ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

‘আমার ভেতর একটা শিশু বাস করে’

‘আমার ভেতর একটা শিশু বাস করে’

মাহবুবা চৌধুরী - ছবি :: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য

শাহেরীন আরাফাত

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৫:৪৫

মাহবুবা চৌধুরী। সংবাদ পাঠক, উপস্থাপক, দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক ও প্রকাশক– এমন অনেক পরিচয় রয়েছে তাঁর। তবে এসব পরিচয়ের বাইরে তাঁর ভেতরে বাস করে এক শিশুতোষ হৃদয়। শিশুসাহিত্যে তিনি নান্দনিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাঁর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আলাপচারিতার ভিত্তিতে লিখেছেন শাহেরীন আরাফাত

মাহবুবা চৌধুরীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকার আরমানিটোলায়। শৈশব, কৈশোর আর তারুণ্যের পুরো সময়টাই কেটেছে সেখানে। বাড়ির পাশেই আনন্দময়ী গার্লস হাই স্কুলে পড়েছেন। পাশেই ছিল আরমানিটোলা মাঠ। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে মেতেছেন খেলায়। দুরন্ত শৈশবের কারণেই সম্ভবত মাহবুবা চৌধুরীর শিশু সাহিত্য বিশেষত্ব পেয়েছে। তবে তাঁর ছড়া রচনা অনেকটা সহজাত। ছোটবেলায় ছন্দ মিলিয়ে কথা বলতেন। গল্প শুনতে ভীষণ পছন্দ করতেন। এ অনন্য স্বভাব পরবর্তী সময়ে তাঁর প্রবণতা নির্ধারণ করে দেয়। পত্রিকায় প্রথম কবিতা প্রকাশ সম্পর্কে মাহবুবা চৌধুরী জানান, “তখন আমাদের বাসায় পাকিস্তান অবজারভার ও আজাদ পত্রিকা রাখা হতো। পত্রিকা পড়ার অভ্যাসটা গড়ে তুলেছিলেন বাবা। আজাদ পত্রিকায় শিশুদের একটি কলাম ছিল। সেখানে শিশুদের লেখা প্রকাশিত হতো, তা ছড়া লেখায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমার বয়স তখন ছয় বা সাত বছর এবং আমি ‘সিংহ মামার বিয়ে’ ছড়াটি লিখে আমার চাচাকে দেখাই। কবিতাটি পড়ে তিনি মুগ্ধ হলেন। কবি তালিম হোসেনের সঙ্গে চাচার বন্ধুত্ব ছিল, তাঁকে ছড়াটি দেখালে তিনিও প্রশংসা করেন। এরপর তিনি এটি প্রকাশের জন্য ‘পাকিস্তানি খবর’ নামে একটি পত্রিকায় পাঠান। ১৯৬৮ সালে আমার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। এমনকি আমি কয়েক দিন পর ১০ টাকা সম্মানী পেয়েছিলাম। চেকের মাধ্যমে ডাকযোগে তা পাঠানো হয়েছিল। ওই বয়সে এটি ছিল এক বড় অর্জন।”

এরপর কচি-কাঁচার আসর ও চাঁদের হাটের মতো বিখ্যাত শিশু সংগঠন মাহবুবাকে তাঁর কবিতা পাঠাতে অনুরোধ করেছিল এবং তাদের প্রকাশনার দায়িত্বে থাকা সম্পাদকরা তাঁকে ফোন করে খোঁজখবর নিতেন। এটি তাঁকে লিখতে আরও অনুপ্রাণিত করে।

১৯৬৯ সালে ছোটদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টেলিভিশনে তাঁর যাত্রা শুরু। ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হন। ততদিনে তাঁর শ’দুয়েক লেখা ছাপা হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও লেখালেখি থামেনি। মাহবুবা চেয়েছিলেন সাংবাদিকতায় পড়বেন, লেখালেখি করবেন। মা-বাবা সেটায় রাজি হননি। তাই অনার্সের শেষের দিকে বিয়ের প্রস্তাব আসতেই সাংবাদিকতার একজনকে পছন্দ করলেন। তিনি দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। বিয়ের পর মাহবুবা সুলতানা থেকে তাঁর নাম হলো মাহবুবা চৌধুরী। এ নামেই তিনি পরবর্তী সময়ে পরিচিতি পান।

১৯৮২ সালে বেতার এবং ১৯৮৪ সালে বিটিভিতে সংবাদ পাঠ শুরু করেন। এখনও সংবাদ পাঠের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সংবাদ পাঠের পাশাপাশি বিভিন্ন চ্যানেলে উপস্থাপনার দায়িত্বও পালন করছেন। তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে স্বামীর উদ্যোগে। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। ১৯৯৭ সালে সাপ্তাহিক মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করছেন।

তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় শিশুতোষ বই হলো ‘দ্যোতনা’ সিরিজ। এর ঘটনাগুলো দ্যোতনা নামে একটি ছোট ছেলে ও তার মামাকে ঘিরে আবর্তিত হয়। এ প্রসঙ্গে মাহবুবা চৌধুরী বলেন, ‘আসলে দ্যোতনা হলো আমার ছেলে। ওর মামা ওকে এই নামটি দিয়েছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে ছেলের প্রশ্ন, কর্মকাণ্ড আর কল্পনার সঙ্গে মিলিয়ে এ সিরিজটি করা।’

শিশুসাহিত্য লেখা প্রসঙ্গে মাহবুবা চৌধুরী বলেন, ‘আমি শিশুদের মনস্তত্ত্ব খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারি। কারণ, আমার ভেতরে একটা শিশু বাস করে। কখনও যদি বড়দের জন্য কিছু লিখতে যাই, তখনও ওই শিশুমনটা বেরিয়ে পড়ে।’

নারীদের সমাজে অগ্রসর ভূমিকায় উঠে আসা প্রসঙ্গে মাহবুবা চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারীকে অগ্রসর ভূমিকায় আসতে হলে পরিবারের সমর্থন ও সহযোগিতা অনস্বীকার্য। তার ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে প্রতিকূলতা অনেক বেশি। আমি জীবনে যেটুকু অর্জন করতে পেরেছি, তার পেছনে প্রথমদিকে আমার মা-বাবা, ভাইবোনদের অবদান রয়েছে। পরে আমার স্বামী ও ছেলের নিরঙ্কুশ সমর্থন ছিল ও আছে। নারীদের এগিয়ে আসার পেছনে যেমন পুরুষের ভূমিকা থাকে; তেমনি পুরুষের পেছনেও নারীর ভূমিকা থাকে।’

আরও পড়ুন

×