ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

আইনি পরামর্শ

ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক

ভয় দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক

সাদিয়া আরমান

--

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

এ বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে পাঠকের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান

আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রায় এক বছর আগে এক সহপাঠীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একসঙ্গে পড়ার কারণে সে মাঝে মধ্যে আমাদের বাসায় আসত। একদিন বাসায় কেউ ছিল না। সেদিন সে ভয় দেখিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে এবং তা ভিডিও করে রাখে। যেহেতু ওকে ভালোবাসতাম, ওই দিনের ঘটনা কাউকে বলিনি। এরপর আমার প্রেমিক মাঝে মধ্যেই আমাকে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাপ প্রয়োগ করত। রাজি না হলে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বা আত্মীয়স্বজনের কাছে পাঠানোর হুমকি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করে। ওর প্রতি আমার আর কোনো ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই। আমি এ সম্পর্ক থেকে বের হতে চাই। এ থেকে কীভাবে মুক্তি পেতে পারি?

 জেসি রহমান (ছদ্মনাম), ঢাকা প্রিয় জেসি, আপনার সহপাঠী আপনার কোমল অনুভূতি ও একাকিত্বের অপব্যবহার করে আপনার সঙ্গে চরম অপরাধ সংঘটন করেছেন। প্রেম আর যৌন সম্পর্ক দুটো আলাদা ব্যাপার। প্রেম যেভাবে দু’জনের মত ও মনের মিলনে হয়, যৌন বা যে কোনো শারীরিক সম্পর্কের জন্যও সম্মতি প্রয়োজন। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্মতি ছাড়া একজন আরেকজনের গায়ে ছোঁয়াও যাবে না। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারা ৩৭৫ অনুযায়ী ধর্ষণের সংজ্ঞা হচ্ছে, নারীর সম্মতি ছাড়া বা ইচ্ছা ছাড়া যৌনসংযোগ না করা। তিনি আপনার ইচ্ছার বাইরে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আপনাকে বারবার ধর্ষণ করেছেন। যত বার করেছেন, ততবার একটা নতুন অপরাধ ঘটিয়েছেন ও ঘটাচ্ছেন। প্রতিবারের অপরাধের জন্য আলাদা শাস্তি আইনে আছে।

ধর্ষণের শাস্তি ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারা ৩৭৬ অনুযায়ী, ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০-এর ধারা ৯ অনুযায়ী, কেউ যদি ভীতি প্রদর্শন করে যৌনসঙ্গম করে তাহলে সেটি ধর্ষণ। ধর্ষণের জন্য তাঁকে সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে। কাজেই দুটো আইনেই আপনি এই অত্যাচারীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পারবেন। সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্কের ভিডিও করা আরেকটা গুরুতর অপরাধ। সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া আরও একটা ভিন্ন অপরাধ। যেহেতু ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে এই ভিডিও করে অপরাধ ঘটানো হয়েছে, তাই এসব অপরাধ সাইবার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের জন্য পুলিশের আলাদা সেল আছে। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (পিসিএসডব্লিউ) নামে একটি সরকারি সংস্থা আছে, যা সবসময় খোলা থাকে। তারা নারীদের সাইবার অপরাধসংক্রান্ত আইনি ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে থাকে। সংস্থাটির হেল্পলাইন ০১৩২০-০০০৮৮৮, ঘটনা রিপোর্ট করার হটলাইন ০১৩২০-০২৬৯৯৭। তাদের কল করে দেখতে পারেন। এ ছাড়া ঢাকা শহরে সাইবার অপরাধ তদন্ত করার জন্য সিআইডি বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেন্টার আছে, যার ফোন নম্বর ০১৭৩০৩৩৬৪৩১। আপনি থানায় গিয়ে মামলা করলেই পুলিশ আপনাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করার কথা। থানায় যদি কোনো কারণে মামলা না করতে পারেন তাহলে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অথবা সাইবার ট্রাইব্যুনালেও করতে পারেন, যা ঢাকা জজকোর্টের পুরোনো ভবনের ষষ্ঠ তলায় অবস্থিত। আবার আপনি আইনি সহায়তা সংস্থাগুলোর কাছেও যেতে পারেন। সাধারণত জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণেই আপনি একাধিক আইনি সহায়তা সংস্থার খোঁজ পাবেন, তাদের কক্ষ বার অ্যাসোসিয়েশন বিল্ডিংয়ে রয়েছে। যেমন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ লিগাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ইত্যাদি। এসব আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর কাছে গেলে আপনার দ্রুত প্রতিকার পাওয়ার ভালো সম্ভাবনা আছে। v

আরও পড়ুন

×