পাবলিক টয়লেট কতটুকু নারীবান্ধব

জায়গার অভাব ঢাকা শহরে নারীবান্ধব পাবলিক টয়লেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ
ফারহানা আক্তার
প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
গত পাঁচ বছরে দেখা গেছে, জনবহুল স্থান, কাঁচাবাজার ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পাবলিক টয়লেট হয়েছে। তা কতটুকু নারীবান্ধব করা সম্ভব হয়েছে, এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। বিশেষজ্ঞরা মূলত জায়গাস্বল্পতা ও মানুষের সচেতনতাকে পাবলিক টয়লেট নারীবান্ধব না হওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এটি নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অর্থনৈতিক কাজে দীর্ঘ সময় নারীর বাইরের কাজে যুক্ত থাকার ক্ষেত্রেও পাবলিক টয়লেটের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ ক্ষেত্রে পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে তিনটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে– টয়লেট নিরাপদ কিনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কিনা, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করে কিনা।
একটি ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানের আইনি সহায়ক কর্মকর্তা হাসিনা খানম জানান, কাজের প্রয়োজনে প্রায়ই তাঁকে বাইরে যেতে হয়। বিশেষ করে যখন শরীরচর্চার জন্য বাইরে যান, তখন পার্কের টয়লেটগুলো যথেষ্ট নারীবান্ধব মনে হয়, সেখানে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যেমন– টিস্যু, স্যান্ডেল, সাবান ইত্যাদি। কিন্তু পার্ক ছাড়া জনবহুল জায়গায় পাবলিক টয়লেট খুব কমই দেখা যায়। একটি টয়লেট মোহাম্মদপুরে, আরেকটি সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে। ধানমন্ডি বা আশপাশে মাঝেমধ্যে মিনি টয়লেট দেখা যায়, তাও সব সময় নয়। আবার এসব পাবলিক টয়লেট নারীবান্ধবও নয়।
ভূমিজ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা স্থাপত্যশিল্পী ফারহানা রশীদ দীর্ঘদিন পাবলিক টয়লেট নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত। তিনি মনে করেন, ‘পাবলিক টয়লেট সব দেশেই আছে, কিন্তু আমাদের দেশে নারীবান্ধব টয়লেট ঠিক তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। তবে আমরা চেষ্টা করছি নারীবান্ধব টয়লেট নির্মাণের। ২০১৭ সালে প্রথম যখন কাজ শুরু করেছি, তখন সিটি করপোরেশন এবং আশপাশের মানুষজন পাবলিক টয়লেটের নাম শুনলেই ভাবতেন দুর্গন্ধ, ময়লার ভাগাড়। এখন এমন সমালোচনার সংখ্যা খুবই কম।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করতে গেলে মাথায় রাখতে হয় সেখানের মানুষ বেশির ভাগ কোন শ্রেণির, তাদের আর্থিক অবস্থা কেমন, জায়গাটা নিরাপদ কিনা। স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নির্মাণে আমরা যথেষ্ট সতর্ক থাকি, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের কথা মাথায় রাখি।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার এইডের গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সিটি করপোরেশনের পরিচালনায় ঢাকায় পাবলিক টয়লেট রয়েছে ১৩৮টি, যা সিটি করপোরেশনের নিজ অর্থায়নে পরিচালিত। এ ছাড়া তাদের নিজস্ব অর্থায়নে আরও ১০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণাধীন। ঢাকা শহরে প্রায় দেড় কোটি মানুষ বাস করে। সে তুলনায় এ সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। নারীবান্ধব টয়লেট নির্মাণে সবচেয়ে বেশি দরকার জায়গা। ঢাকায় খালি জায়গার পরিমাণ প্রতিনিয়ত কমছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পাবলিক টয়লেটের রক্ষণাবেক্ষণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে পাবলিক টয়লেটের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণে। যেমন– টিস্যু ব্যবহার করতে দিলে অনেকে টিস্যু বক্সটাই নিয়ে যায়, আবার স্যান্ডেল নিয়ে যায়। তাই পাবলিক টয়লেট দেখভাল করার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
একটি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, ‘নারীবান্ধব পাবলিক টয়লেট নির্মাণে প্রথম যে বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সেটি হলো নারীর নিরাপত্তা। একজন নারী যদি ভেতরে প্রবেশ করেন, আর টয়লেটের দরজার সিটকিনি নষ্ট থাকে, তাহলে তিনি কতটুকু নিরাপদ থাকবেন? এ ছাড়া যে নারীদের কর্মসূত্রে প্রায়ই বাইরে যেতে হয়, টয়লেটে প্রবেশ করে যদি দেখেন কাঁধের ব্যাগটা রাখার জায়গা নেই, সেটি তো নারীবান্ধব হলো না। তাই নারীদের নিরাপত্তা ও সুবিধার কথা মাথায় রেখেই পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা উচিত।’
- বিষয় :
- পাবলিক টয়লেট