প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে প্রয়োজন কার্যকর কৌশল ও অংশীদারিত্ব

ছবি - সমকাল
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩:০৬ | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩:৫৬
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে একক ব্যবহারযোগ্য বা সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক (এসইউপি) পণ্য পর্যায়ক্রমে নিষিদ্ধকরণের প্রক্রিয়া চলছে। সামগ্রিকভাবে দেশে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় উৎপাদকের বর্ধিত দায়িত্ব বা এক্সটেন্ডেড প্রোডিউসার রেসপন্সিবিলিটি (ইপিআর) নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, যত্রতত্রভাবে এসইউপি নিষিদ্ধকরণের ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ শিল্প, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা প্রকট। “পলিসি ফর প্রোগ্রেসঃ বিল্ডিং এ সাস্টেইনেবল বাংলাদেশ” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। গত ২৮ নভেম্বরে রাজধানীর গুলশানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ’ ও সমকাল।
ড. এম মাসরুর রিয়াজ
টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে ২০২১ সালে সরকার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ঘোষণা করে। পরবর্তীতে উৎপাদকের বর্ধিত দায়িত্ব বা এক্সটেন্ডেড প্রোডিউসার রেসপনসিবিলিটি (ইপিআর) গাইডলাইন প্রস্তাব করা হয়। গত জুনে বিগত সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে পর্যায়ক্রমে বাতিলের জন্য ১৭টি এসইউপির একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে এসব নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর বাস্তবায়নে কার্যকর কৌশল ও যথাযথ অংশীদারিত্বের প্রয়োজন অপরিসীম।
শিল্পায়নের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এজন্য প্রয়োজন গ্রিন গ্রোথ বা সবুজ প্রবৃদ্ধি। এটি এমন একটি টেকসই উপায় যা জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জকে অর্থনৈতিক সুযোগে পরিণত করতে পারে। সদ্য সমাপ্ত কপ২৯ সম্মেলনেও এসব ব্যাপারে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বেসরকারি খাত এ বিনিয়োগের সুযোগ নিতে পারলে দেশ উপকৃত হবে। এক্ষেত্রে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্যক্রমকে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে রূপান্তর করতে হবে।
বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত ইপিআর ও এসইউপি বিষয়ক নীতিমালার গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলছে। পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে এসব নীতিমালা প্রস্তাব করা হলেও এর বাস্তবায়নে কার্যকর কৌশল ও যথাযথ অংশীদারিত্বের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অথচ জলবায়ুগত ও অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে সবুজ বিনিয়োগের এ সম্ভাবনাকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ আমাদের নেই।
ফরিদ উদ্দিন
সরকারি সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা থাকা উচিত। তা না হলে বেসরকারি খাত ভোগান্তিতে পড়বে। বেসরকারি খাতই আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তাই রেগুলেশন পলিসি দিয়ে প্রাইভেট সেক্টরকে সাপোর্ট করা সরকারের দায়িত্ব। মিডিয়াও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পরিবেশের ওপর প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে চিন্তা করতেই হবে। পাশাপাশি র্যাডিক্যাল সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থনীতি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাই, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা ও যথাযথ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা না করে হঠাৎ এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত নয়। এতে সরকারের রাজস্ব ও বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
তাছাড়া আমরা স্রোতের বিপরীতে যেতে পারবো না। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির মতো উন্নত দেশে মাথাপিছু প্লাস্টিক উৎপাদন আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। তাই বলে তারা কিন্তু প্লাস্টিককে নিষিদ্ধ করে দেয়নি। বরং সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে। প্লাস্টিককে বাদ দিয়ে চলার কোনো উপায় আমাদের নেই। তাই অংশীজনদের সঙ্গে সুষ্ঠ আলোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সদস্য হিসেবে আমি এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। দেশের জনগণকেও এ ব্যাপারে সচেতন করে তোলা জরুরি।
