সাক্ষাৎকার
শেয়ারবাজারে আস্থা থাকলে বিনিয়োগকারীর অভাব হয় না

শাকিল রিজভী, পরিচালক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ
আনোয়ার ইব্রাহীম
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৩ | ১৮:০০
সমকাল: নতুন করে ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর ১০ মাস কেটেছে। কী অবস্থা এখন শেয়ারবাজারের?
শাকিল রিজভী: ফ্লোর আরোপের পর যেভাবে লেনদেন কমে গিয়েছিল, সে পরিস্থিতি থেকে কিছুটা উত্তরণ হয়েছে। কিছু কোম্পানির ব্যবসা ভালো হওয়ায় সেগুলো শেয়ার ফ্লোর প্রাইস থেকে উঠে এসেছে এবং লেনদেন হচ্ছে। এ কারণে স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনও কিছুটা বেড়েছে। তবে এখনও অনেক কোম্পানি ভালো করছে না। সেগুলো ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে।
সমকাল: কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বস্ত্র ও বীমা খাত ছাড়াও অন্যান্য খাতের বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইস ছেড়েছে, যেগুলোর ব্যবসায় ভালো খবর নেই। আবার ভালো মুনাফা করেছে, এমন শেয়ারও ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
শাকিল রিজভী: যেসব শেয়ার এখনও ফ্লোরে পড়ে আছে, তার বড় অংশের বাজার মূলধন বা শেয়ার বেশি। আবার গ্রামীণফোন বা স্কয়ার ফার্মার মতো শেয়ারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেশি। দেখা যাচ্ছে, বিদেশিদের একটা অংশ তাদের শেয়ার ক্রমাগত বিক্রি করছে। এ কারণে যে যত শেয়ারই কিনুন না কেন, ওইসব শেয়ার ফ্লোর ছাড়ার সম্ভাবনা কম, বরং বিনিয়োগ আটকে যাওয়ার ভয় বেশি। এ কারণে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করার চিন্তা করছেন না।
সমকাল: যেসব শেয়ার ফ্লোর ছাড়ছে, কাদের বিনিয়োগে সেগুলোর দর বাড়ছে বলে মনে করেন?
শাকিল রিজভী: এটা বলা মুশকিল। কোনো কোনো শেয়ার ফ্লোর ছাড়তেই ক্রেতাশূন্য অবস্থা থেকে বিক্রেতাশূন্য হচ্ছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ আটকে যাওয়ার ভয়ে আগে যে শেয়ার কেউ কিনতে চাইত না; কিন্তু যাদের কাছে শেয়ার ছিল তারা বিক্রি করতে মরিয়া ছিল। ফ্লোর ছাড়ার পর এমন কিছু শেয়ারে এখন পুরো উল্টো অবস্থা। যাদের হাতে শেয়ার আছে, আরও দর বৃদ্ধির আশায় শেয়ার ছাড়তে চাচ্ছে না। অন্যদিকে যাদের হাতে শেয়ার নেই, তারা শেয়ার কিনতে মরিয়া। এর নেপথ্যে নানা ধরনের বিনিয়োগকারী থাকতে পারে।
সমকাল: গত সপ্তাহে ফ্লোরে পড়ে থাকা সব শেয়ারের সাকুল্যে ৮৫০-৯৫০ কোটি টাকার বিক্রির আদেশ ছিল। গত বৃহস্পতিবার এমন ২১৪ শেয়ারে মোট বিক্রির আদেশ ছিল ৮৭৭ কোটি টাকার। এই পরিমাণ শেয়ারের ক্রেতা এলে পরিস্থিতির কী কোনো পরিবর্তন হতো?
শাকিল রিজভী: পরিবর্তন বলতে অনেক শেয়ারের দাম বাড়ত এবং ফ্লোর ছেড়ে উঠে আসত। একটি উদাহরণ দিই। কিছুদিন আগেও হেইডেলবার্গ সিমেন্ট, বার্জারের মতো কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিল। এসব শেয়ারের বিক্রেতা ছিল; কিন্তু কেউ কিনতে চাইত না। হঠাৎ করে কেউ না কেউ শেয়ার কিনতে থাকলে ফ্লোর প্রাইসে বিক্রেতার সংখ্যা কমেছে। এক সময় শেয়ারগুলোর ফ্লোর প্রাইস ছেড়েছে। সব শেয়ারেই এমনটা হয়। এখন ফ্লোর প্রাইসে থাকা শেয়ারগুলোর যদি ৯০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রির আদেশ থাকে, তবে অধিকাংশ শেয়ারের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে।
সমকাল: ফ্লোরে পড়ে থাকা অধিকাংশ শেয়ারে বিক্রির আদেশ মূল্য কোটি টাকার নিচে। ১০-১৫ লাখ টাকাও দেখা গেছে। এ পরিমাণ বিনিয়োগ করার কেউ কী নেই?
শাকিল রিজভী: থাকবে না কেন। শেয়ারবাজারে সবাই নিজের পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করেন। তবে সবার ‘কমন’ উদ্দেশ্য একটাই। তা হলো, মুনাফা করা। যখন কেউ দেখেন, এখন বিনিয়োগ করলে মুনাফা হবে, তখন শেয়ার কেনেন। এটা আস্থা ও বিশ্বাসের ব্যাপার। বাজারে আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে এলে বিনিয়োগকারী বা টাকার অভাব হয় না।
- বিষয় :
- শেয়ারবাজার
- বিনিয়োগকারী