স্মার্ট পুষ্টিগ্রাম

বাড়ির আঙিনায় নার্গিস বেগমের যত্নে বেড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি
হাসান জাকির
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৩ | ০৫:৫০
বছর দু-এক আগে স্বামী হারিয়েছেন নার্গিস বেগম। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর একমাত্র ছেলেকে নিয়েই তাঁর সংসার। কৃষিজমি থেকে আসা ফসল, গরু-ছাগল আর হাঁস-মুরগি লালন-পালন করে একাই সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। বাড়ির আঙিনাসংলগ্ন চার শতাংশ জমিতে করেছেন সবজি বাগান। সেখানে নার্গিস বেগমের যত্নে বেড়ে উঠেছে লালশাক, কলমিশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাকসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি। নার্গিস বেগম সবজি ক্ষেতে ব্যবহার করছেন জৈব সার। শেরপুরের সদর উপজেলার সূর্যদী গ্রামে গিয়ে কথা হয় নার্গিস বেগমের সঙ্গে। নিজের ক্ষেতের শাক তুলতে তুলতে তিনি জানালেন, ক্ষতিকর সার-ওষুধ ব্যবহার না করে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ শাকসবজি উৎপাদনে বিশেষ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তারা। গরু-ছাগল কিংবা হাঁস-মুরগির ঘর এখন নিয়মিত জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখছেন। এর আগে হাঁস-মুরগি পাললেও এত কিছু জানতেন না তিনি। সরকারের ‘স্মার্ট নিউট্রিশন মডেল গ্রাম (মডেল পুষ্টিগ্রাম)’ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজেকে বদলে ফেলেছেন তিনি।
নার্গিসের মতো সূর্যদীর আরও ১১৯ জন নারী-পুরুষ এ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। সূর্যদীসহ পাশের দুই গ্রাম ডোবারচর ও চরকারচর নিয়ে পরীক্ষামূলক এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রতিটি গ্রাম থেকে ১২০ জন করে ৩৬০টি পরিবার যুক্ত হয়েছে এ প্রকল্পে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অন্যতম অংশীদার শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক হুয়ামুন কবীর জানান, সবার জন্য পুষ্টি নিশ্চিতে সরকার বহু খাতভিত্তিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে মডেল পুষ্টিগ্রাম প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পুষ্টিবাগান, গবাদি পশু পালন, মাছ চাষে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমরা নির্বাচিত পরিবারকে পুষ্টিবাগান করতে উপকরণ, বীজ, সার, চারা, বেড়া এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রাণিসম্পদ বিভাগ গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি লালন-পালন নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, তেমনি মৎস্যসম্পদ বিভাগ মাছ উৎপাদনে কাজ করছে।
সূর্যদী মুন্সিপাড়ার কণিকা আক্তার জানান, প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তারা যে পুষ্টিবাগান করেছেন, সেখানে উঁচু বেড করে বীজ রোপণ করছেন। এতে বর্ষাকালেও তাদের সবজি বাগানে পানি জমেনি। এখন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে হাঁস-মুরগি-গরু পালন করছেন।
সূর্যদীর নূর নাহার বেগম কিংবা সাহেরা খাতুন ও ইদ্রিস আলী দম্পতিও একই কথা বললেন। তাদের প্রত্যেকেরই আঙিনাসংলগ্ন পতিত জমিতে শোভা পাচ্ছে ‘পুষ্টিবাগান’। সাহেরা খাতুন ও ইদ্রিস আলীর গোয়ালে পাঁচটি গরু। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পালিত এ গরুর অন্তত দুটি আগামী ঈদে বিক্রি করতে চান তিনি।
পুষ্টি ঝুঁকিতে থাকা অন্তঃসত্ত্বা নারী, দুগ্ধদানকারী মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতে জামালপুর ও শেরপুরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়ান এনজিও কো-অপারেশন প্রোগ্রামের সহ-অর্থায়নে ওয়ার্ল্ড ভিশনের নেতৃত্বে উন্নয়ন সংঘ, ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-হার্ভেস্ট প্লাস ও ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ টু এনহ্যান্স নিউট্রিশন সিকিউরিটি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (বিংস) শীর্ষক প্রকল্প ২০১৮ সাল থেকে বাস্তবায়িত হয়েছে।
বিংস শীর্ষক প্রকল্পের ম্যানেজার মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, মডেল পুষ্টিগ্রাম উদ্যোগটি জেলা ও উপজেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটি, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি সঠিকভাবে তদারকি করছে। এটি জাতীয়ভাবে সারাদেশে বাস্তবায়িত হলে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।
বিংস প্রকল্পের টিম লিডার ডা. মেরী রশীদ বলেন, আমাদের প্রকল্পটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন সরকারের উদ্যোগে বাস্তবায়িত মডেল পুষ্টিগ্রাম প্রকল্পটি আশা করি শুধু পুষ্টি নয়, মানুষের জীবনযাপনের মানোন্নয়নে সহায়তা করবে। ছয় মাস মেয়াদি পরীক্ষামূলক কার্যক্রমটি সফল হলে আমি আশা করব, সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণে বহু খাতভিত্তিক এ উদ্যোগটি উদাহরণ সৃষ্টি করবে।
- বিষয় :
- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
- পুষ্টিবাগান
- বিংস