মোহসিনা ইয়াসমিন
যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য খাতে বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কী প্রভাব পড়ছে, তা বিবেচনা করতে হবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় একটা নিয়ম তৈরি করছে। কিন্তু এর প্রভাব অর্থ, শিল্প বা বাণিজ্যে কীভাবে পড়ছে, তা বিবেচনা করা হচ্ছে না। বিডায় কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সরকারি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রকট। এতে নতুন কোনো বৈদেশিক বিনিয়োগ এলে সে ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে অযথা অনেক দেরি হয়ে যায়। এভাবে অনেক বিনিয়োগ হাতছাড়াও হয়। দেশের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য এটি ক্ষতিকর।
তাই প্লাস্টিককে নিষিদ্ধ করা সমাধান নয়। তাছাড়া উপযুক্ত বিকল্প না থাকায় জোর করে দেশের মানুষকে দিয়ে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা সম্ভব হবে না। এদেশে একটি কারখানা খুলতে ৪০টির মতো লাইসেন্স নিতে হয়। হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ করলে একজন ব্যবসায়ী রাতারাতি আরেকটি কারখানা খুলতে পারবেন না।
শামীম আহমেদ
প্লাস্টিককে টেকসই পণ্য হিসেবে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্যই মূলত প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে। বর্তমানে ধাতু, স্টিল, গ্যাস, কাঠ, গ্লাস ও কাগজের মতো উপকরণের জায়গা দখল করেছে প্লাস্টিক। এতে পরিবেশের ওপর চাপ অনেক কমেছে। আমেরিকান কেমিস্ট্রি কাউন্সিল বলছে, যুক্তরাষ্ট্র নির্মাণ শিল্পে প্লাস্টিক ইনসুলেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বছরে ৪৬৭ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন বিটিইউ (ব্রিটিশ থারমাল ইউনিট) শক্তি সাশ্রয় করছে। এ প্রযুক্তি বিল্ডিংয়ে তাপ ও ঠাণ্ডা নিয়ন্ত্রণ করে। এতে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়, যা প্রকারান্তরে কার্বন নিঃসরণ কমায়। অটোমোবাইল শিল্পে প্লাস্টিকের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। গাড়ির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ যন্ত্রাংশ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। এতে গাড়ির ওজন কমিয়ে জ্বালানি সাশ্রয় এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে। প্লাস্টিক ব্যাবহার করে গাড়ীর ওজন ১০% কমালে জ্বালানি অর্থনীতির ৬ থেকে ৮% উন্নতি করা যায়।
খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা না করে এসএউপির একটা তালিকা তৈরি করা হলো। অথচ দেশের অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে- তা খতিয়ে দেখা হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এর কারণে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেবে। কারণ এই ১৭টি পণ্যের মধ্যে এমন কিছু পণ্য আছে যার সঙ্গে বিভিন্ন খাতের প্রায় ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। এসব খাত থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। এসব ব্যাপার বিবেচনায় আনতে হবে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বদা দেশের আইন অনুযায়ী তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে অবাস্তব কোনো আইন প্রণীত হলে তার ফলস্বরূপ যদি তাদের ব্যবসা ক্ষতির সম্মুখীন হয়, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত করতে হতে পারে। কারণ তারা কখনোই আইন লঙ্ঘন করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত করতে পারেনা।
দেবব্রত রায় চৌধুরী
এসইউপির ব্যাপারে আমরা বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছি। পর্যায়ক্রমে বাতিল করার জন্য এসইউপির যে তালিকা করা হয়েছে তাতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংখ্যক পণ্য যুক্ত করেছে—মোট ১৭টি। ভারতের এসইউপি তালিকায় রয়েছে ১৩টি, শ্রীলঙ্কায় ৪টি, ফিলিপাইনে ৮টি, ভিয়েতনামে ৫টি এবং ফ্রান্সের মত উন্নত দেশে মাত্র ৫টি প্লাস্টিক পণ্য। যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকাংশে আমাদের চেয়ে উন্নত, তারাও এত সংখ্যক পণ্য এসইউপি তালিকায় রাখেনি। তাই প্রশ্ন আসে, আমরা যে কঠোর প্রবিধান আনতে যাচ্ছি, তা আসলে কতটুকু বাস্তবসম্মত এবং প্রণয়নযোগ্য?
