ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

জামদানির সমারোহ

জামদানির সমারোহ

--

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৩ | ০১:১১

রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয়  চিত্রশালায় চলছে ‘আদি জামদানি প্রদর্শনী’।  এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন কাজী অহনা

জামদানি নামের সঙ্গে জড়িয়ে বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য ও ভালোবাসা। মোগল আমলের এক অপূর্ব সম্পদ ছিল জামদানি। প্রাচীনকালে নকশাদার মসলিনকেই বলা হতো জামদানি। বাহারি নকশা ও চমৎকার কারুশৈলীর জন্য জামদানি এত বিখ্যাত। বাংলাদেশের যেসব নারী শাড়ি পছন্দ করেন, তাদের সংগ্রহে অন্তত একটি হলেও জামদানি শাড়ি থাকে।

নান্দনিক ডিজাইন এবং দামে বেশি হওয়ার কারণে জামদানির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আভিজাত্য এবং রুচিশীলতাও।

কথায় আছে ‘শাড়িতেই নারী’। নারীর পরনে যদি থাকে জামদানি তাহলে তার ব্যক্তিত্ব ও রুচিশীলতা আলাদাভাবে দৃষ্টি কাড়ে সবার। দেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি নিয়ে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় ১৯ জুলাই শুরু হয়েছে ‘আদি জামদানি প্রদর্শনী’।

জামদানিকে কেবল টিকিয়ে রাখা নয়, বরং এর ঐতিহ্যকে তুলে ধরা এবং বয়নশিল্পীদের জীবন-মানের টেকসই উন্নয়ন, বয়নশিল্পকে পরিবেশবন্ধব করার লক্ষ্য নিয়ে এই জামদানি উৎসব চলবে আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত।

এই আয়োজনে ২৫টি উন্নত মানের জামদানি শাড়ি ও অন্যান্য সামগ্রী ছাড়াও বিভিন্ন ইন্সটলেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে বয়নপ্রক্রিয়া।

শতবর্ষী পুরোনো জামদানি শাড়ির ছবি থেকে ধারণা নিয়ে ফের সৃষ্টি করা হয়েছে এই প্রদর্শনীর জামদানিগুলো। বংশ পরম্পরায় অর্জিত জ্ঞান থেকে নতুন এই জামদানিগুলো বুনেছেন এই সময়ের শীর্ষ সারির ওস্তাদ ও কারিগররা।

জামদানি কারিগরদের অভিযোগ, বর্তমানে ‘সবার জন্য জামদানি’ এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সস্তা নাইলনের তৈরি মেশিনের জামদানির আধিক্য বেড়েছে ব্যাপক, যার ফলে আসল জামদানির পাশাপাশি বাজারে মিলছে নাইলনের খসখসে জামদানি। এ বিষয়ে জামদানি কারিগর মোহাম্মদ জামাল হোসেন জানান, আসল জামদানি চেনার উত্তম উপায় হলো, হাত দিয়ে ধরে দেখা। নিখুঁত জামদানির কাজ যত মসৃণ হয়, নাইলন কিংবা মেশিনের জামদানির কাজ তত মসৃণ হয় না। বরং এসব কাপড় হয় খসখসে প্রকৃতির।

জামদানির উচ্চ মূল্যের কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, কাউন্ট ভেদে জামদানি শাড়ির দাম কম-বেশি হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে জামদানি সম্পূর্ণ হাতে বুনন করা হয়। যত বেশি নিখুঁত তত বেশি সময় লাগে শাড়ি বুনতে। এছাড়াও সুতার ওপর নির্ভর করেও জামদানির দামে দেখা যায় তারতম্য। মূলত ৩২ কাউন্ট থেকে শুরু করে ২০০-৩০০ কাউন্টের জামদানিও বাজারে দেখা যায়। তবে বাংলাদেশে নির্দিষ্ট কিছু তাঁতি ছাড়া নিখুঁত জামদানি সবাই তৈরি করতে পারে না।

আয়োজকরা জানান, বিশ্ব আঙিনায় জামদানি পৌঁছে দেওয়াই এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য। এর পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতাদের জামদানি সম্পর্কে সচেতন করা। তারা আরও জানান, যেসব তাঁতি ন্যায্য দাম না পেয়ে পেশা পরিবর্তন করেছিলেন তাদের আবার এই পেশায় ফিরিয়ে এনেছেন এই উদ্যোগের মাধ্যমে। পাশাপাশি শতবর্ষী পুরোনো জামদানি মোটিফের আদলে নতুন জামদানি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে এ আয়োজনের জন্য। বাংলাদেশের আদি জামদানির আভিজাত্য তুলে ধরা এবং ঐতিহ্যময় বয়নশিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করাই এ প্রদর্শনীর অন্যতম উদ্দেশ্য।

সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্টের আওতায় আয়োজিত এ প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত। আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৭ নম্বর গ্যালারিতে চলবে এই প্রদর্শনী।

আরও পড়ুন

×