ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

জেন্ডার বাজেটে সীমাবদ্ধতা

উচ্চ পদে নারী কোটা

উচ্চ পদে নারী কোটা

শাহ্দীন মালিক, আইন বিশেষজ্ঞ

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ | ০২:২৬

জেন্ডার বাজেট নারীর জন্য আলাদা কোনো বাজেট নয়; বরং এটি একটি বিশেষ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় হিসাবনিকাশের সাহায্যে জাতীয় বাজেটের জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিশ্লেষণ করা যায়। নারীর ক্ষমতায়ন ও বাজেটে জেন্ডার বৈষম্য দূর করতে কেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে– এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। গ্রন্থনা শাহেরীন আরাফাত

আমরা নারীর ক্ষমতায়নের পথে এগোতে পদক্ষেপ নিইনি। একটু ব্যাখ্যা করা যাক। নারীরা গার্মেন্টে কাজ করেন। এতে সরকারের তেমন কোনো অবদান নেই। তাঁরা নিজেরাই ওই জায়গা করে নিয়েছেন। ইটভাটা, নির্মাণ, কৃষি খাত বা এমন অনেক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারীরা কাজ করছেন, সেখানেও সরকারের অবদান খুবই অল্প অথবা নেই।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যে আইন হয়েছে, ওই আইনে অন্যায়-অবিচারই বেশি হয়। আইনটি এমনভাবে করা হয়েছে, এর ফলাফল হলো মিথ্যা মামলা। এ মিথ্যা মামলা চলতে থাকলে আইনজীবীরা লাভবান হন, কিন্তু আক্রান্তরা কিছুই পান না।

নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে প্রথম প্রতিবন্ধকতা হলো সংরক্ষিত নারী আসন। আসন সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে নারীদের মূল রাজনীতি বা ক্ষমতাবলয় থেকে দূরে রাখা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, উচ্চ পদে কোটা ব্যবস্থার অভাব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের যে কয়টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সেখানে একটা কোটা রাখা যেতে পারে যে, ২০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী উপাচার্য হবেন। একইভাবে সরকারি সব প্রতিষ্ঠান, সচিবালয়ে এমন কোটা থাকতে পারত, যেখানে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হবেন নারী। এটি করা সম্ভব। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী অধ্যাপকের সংকট নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনটা হয়েছে– যারা পিছিয়ে আছে, তাদের জন্য কোটা করে দেওয়া। এটি আমরা করি না। নারী যেখানে যুক্ত হয়েছে, সেখানে নিজ উদ্যোগেই তা করেছে। সরকার যেখানে উদ্যোগ নিতে পারত, তা হলো প্রাতিষ্ঠানিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাকে ক্ষমতায়ন করা, সেটি করা হয়নি।


একটি ব্যাংকের কথাই ধরা যাক, সেখানে অনেক নারী কাজ করেন। তবে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ৩০ জনের মধ্যে মাত্র দু’জন নারী। নিচের দিকে অনেক নারী কাজ করেন। তাঁরা ক্ষমতায়িত হতেন, যদি ওই ৩০ জনের মধ্যে ১০ জন অন্তত নারী হতেন। সব ক্ষেত্রেই নারী কোটা দরকার।

বাজেটের সময় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পক্ষ তাদের যুক্তি তুলে ধরে। আমাদের নারী সংগঠনগুলোর দুর্বলতা হলো, জেন্ডার বাজেট সম্পর্কে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর কথাও তাদের পক্ষ থেকে তেমন একটা বলা হয় না। এর মূল কারণ হলো, উচ্চ পদে না থাকলে সমস্যাগুলো পুরোপুরি বোঝা যায় না।

তৃতীয়ত, বিয়ে ও বিচ্ছেদ আইনের সংস্কার করতে হবে। আমাদের মতো এত সহজে বৈধভাবে বিচ্ছেদ হওয়ার আইনি কাঠামো আর কোনো দেশে আছে কিনা সন্দেহ। অন্যান্য দেশে বিয়ে বিচ্ছেদের কারণ জানাতে হয় আদালতকে। এখানে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে উত্তরাধিকার আইনও একটি বড় বাধা। তবে এটি কোনো রাজনৈতিক সরকারের পক্ষে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। অথচ অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে এ আইন পরিবর্তন করা হয়েছে ধাপে ধাপে। একেবারেই তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এটি যে ধর্মের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করে না, সেটি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

আরও পড়ুন

×