব থাকবে, দেখতেও সুন্দর লাগবে। ছেঁটে দেওয়া ডালপালা, মরা পাতা বা আগাছা টবে ফেলা যাবে না। টব পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে মাঝেমধ্যে গাছে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে। গাছের পাতায় ময়লা জমা থেকে রক্ষা পেতে মাঝে মধ্যে শুকনো নরম সুতি কাপড় বা হালকা স্পঞ্জ দিয়ে আলতো করে মুছে দিতে হবে।
সতর্কতা
গাছে সার বা প্লান্ট ফুড দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। নিজের যদি যথেষ্ট জ্ঞান না থাকে তাহলে ভালো জানেন এমন কারও পরামর্শ নিন। পানি দেওয়ার সময় একেবারে গাছের গোড়ায় ঢেলে না দিয়ে পুরো গাছে অল্প অল্প করে ছিটিয়ে দিন। রাতভর গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। গাছ মরে গেলে বা কোনো কারণে টব খালি থাকলে সেটিতে যেন দীর্ঘ সময় ধরে পানি না জমে থাকে এটি খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ জমে থাকা পানিতে এডিস মশা জন্মে। ডেঙ্গু থেকে নিজেকে এবং অন্যদের নিরাপদ রাখতে এটা মাথায় রাখা জরুরি। টব এমন জায়গায় রাখা উচিত নয়, যেখান থেকে সহজে নিচে পড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ছাদের কোনা বা ব্যালকনিতে থাকা টবগুলো ঝড় বা অন্য কোনো কারণে নিচে পড়ে গেলে দুর্ঘটনা এমনকি প্রাণহানিও ঘটতে পারে। এ ছাড়া বাসায় শিশু বা পোষা প্রাণী থাকলেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। টবগুলো তাদের নাগালের বাইরে রাখা জরুরি।
- বিষয় :
- ঔষধি গাছ