বহুমাত্রিক একজন

--
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
অভিনেতা পরিচয়ের আগে ‘বরেণ্য’, ‘নন্দিত’, ‘অনবদ্য’, ‘জনপ্রিয়’– এমন অনেক বিশেষণ ব্যবহার করা হয় শহীদুজ্জামান সেলিমের নামের আগে। কেন? তার উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে মঞ্চ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ওয়েব দুনিয়ায় তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলোর দিকে। আজ বহুমাত্রিক এই অভিনয়শিল্পী কথা বলেছেন ঈদ ছবির আলোচিত চরিত্রগুলো নিয়ে। লিখেছেন রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ
‘কীভাবে চরিত্রের সঙ্গে মিশে গিয়ে অন্য এক মানুষে নিজেকে রূপান্তরিত করতে হয়, জানতে চান? না, এটা বলা যাবে না। বিষয়টা টপ সিক্রেট, হা-হা-হা...।’ হাসিমুখে এভাবেই জানিয়ে দিলেন, অভিনয় দর্শকের কাছে বাস্তব করে তুলে ধরার মন্ত্রটা ফাঁস করতে চাননি শহীদুজ্জামান সেলিম। নন্দিত এই অভিনেতা এও স্বীকার করলেন– মঞ্চ, টিভি, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ– যে মাধ্যমেই তিনি অভিনয় করেন না কেন, সেগুলো সম্মিলিত কাজ। তাই কারও একার পক্ষে সবকিছু নিখুঁত করে তুলে ধরা সম্ভব নয়। কাহিনিকার, নির্মাতা, সহশিল্পী– সবার সঙ্গে আলোচনা, পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই কাঙ্ক্ষিত কাজটি সম্ভব। তাঁর এই কথায় স্পষ্ট যে, অভিনয় জগতের প্রতিটি কাজই টিমওয়ার্কের মধ্য দিয়ে হয়। তাই এখানে কোনো কাজের সাফল্যের দাবিদার কেউ এককভাবে হতে পারে না। তার পরও দর্শক আর অভিনয়বোদ্ধাদের দৃষ্টিতে কেউ কেউ পেয়ে যান তাঁর কালের শ্রেষ্ঠ শিল্পীর স্বীকৃতি। শহীদুজ্জামান সেলিমও তাদেরই একজন, যাঁকে অনেকে এই সময়ের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বলেই দাবি করেন। এ কারণে এই অভিনয়শিল্পীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বারবার নিজেকে ভেঙে নতুনভাবে পর্দায় তুলে ধরার বিষয়ে তাঁর প্রস্তুতি কেমন থাকে। এ নিয়ে শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘অভিনয়ের আগে চরিত্র নিয়ে নিজস্ব ভাবনা ও পরিকল্পনা নির্মাতাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিই। একই সঙ্গে জানার চেষ্টা করি, তাদের প্রত্যাশা এবং চরিত্রকে তারা কীভাবে উপস্থাপন করতে চান। তবে অভিনয় শুরুর আগে চরিত্রের জীবনযাপন, স্বভাব, চিন্তাধারা, উদ্দেশ্য, নিজেকে প্রকাশ করার ভঙ্গি– তা নিয়ে খানিকটা পাঠচক্র চলে। সেটি অবশ্য নিজে নিজেই। এর পর দাঁড়িয়ে যাই ক্যামেরার সামনে। অন্য মানুষে নিজেকে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে করে যাই অভিনয়।’ তাঁর এ কথা থেকে জানা গেল চরিত্র উপস্থাপন নিয়ে ভাবনা, পরিকল্পনা আর প্রস্তুতির কথা। তাঁর অসংখ্য চরিত্র নিয়ে বিস্তর আলোচনা হতে পারে। তবে আমরা আগের কাজগুলো বাদ রেখে জানতে চাই ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘সুড়ঙ্গ’, ‘লাল শাড়ি’ ও ‘প্রিয়তমা’ ছবির চরিত্র নিয়ে। তাঁর বয়ানেই তুলে ধরা হলো এই তিন ছবির চরিত্রগুলোর কথা।
‘ওসমানরা অচেনা নয়’
