ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহ নেই

শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহ নেই

সাদিয়া আরমান

--

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

এ বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে পাঠকের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান

মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানকারী এক যুবকের সঙ্গে প্রায় ছয় মাস আগে ফেসবুকের মাধ্যমে আমার পরিচয়। তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। একপর্যায়ে দুই পরিবারের সম্মতিতে অনলাইনে আমাদের বিয়ে হয়। সম্প্রতি তিনি দেশে আসেন। আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ নেই বলে জানান। ডাক্তারের পরামর্শও নিতে রাজি নন। আমি বিষয়টি পরিবারকে জানিয়েছি। ওর পরিবার হয়তো আগে থেকেই এ সম্পর্কে জানত। তাই তারা এ নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখায়নি। ওই যুবকের কাছে আমার কিছু ব্যক্তিগত ছবি আছে। তিনি ডিভোর্সের ক্ষেত্রে আমাকে দেনমোহরের টাকা দিতে রাজি নন। এর বিপরীতে আমার ব্যক্তিগত ছবিগুলো ফেরত দেবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায় রাজি না হলে ওই ছবিগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। আমি এ বন্ধনহীন সম্পর্ক থেকে মুক্তি চাই। আমার সঙ্গে এমন প্রতারণার বিচার চাই। দয়া করে পরামর্শ দেবেন, এখন আমি কী করতে পারি? সোহানা (ছদ্মনাম), গাজীপুর প্রিয় সোহানা

আপনি তিন ধরনের প্রতিকার এই ভণ্ড স্বামীর বিরুদ্ধে পেতে পারেন। প্রথমত, তালাক বা বিয়ে বিচ্ছেদ। দ্বিতীয়ত, আপনার মোহরানার টাকা আদায়। তৃতীয়ত, এই অপরাধীকে আইনের কাছে ধরিয়ে দেওয়া।

আপনাকে কাজি অফিসে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা ক্ষেত্রবিশেষে মিউনিসিপাল করপোরেশনের কাছে তালাকের নোটিশটা পাঠাতে হবে। আপনার স্বামীর স্থায়ী ঠিকানাতেও নোটিশ পাঠাতে হবে। এ ঠিকানা আপনার কাবিননামাতেই দেওয়া আছে। তিনি যদি গ্রামের বাসিন্দা হয়ে থাকেন, তাহলে এই স্থায়ী ঠিকানা তাঁর গ্রামের বাড়ি। তালাকের নোটিশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে আপনার তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।

মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার কর্তৃক তিন মাসের মধ্যে একটি সালিশ বসানোর বিধান আছে। ওই সালিশে আপনাকে ডাকা হবে। যদি নাও ডাকা হয়, আপনি ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সালিশ বসানোর জন্য বলতে পারেন। সেখানে আপনি মোহরানার কথা তুলতে পারেন। তবে সালিশি কর্মকর্তাদের কথা যদি আপনার স্বামী না শোনেন, তাহলে আদালতের মাধ্যমে মোহরানার টাকা আদায় করতে হবে। তিন মাস পর আপনি কাজি অফিসে গিয়ে তালাক বা বিয়ে বিচ্ছেদকে স্থায়ী করতে পারেন।

বিদেশে যে কোম্পানিতে এই লোক কাজ করেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপরাধ সম্পর্কে জানিয়ে দিতে পারেন। আপনি বাংলাদেশে সেই দেশের দূতাবাসেও এ সম্পর্কে নালিশ করতে পারেন। অবশ্য এ জন্য আপনার নিকটস্থ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি নালিশ করতে হবে। আপনার স্বামী ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে আপনার বিরুদ্ধে একটা বড় মাপের অপরাধ ঘটানোর হুমকি দিচ্ছেন এবং প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আপনার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা জোরপূর্বক আদায়ের জন্য অর্থাৎ দেনমোহরের টাকা নিজের কাছে অবৈধভাবে রেখে দেওয়ার জন্যই এ হুমকি দিচ্ছেন। এটি সাইবার ক্রাইম হিসেবে গণ্য হবে। সাইবার ক্রাইমের জন্য পুলিশের আলাদা সেল আছে। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (পিসিএসডব্লিউ) নামে একটি সরকারি সংস্থা আছে, যা সবসময় খোলা থাকে। তারা নারীদের সাইবার অপরাধসংক্রান্ত আইনি ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে থাকে। তাদের হেল্পলাইন নম্বর ০১৩২০-০০০৮৮৮, ঘটনা রিপোর্ট করার হটলাইন নম্বর ০১৩২০-০২৬৯৯৭। সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। এ ছাড়া ঢাকা শহরে সাইবার অপরাধ তদন্ত করার জন্য সিআইডি বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেন্টার আছে, যার ফোন নম্বর ০১৭৩০৩৩৬৪৩১। আপনি থানায় গিয়ে মামলা করলে পুলিশই আপনাকে এসব ব্যাপারে সাহায্য করার কথা। থানায় যদি কোনো কারণে মামলা না করতে পারেন তাহলে সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অথবা সাইবার ট্রাইব্যুনালেও মামলা করতে পারেন; এটি জজকোর্টের পুরোনো ভবনের ষষ্ঠ তলায় অবস্থিত।

আরও পড়ুন

×