যথাযথ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত সময় না দিয়েই তাড়াহুড়া করে যদি এসব পণ্য নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে আমাদেরকে ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। কারণ, এখনও এসব পণ্যের উপযুক্ত বিকল্প নেই। এ বাস্তবতা বিবেচনা করে বাংলাদেশে এসইউপির একটি বাস্তবসম্মত সংজ্ঞা ও নীতিমালা প্রণয়নের রূপরেখা নির্ধারণ করা উচিত।
একটি নীতিমালা তখনই সফল হয়, যখন তার সুষ্ঠ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা যায়। এসইউপি সংক্রান্ত নিয়ম শুধু বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়। বরং সব প্রতিষ্ঠানের জন্য একই নিয়ম কার্যকর করা উচিত। বাস্তবে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো নতুন নিয়ম এলে তা কেবল বহুজাতিক কোম্পানির জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু অন্যান্যরা নিয়ম অমান্য করলেও সচরাচর তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয় না। এটি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। স্বাভাবিকভাবেই এ প্রবণতা বিদেশি বিনিয়োগের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আরাফাত হুদা জায়গীরদার
ইপিআর এমন একটি উদ্যোগ, যা যেকোনো দায়িত্বশীল কোম্পানি স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করবে। একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরাও পরিবেশের স্বার্থে ইপিআরের কার্যকর বাস্তবায়ন চাই। সার্কুলার ইকোনমি গড়ে তুলতে পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। তবে নীতিগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন।
আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, ইপিআর নীতিমালা প্রস্তুত করার সময় খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে কয়েকদফা আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এই নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে প্রস্তাবিত খসড়ায় ইন্ডাস্ট্রির বেশকিছু মতামতের প্রতিফলনও দেখা যায়।
তবে উদ্বেগের বিষয়, পর্যায়ক্রমে এসইউপি নিষিদ্ধকরণের প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ করার আগে খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে কোনো প্রকার আলোচনা করা হয়নি। এ তালিকাটি খেয়াল করলে দেখা যাচ্ছে, সমগ্র দেশের অর্থনীতি এতে প্রভাবিত হবে। আমরা আশংকা করছি যে, খাত সংশ্লিষ্টদের মতামত না নিয়ে এরকম গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করলে বেশিরভাগ শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ ধরণের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় থাকা খুবই জরুরি। যতগুলো এসইউপি পণ্য নিষিদ্ধের কথা উঠছে, তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ভূমিকা কী হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। যে পণ্যগুলো আমরা পর্যায়ক্রমে নিষিদ্ধ করতে চাই তার আদৌ কোনো বিকল্প আছে কিনা এবং এর রূপরেখা কেমন হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এছাড়া, এটি বাস্তবায়নের ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি কী- তাও পরিষ্কার থাকা দরকার। কারণ, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেবল পরিবেশের বিষয় নয়, এর সঙ্গে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত।
মো. জাহিদ উল্লাহ