‘প্রিয়তমা’ ছবির যে ওসমানকে দর্শক দেখেছেন, সে কি অচেনা কেউ? আমার মনে হয় না। পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশন সংবাদে এমন অনেক দুর্ধর্ষ ওসমানের খবর জানা যায়। তাই কক্সবাজারের দুর্ধর্ষ মাছ ব্যবসায়ী, যার হিংস্র থাবা থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন সেই ওসমানকে পর্দায় তুলে ধরার কাজটি নিয়ে বেশি ভাবতে হয়নি। একটু কাহিনির দিকে নজর দিন। তাহলেই স্পষ্ট হবে ব্যবসায়ীর মুখোশে ওসমান কীভাবে তার হিংস্র রূপ লুকিয়ে রেখেছে। সুজন নামের এক যুবক ওসমানের ব্যবসায়িক পার্টনার। যাকে ড্রাইভারসহ ওসমান খুন করে। সেই খুন সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালাতে চায়। সেটি যে দুর্ঘটনা নয়, তা বুঝে যায় সুজনের ছোট ভাই সুমন। এর পর বাবার অসুস্থতার সময় তার ভাবিকে ওসমানের কাছে পাঠায় টাকা চাইতে। তার ভাবিও টাকার বদলে মারধরের শিকার হয়ে খালি হাতে ফেরত আসে। এই যে কাহিনি, এতে স্বচ্ছভাবেই ধরা দিয়েছে ওসমানের ভেতর ও বাইরের রূপ। তাই অভিনয়ও জটিল মনে হয়নি। তবে হ্যাঁ, পর্দায় চরিত্রের ব্যাপ্তি যতটুকুই থাক– সেটি দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়েছে।
‘চেয়ারম্যানেরও থাকে আলাদা রূপ’
আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো এলাকার চেয়ারম্যান মানেই তিনি জনগণের সেবক, উন্নয়নমূলক কাজে যিনি সবসময় বাড়িয়ে দেন সাহায্য-সহযোগিতার হাত। কিন্তু চেয়ারম্যানেরও আলাদা রূপ থাকতে পারে– সেটি ‘লাল শাড়ি’ ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। ছবির কাহিনি গড়ে উঠেছে আমাদের তাঁতিপল্লিকে ঘিরে। যাদের ন্যায্য অধিকার পাওয়ার বিষয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ান স্থানীয় চেয়ারম্যান, যার স্বার্থান্বেষী রূপটা ভেতর থেকে বের করে দর্শকের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। আনকোড়া নয়, এমন চরিত্রও বিভিন্ন কাহিনিতে পাওয়া যায়। চ্যালেঞ্জটা হলো, বহুবার দেখা এমন নেতিবাচক চরিত্র থেকে নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরা। এ ক্ষেত্রে নির্মাতা বন্ধন বিশ্বাসের যে আস্থা ছিল, তার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টাও করতে হয়েছে। এমন চরিত্র তখনই সার্থক হয়ে ওঠে, যখন দর্শকের ঘৃণা কুড়ানো যায়। তাদের বিশ্বাস করানো যায়, এ কোনো গল্প নয়, সামনে থাকা কোনো চেনা মানুষের ছায়া।
‘আপেল খানও আইনের রক্ষক’
কানে আসছে, ‘সুড়ঙ্গ’ ছবির আপেল খানের চরিত্রটি অনেকের কাছে মজার লেগেছে। আসলে এই চরিত্রের মুখে আঞ্চলিক ভাষার যেসব সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে, তা হাস্যরসের জন্ম দেয়। যাকে দেখে বিস্ময় জাগে আইনের রক্ষকও এমন হতে পারে! এখানে চরিত্রের স্বভাব, আচরণ একটু আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে মজার ও সিরিয়াস। তাই ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে দর্শককে বিশ্বাস করতেই হয়, সেসব পুলিশ কর্মকর্তার মতো আপেল খানও আইনের রক্ষক, যে সত্য উদ্ঘাটনে সত্যিকার অর্থেই সচেতন। এই চরিত্রটা আমার জন্য যেমন নতুন, তেমনি ভিন্ন ধরনের। অভিনয়ে নিজেকে ভেঙে ভিন্নরূপে তুলে ধরারও সুযোগ ছিল এই চরিত্রের মাঝে।
- বিষয় :
- বহুমাত্রিক
- শহীদুজ্জামান সেলিম
- অভিনয়শিল্পী