নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নবিষয়ক সংলাপ

ছবি: সমকাল
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪ | ০১:৪২
রাশেদ খান মেনন, এমপি
বর্তমানে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নারীনীতি প্রণয়ন করেছিলেন, তার বাস্তবায়ন এখনও দেখা যায় না। কারণ মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী শক্তিগুলো যখন এর বিরুদ্ধে নেমেছে, তখন সরকারের পিছু হটার প্রবণতা দেখা গেছে। এটাও সত্য, সরকারি-বেসরকারি চাকরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী বহুদূর এগিয়ে গেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি গ্রহণ করতে পেরেছে বলে আমার মনে হয় না। ২০২০ সালের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কমিটিগুলোয় ৩৩ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিল। সেটি বাস্তবায়নে আমরা কতটুকু অগ্রসর হয়েছি? আমি আমার দলে এ বিষয়টি করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি। তবে নারীকেও এ বিষয়ে এগিয়ে আসার দরকার রয়েছে।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমপি
নারীকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন করতে হলে ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্যদের কীভাবে ক্ষমতায়িত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন। বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদেরও কতটুকু ক্ষমতা আছে সে বিষয়েও আলোচনা করা দরকার। তাদের কীভাবে ক্ষমতা দেওয়া যাবে সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। এ বিষয়ে নারীরও এগিয়ে আসতে হবে। কেননা সেভাবে নারী রাজনীতিতে আসছেন না। কিছু নারী আসছেন। যেভাবে আসা উচিত, সেভাবে আসতে পারছেন না বিভিন্ন সামাজিক কারণে। সেই কারণগুলো নিয়েও আলাপ-আলোচনা করা দরকার আছে। একইসঙ্গে সে কারণগুলোকে দূর করতে হবে। এ ছাড়া মানসিকতারও উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এমপি
আমরা চাই না যে, আমাদের শিশুদের সঙ্গে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ হোক। আমরা চাই তারা দেশের ভবিষ্যৎ হিসেবে বেড়ে উঠুক। সেভাবেই আমাদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে তৈরি হতে হবে। বর্তমানে নারী অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু তাদের আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। কেননা, আমাদের জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি নারী।
রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে তাদের স্থান না থাকলে, নীতিমালা প্রণয়নে ও দেশ গঠনে মূলধারার রাজনীতিতে তাদের জায়গা অনিশ্চিত হলে, দেশ পিছিয়ে পড়বে। তাই প্রতিটি রাজনৈতিক দলে নারীর উপস্থিতি বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে দলগুলোর নেতাদের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন জরুরি। ধর্মের নামে নারীকে পিছিয়ে রাখার একটা পরোক্ষ প্রচেষ্টা চালানো হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি বিরোধিতা করা হয়। সরাসরি নারীকে গৃহবন্দি করার অপচেষ্টা চলে। দেশের অনেক রাজনৈতিক দলের আদর্শই হলো নারীকে পিছিয়ে রাখা।
নজরুল ইসলাম খান
এটা সত্য, আমাদের কমিটিগুলোয় ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব আমরা এখনও নিশ্চিত করতে পারিনি। উল্লেখযোগ্য কোনো রাজনৈতিক দলই পারেনি। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে বলতে পারি, আমরা গত কাউন্সিলেই আমাদের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের দু’জন সাংগঠনিক সম্পাদক নারীর মধ্য থেকে এসেছেন। আরও বিভিন্ন পদে আমরা তাদের আনার চেষ্টা করছি। আমরা আমাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও সংগঠনকে নির্দেশ দিয়েছি নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য। নারী নেতৃত্বে যোগ্যতা বাড়ানোর জন্য আমরা দু’জন প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক করেছি। এই পদে একজন সাবেক নারী সংসদ সদস্যকে নির্বাচিত করেছি; যাতে করে নারীকে সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও যোগ্য করে অন্যান্য পদে দেওয়া যায়। আশা করছি, আগামী কাউন্সিলে আমরা আমাদের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব আরও বাড়াতে সক্ষম হবো।