প্লাস্টিক নয়, আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হলো দূষণ। প্লাস্টিককে কেবল একটা সস্তা এবং পরিবেশ দূষণকারী পণ্য হিসেবে দেখলে হবে না। বর্তমান সময়ে প্লাস্টিক একটি উচ্চমূল্য সম্পন্ন পণ্যে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য উন্নত দেশে দেখা যায়, সেখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে উদ্ভাবনমূলক কাজ হচ্ছে। প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, গাড়ি, বিমান ইত্যাদির উৎপাদনে। তবে প্লাস্টিকের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হঠাৎ করে আমরা কয়েকটি নির্দিষ্ট এসইউপি পর্যারক্রমে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। উপযুক্ত বিকল্প ছাড়া প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার বন্ধ করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। যদি নিষেধাজ্ঞা আনতেই হয়, কোনো প্রকার নিয়মনীতি হুট করে শিল্পের ওপর চাপিয়ে না দিয়ে বরং বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ও প্রণয়নযোগ্য নীতিমালা গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে ভোক্তা সচেতনতা বৃদ্ধি ও গবেষণার মাধ্যমে এমন একটা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে যাতে শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ পরিবারের জীবনযাত্রা ব্যাহত না হয়। এর পাশাপাশি সরকারের সাহায্য ও সহযোগিতা থাকলে পর্যায়ক্রমে এসইউপির ব্যবহার থেকে টেকসই বিকল্পের দিকে যাওয়া সকলের জন্য সহনশীল করে তুলবে।
সৈয়দ তাসনিম মাহমুদ
শ্রীলঙ্কার সংকটের একটি বড় কারণ ছিল তাদের রাসায়নিক সার ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত। যদি আমরা হঠাৎ এসইউপির ব্যবহার বন্ধ করতে চাই, তবে হয় বিশাল কর্মসংস্থান সংকট সৃষ্টি হবে, নয়তো কালোবাজার গড়ে উঠবে। বাংলাদেশে একজন মানুষ বার্ষিক গড়ে পাঁচ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করেন। জার্মানিতে এই সংখ্যা ৯০ কেজি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ কেজিরও বেশি। অথচ বুড়িগঙ্গা নদীতে প্লাস্টিক বর্জ্যের যে বিশাল সমস্যা, তা জার্মানির কোনো নদীতে নেই। কারণ, মিউনিসিপাল কর্তৃপক্ষ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি সঠিকভাবে করে। জার্মানিতে ৪৫ ভাগ প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে এই হার মাত্র ২৭ শতাংশ যার অনেকটাই অনানুষ্ঠানিক খাতের মাধ্যমে হয়।
আমাদের দেশে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং এর অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে। ভারত গত ২০ বছর ধরে রাস্তা তৈরিতে প্লাস্টিক ব্যবহার করছে। আমরাও দুই বছর আগে এলজিইডি-এর মাধ্যমে একই কাজ করেছি এবং ভবিষ্যতে এরকম উদ্ভাবনমূলক উদ্যোগ নিয়ে আরও কাজ করার সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি।
মমশাদ আলী খান
এ ব্যাপারে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। এসইউপির সংজ্ঞার স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন এবং পর্যায়ক্রমে নিষিদ্ধকরণ করার ব্যাপারে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। আমরা ভার্জিন প্লাস্টিক রেজিন তৈরি বোতলে ব্যবহার করি। যেহেতু আমাদের কার্যক্রম পানীয় শিল্পকে ঘিরে তাই, ফুড গ্রেড মান নিশ্চিত করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। এসব বোতল উন্নতমানের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি, যা রিসাইকেল ও রিইউজ করা যায়। আর যা রিসাইকেল ও রিইউজ করা যায়, তা এসইউপির তালিকার অন্তর্ভূক্ত করাই যুক্তিসঙ্গত নয়।
কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর জন্য মূলত সারা বিশ্বের শিল্পগুলো প্লাস্টিকের দিকে ঝুঁকছে। প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাঁচের বোতল ব্যবহারের পরামর্শ আপাতদৃষ্টে পরিবেশবান্ধব বলে মনে হতে পারে। কিন্তু কাঁচের বোতল তৈরির প্রতিটি ধাপে—উৎপাদন, পরিবহন ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ—অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হয়, যা পরিবেশের ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করে। কাঁচের বোতল ব্যবহারের ফলে পুরো সরবরাহ চেইনে ব্যয় বহুগুণে বৃদ্ধি পায়, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ ভোক্তাদের ওপর বর্তায়। তাছাড়া, এ সিদ্ধান্তের প্রভাব আমাদের ব্যবসা বা কর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, প্রায় ১৭ লাখ খুচরো ব্যবসায়ী ছাড়াও অসংখ্য পরোক্ষ কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
