ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

জেনে রাখুন

অফশোর ব্যাংকিং: কারা আমানত রাখতে পারবেন, মুনাফা কেমন

অফশোর ব্যাংকিং: কারা আমানত  রাখতে পারবেন, মুনাফা কেমন

ছবি: সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪ | ০০:০৫ | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ | ১০:১১

বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থেকে উত্তরণে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে চাইছে সরকার। অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান উৎসাহিত করতে একের পর এক সুবিধা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে আলাদা নীতিমালার আলোকে অফশোর ব্যাংকিং পরিচালিত হলেও সম্প্রতি আইন করা হয়েছে। 

অফশোর ব্যাংকিং বলতে দেশের বাইরে থেকে তহবিল সংগ্রহ করে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের মাঝে বিতরণের জন্য গঠিত আলাদা ইউনিটের কার্যক্রমকে বোঝায়। এ ধরনের ইউনিটকে সংক্ষেপে বলা হয় ওবিইউ। আর আমরা দেশের ভেতরে বিভিন্ন শাখা থেকে যে ঋণ নিই, আমানত রাখি বা অন্য বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা নিই, তাকে বলা হয় ডমেস্টিক ব্যাংকিং ইউনিট (ডিবিইউ)। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আলাদা লাইসেন্স নিয়ে একই শাখায় অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে পারে। 

অফশোর ব্যাংকিং নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। জেনে নেওয়া যাক, এ ধরনের ব্যাংকিংয়ে কী কী সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যে কোনো বাংলাদেশি, বিদেশি নাগরিক, দেশ-বিদেশে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে অনুমোদিত ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে হিসাব খুলতে পারবে। মার্কিন ডলার, ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানিজ ইয়েন, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, সুইস ফ্রাঁ, চায়নিজ ইউয়ান ও সিঙ্গাপুর ডলারে লেনদেন করা যাবে। বিদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনা যে কোনো পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা এই হিসাবে জমা করা যাবে। 

আমানতের ওপর মুদ্রাভেদে রেফারেন্স রেটের অতিরিক্ত ১ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ বা মুনাফা দেওয়া যাবে। এ বিবেচনায় ডলারের বিপরীতে বর্তমানে সুদের হার ৮ শতাংশের বেশি। যেমন– ডলার আমানতের  ক্ষেত্রে বেঞ্চমার্ক রেট হচ্ছে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) এবং পাউন্ডের ক্ষেত্রে স্টার্লিং ওভারনাইট ইনডেক্স অ্যাভারেজ (এসওএনআইএ) হলো বেঞ্চমার্ক রেট।

আইনে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিংয়ে জমানো অর্থের বিপরীতে যে সুদ আয় হবে, সেখানে কোনো কর দিতে হবে না। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এই আমানতের বিপরীতে বিধিবদ্ধ নগদ জমা বা সিআরআর রাখার বাধ্যবাধকতা নেই। এতে করে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ কমবে, তাতে করে বেশি সুদ দিতে পারবে ব্যাংক। সব মিলিয়ে গ্রাহক ও ব্যাংক এ ধরনের তহবিলে উৎসাহিত হয়ে ডলার প্রবাহ বাড়াবে।

প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশিদের জন্য বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রায় প্রধানত দুই ধরনের অর্থাৎ চলতি অ্যাকাউন্ট ও বিভিন্ন মেয়াদের ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট চালু রয়েছে। চলতি অ্যাকাউন্টের মধ্যে রয়েছে ফরেন কারেন্সি ও ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং। আর বিভিন্ন মেয়াদের ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট রয়েছে। 

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, অফশোর ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী, যে কোনো অনিবাসী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই এ সুবিধা নিতে পারেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নন, এ রকম বিদেশি নাগরিকরাও অ্যাকাউন্ট খুলছেন। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি লোক বিদেশে বসবাস করেন। তাদের একটি অংশ অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে আমানত রাখলে কয়েক বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা সম্ভব। প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও যে কোনো অনিবাসী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানও এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। 

অফশোর ব্যাংকিং প্রডাক্টের মাধ্যমে আমানতের বিপরীতে ভালো মুনাফা ছাড়াও আরও কিছু সুবিধা রয়েছে। একজন গ্রাহক পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে বসে সহজে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

অফশোর ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশে বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য আরএফসিডি নামে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব পরিচালনার সুযোগ আছে। যে কোনো বাংলাদেশি প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণ শেষে আরএফসিডি হিসাবে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত জমা রাখতে পারেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এখানেও মুনাফা ও সুযোগ-সুবিধার বাড়িয়েছে। 

অফশোর ব্যাংকিং আইনে বলা হয়েছে, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কের শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আমানত গ্রহণ করতে পারবে। পাশাপাশি তাদের স্বল্পমেয়াদি ঋণ ও অগ্রিম বা বিনিয়োগ, ঋণপত্র ও গ্যারান্টি সুবিধা প্রদান, বিল ডিসকাউন্টিং, বিল নেগোশিয়েটিং এবং অন্যান্য বৈদেশিক বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট বহিঃলেনদেন সেবা দিতে পারবে। অনিবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আমানত ও ঋণ গ্রহণ করতে পারবে।

অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট তপশিলি ব্যাংক পর্ষদের অনুমোদিত নীতিমালা থাকতে হবে। তপশিলি ব্যাংকের অফশোর কার্যক্রমের জন্য পৃথক হিসাবপত্র সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদনে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিট থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে তহবিল স্থানান্তর করা যাবে।

আরও পড়ুন

×