শিরীন আখতার
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে নারীরা অনেক সুযোগ পেয়েছেন। এ সুযোগগুলোকে নারীকেই কাজে লাগাতে হবে। নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে। নারীর ঘরে-বাইরে যেসব কষ্ট ও যন্ত্রণা রয়েছে, তার বিরুদ্ধে নারীকেই লড়াই করতে হবে। এর জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি সংগঠিত হওয়া। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমার অনুরোধ, যেসব নারী দলের জন্য কাজ করছেন, মিছিলের সামনে যারা হাঁটছেন, তাদের যেন ঊর্ধ্বতন নেতারা চিনে রাখেন। তাদের সঙ্গে কথা বলুন। তারা যখন দলীয় কার্যালয়ে যাবেন, তখন যেন তারা খুশি মনেই বের হতে পারেন। তারা যেন বাড়ি গিয়ে গর্ব করে বলতে পারেন, তারা দলীয় কার্যালয়ে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। কারণ নারী যখন বাইরে বের হন, তখন প্রতি মুহূর্তেই তারা নানা ধরনের সংকট মোকাবিলা করেন। তারা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। এ কারণে নারীকে সচেতন হতে হবে, সংগঠিত হতে হবে।
অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম
নারীরা তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছেন। তাদের চলার পথে কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতাগুলো রয়েই যাচ্ছে। তবুও নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। এর জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। তিনিই প্রথম নারীনীতি প্রণয়ন করেন। এতে তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসেও আমরা দেখছি, কেন জানি পুরুষরা এখনও নারীকে মেনে নিতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে টাকা, ক্ষমতা এবং ধর্ম একটা ভূমিকা পালন করছে। রাজনীতি সবখানেই আছে। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও রাজনীতি রয়েছে। এ কারণেই নারীকে পারিবারিকভাবে নানা ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ধর্মেরও অপব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
জাকিয়া কে হাসান
আমরা এক একজন নারী হচ্ছি এক একটা মশাল। রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে না পারলে আমরা ক্ষমতায়িত হতে পারব না। নারীর ক্ষমতায়ন আমাদের মূল্যবোধের প্রভাব বিস্তার করে। আমাদের মধ্যে থাকতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ। আমরা শক্তির আধার, আমাদের শক্তি হচ্ছে আমাদের ভোট বা ভোটাধিকার। সমতার সঙ্গে দক্ষতা, অধিকার আরও অনেক কিছুর সম্পর্ক আছে। আমরা উন্নয়নের সূচকে অনেক দূর এগিয়েছি, বিশ্বে ৫৯তম অবস্থানে আছি জেন্ডার সমতায়। দেশ নারীর ক্ষমতায় এগিয়ে যাচ্ছে, রাজনীতিতে নারীর অবস্থান আরও দৃঢ় হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
ফাহমিদা বেগম মুন্নী
স্থানীয় সরকারে নারী আর শুধু সংরক্ষিত আসনে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, তারা সাধারণ আসনেও নির্বাচন করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে তাদের সামনে নানা বাধা কাজ করছে, যা দূর করতে হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের নির্দেশনা অনুসারে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে তাদের বিভিন্ন কমিটিতে ন্যূনতম ৩৩% নারীর অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে।
জেসমিন সুলতানা পারু সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অধিবেশন সমাপ্ত করেন।
দ্বিতীয় অধিবেশনের সম্মানিত অতিথি ও আলোচক
রাশেদ খান মেনন, এমপি
সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমপি
কো-চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এমপি
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
নজরুল ইসলাম খান
জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
শিরীন আখতার
সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)
অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম
উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জাকিয়া কে হাসান
নির্বাহী পরিচালক, দীপ্ত ফাউন্ডেশন
জেসমিন সুলতানা পারু
সভাপতি
বিভাগীয় অপরাজিতা নেটওয়ার্ক, চট্টগ্রাম
ফাহমিদা বেগম মুন্নী
ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, সাপলেজা ইউনিয়ন, মঠবাড়িয়া, বরিশাল
- বিষয় :
- গোলটেবিল