মুসতাফাইন মুনির
পোশাক খাতে যে পলিয়েস্টার ব্যবহৃত হয়, বাংলাদেশের বাজারে তা রিসাইকেল করার কোনো পদ্ধতি এখনও চালু নেই। এ বিষয়টির দিকে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ টেকসই উন্নয়নের জন্য পলিয়েস্টার রিসাইকেল করাও গুরুত্বপূর্ণ।
আমি এখানে বিদেশি বিনিয়োগের বৃদ্ধি এবং উন্নত দেশের মত রিসাইক্লিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করতে এসেছি। বাংলাদেশে এটার অনেক সুযোগ রয়েছে, তবে তা হতে হবে বাস্তবসম্মত ও টেকশই। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়নকে বিবেচনায় নিয়ে ইপিআর নিয়ে পুনরায় চিন্তা করা হোক।
মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান
আমাদের যে পরিমাণ বর্জ্য ল্যান্ডফিলে জমা হয়, তা খুবই সামান্য। বেশিরভাগই কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে নেই। আজ থেকে ১০ বছর আগেও অনেক প্লাস্টিক বোতল রাস্তায় পড়ে থাকতো। তবে এখন এর বেশিরিভাগই রিসাইকেল করা হচ্ছে। বোতল ছাড়া অনেক রকম এসইউপি আছে, যা আমাদের দেশে কোনোভাবেই রিসাইকেল করা হচ্ছে না। ২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, ৪৭ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল করা হতো। কিন্তু এখন এটি কমে ৩০ শতাংশে নেমেছে বলে ধারণা করা হয়। এর অর্থ হলো একদিকে আমাদের ভোগ বেড়েছে, অন্যদিকে রিসাইক্লিংয়ের পরিমাণ কমে গেছে। ইপিআরের জন্য একটা বাস্তবসম্মত প্রস্তুতিমূলক সময় রাখা উচিত এবং এই সময়সীমার ভেতরে প্রয়োজনীয় কাঠামো উন্নয়ন ও ভোক্তাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করায় সরকারের সহযোগিতা দরকার।
নাভিদ জামান
রিসাইক্লিং বা বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের দিক থেকে বিশ্বে বর্তমানে জার্মানি অনেক এগিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে রাস্তায় ময়লা ফেলা যেন সাধারণ একটি ঘটনা। এটি মূলত শিক্ষাগত পার্থক্যের কারণে। ছোটবেলা থেকেই রিসাইক্লিংয়ের গুরুত্ব শিখতে হবে। পাশাপাশি মধ্যবয়সী মানুষ যারা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন, তাদেরকে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। সরকারের সমর্থনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রিসাইক্লিং জোন তৈরি করা উচিত, যেখানে বিভিন্ন সেক্টরের সাথে কাজ করা যাবে। এ বিষয়ে গবেষণার পাশাপাশি প্রণোদনার বিষয়টিও জরুরি। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা, যারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরাসরি জড়িত, প্রণোদনার মাধ্যমে তাদের উৎসাহ দেওয়া উচিত।
মো: মাসুদ রুমী
উন্নত দেশে বর্জ্য ঠিকভাবে ডাস্টবিনে না ফেললে বড় অঙ্কের জরিমানা গুণতে হয়। এশিয়ার কিছু দেশে, যেমন থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরেও এমন নিয়ম আছে। অন্যান্য বিষয়ের মতো প্লাস্টিক নিয়েও আমাদের সঠিক নিয়মনীতি প্রয়োগের অবস্থা খুবই খারাপ। একই সঙ্গে আমাদের কাছে যথাযথ বিকল্পও নেই। প্রয়োগ, সচেতনতা ও বিকল্প— এই তিনটি বিষয়ের সঠিক সমন্বয় না থাকার কারণে আমরা প্লাস্টিকের টেকসই ব্যবহার কার্যকর করতে পারছি না।
জাকির হোসেন
