খেতে ইচ্ছা করে না, খাওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয় না কিংবা খাবারে মন বসে না। এ সমস্যাটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অ্যানোরেক্সিয়া বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে এ ধরনের সমস্যা দেখা যেতে পারে। সন্তানের এ সমস্যার কারণে বাবা-মা বেশ বিচলিত হয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে বায়োজিন কসমেসিউটিক্যালসের ফিটনেস নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ডায়েট কনসালট্যান্ট মুনিয়া মৌরিন মুমু বলেন, খাবারে অরুচি তেমন জটিল সমস্যা নয়। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে খুব সাধারণ একটি সমস্যা। কিছুদিন আগেও আপনার সন্তান যে খাবার আগ্রহ নিয়ে গ্রহণ করত, আজ হয়তো সেই খাবার সে খেতে পছন্দ করছে না। সমস্যাটি জটিল আকার তখনই ধারণ করে যখন আপনার শিশুসন্তানটি সব ধরনের খাবার গ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং খাবারের প্রতি তার অরুচি সৃষ্টি হয়।
অরুচির কারণ
শিশুর যদি হজমগত সমস্যা থাকে তাহলে অনেক সময় খাবারে অরুচি সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা যেমন– জ্বর, সর্দি-কাশি হলে শিশুর ক্ষুধামান্দ্য তৈরি হয়। সব খাবার তাদের কাছে স্বাদহীন মনে হয় অসুস্থতার সময়টিতে এবং স্বাভাবিকভাবেই খাবার গ্রহণে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
শিশুরা ছোট থেকে বড় হওয়ার সময় তাদের খাবারে পরিবর্তন হতে থাকে, অর্থাৎ তরল খাবার থেকে আস্তে আস্তে সলিড খাবার গ্রহণের সময়টিতে অনেক শিশু নতুন ধরনের খাবার খেতে অনাগ্রহী হয়।
খাবারের একটি নির্দিষ্ট রুটিন থাকা দরকার। আপনার শিশুসন্তান যদি একেক দিন একেক সময়ে খাবার গ্রহণ করে, সেটি তার খাদ্যাভ্যাসে প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া প্রধান খাবারের ঠিক আগে যদি বিভিন্ন রকমের হালকা খাবার গ্রহণ করে, সেটি তার প্রধান খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা দেয়।
অনেক সন্তান স্বভাবতই নির্দিষ্ট কিছু খাবার গ্রহণে বেশি আগ্রহী থাকে যেমন– প্যাকেটজাত খাবার (চিপস, চকলেট, ক্যান্ডি, আইসক্রিম)। ফলে তাদের ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি অরুচি সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া শিশুর যদি নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে যেমন– রক্তশূন্যতা, কৃমিজনিত সমস্যা, পেটের অসুখ, বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ইত্যাদি কারণেও অরুচি সৃষ্টি হয়।
প্রতিকারের উপায়
কারণ খুঁজে বের করা : বাবা-মা হিসেবে সন্তান কী ধরনের খাবার খাচ্ছে এবং কোন ধরনের খাবার গ্রহণ করতে চাচ্ছে না– এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আপনার সন্তানের অরুচির কারণ সবার আগে খুঁজে বের করতে হবে।
খাবারের একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করা : শিশুদের জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শে একটি নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকা তৈরি করে নিতে হবে এবং রুটিন অনুযায়ী সন্তানকে সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত করতে হবে।
ঘরের খাবারে আগ্রহী করে তোলা : শিশুসন্তানের জন্য আলাদা খাবার তৈরি না করে কিংবা প্যাকেটজাত খাবার না দিয়ে নিজেদের জন্য তৈরি ঘরের খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহ তৈরি করা।
পুষ্টিগুণসম্পন্ন রঙিন খাবার পরিবেশন : প্রতি বেলার খাবার হতে হবে প্রধান পুষ্টি উপাদানসংবলিত একটি ব্যালান্সড মিল। খাবারের প্লেটটি যদি একটু রঙিন করে পরিবেশন করা যায়, অর্থাৎ রঙিন শাকসবজিসংবলিত করা যায়, শিশুর খাবার গ্রহণে আগ্রহ জন্মাবে।
অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করা : অনেক বাবা-মা সন্তানকে বারবার খেতে বলেন। এতে শিশু বিরক্ত হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করে শিশুকে সঠিক সময়ে খাবার দিতে হবে।
পুষ্টিবিদ মুনিয়া মৌরিন মুমুর মতে, খাবারে অরুচির সমাধান সঙ্গে সঙ্গেই হয় না। ধীরে ধীরে হয়। পরিমিত খাবার গ্রহণ এবং শরীরের দিকে যদি নজর দেওয়া হয় তাহলে ৮০ শতাংশ সময়ে এটি এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। অনেকেই খাবার ঠিকমতো চিবিয়ে খায় না। এ কারণে খাবার হজমে সমস্যা হতে পারে। খাবার গ্রহণের সময় একটু মনোযোগী হয়ে উঠলেই এ ধরনের সমস্যায় ভুগতে হবে না। হতাশ হওয়া চলবে না, বরং এ ধরনের অবস্থার সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে খাদ্যাভ্যাসে সঠিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। v