প্লাস্টিক শিল্প সমিতিরই শুধুমাত্র প্লাস্টিক নিয়ে এজেন্ডা থাকা উচিত নয়। এখানে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ—যারাই প্লাস্টিক ব্যবহার করছে, তাদেরও সংশ্লিষ্টতা থাকা দরকার। তাদের চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা সঠিকভাবে যুক্ত করতে হবে। যদি এসইউপি নিয়ে সমস্যাটা সামগ্রিকভাবে আপনার ইন্ডাস্ট্রি বা এক্সপোর্টে তীব্র প্রভাব ফেলে, তবে আমার মনে হয় আপনারা সরকারের দৃষ্টি সেভাবেই আকর্ষণ করতেই পারেন। আপনাদের সমস্যাটা যদি গভীর হয় তবে শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয় নয়, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আপনারা বসতে পারেন।
দৌলত আক্তার মালা
এমন একটা পলিসি দিয়ে আমরা আমাদের দেশের পুরোনো বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগকারীদেরকেও নিরুৎসাহিত করছি। আমাদের সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে আগেই মেরে ফেলবো কিনা – তা বিবেচনার বিষয়। অন্যদিকে, আমাদের বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবসা কতটা সুবিধাজনক তা ভাবতে হবে কারণ বর্জ্য সংগ্রহে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। যদি আমরা বর্জ্য সংগ্রহকে নিরুৎসাহিত করি, তাহলে বর্জ্য সংগ্রহকারীরা এই ব্যবসা থেকে সরে যাবে। নীতিগত হস্তক্ষেপ ও আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি একটা সময় পর্যন্ত প্রণোদনা দিতে হবে।
এ এস এম মারজান নূর
ব্রিটিশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বুসানের প্লাস্টিক নেগোশিয়েশন কনফারেন্স। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে প্লাস্টিক নেগোশিয়েশন ট্রিটি নিয়ে সহায়তার জন্য একটি প্রস্তাব এসেছে। ফলে আমরা সরকারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি যাতে আলোচনার মাধ্যমে ফলপ্রসূ নীতি বাস্তবায়ন করা যায়। নীতি তৈরির সময় বাস্তবায়নের একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ তৈরি করা প্রয়োজন, যাতে বিভ্রান্তি না হয়।
বেসরকারি খাত, সরকার এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয়ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য পলিসি ডায়লগ ও পরামর্শ প্রক্রিয়াও অত্যন্ত জরুরি। টেকসই উন্নয়নের জন্য আরেকটি বিষয় হলো, অন্যান্য দেশের সেরা চর্চা থেকে শিক্ষা নেওয়া।
মোঃ রবিউল ইসলাম রবি
প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা করতে হলে প্লাস্টিকের পুরো লাইফ সাইকেল— উৎপাদন, বিতরণ, ব্যবহার ও ব্যবহার পরবর্তী বিষয়ে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা উচিত। এর জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের বিষয়েও ধারণা থাকা প্রয়োজন। সঠিকভাবে বিশ্লেষণ না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলে অনেক সময় জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিক অটো রিকশা ইস্যুটিকে উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে ।
ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদেরও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও অন্যান্য অবকাঠামো বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা সাহায্য করতে পারে। রিসাইক্লিং ও সার্কুলার ইকোনমির সঙ্গে বিনিয়োগের ব্যাপার জড়িত। উন্নয়ন সহযোগীরা সরকারের সাথে কাজ করে এ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে পারে।
সঞ্চালক
ড. এম মাসরুর রিয়াজ
চেয়ারম্যান ও সিইও, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ
আলোচক
ফরিদ উদ্দিন
সাবেক সদস্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং সদস্য রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটি
মোহসিনা ইয়াসমিন
সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)
শামীম আহমেদ
সভাপতি, বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিপিজিএমইএ)
দেবব্রত রায় চৌধুরী
কোম্পানি সেক্রেটারি ও হেড অব লিগ্যাল অ্যান্ড ট্যাক্সেশন, নেসলে বাংলাদেশ
আরাফাত হুদা জায়গীরদার
হেড অব এক্সটারনাল এনগেজমেন্ট
বিএটি বাংলাদেশ
মো. জাহিদ উল্লাহ
চিফ সাসটেইনিবিলিটি অফিসার, ডিবিএল গ্রুপ
সৈয়দ তাসনিম মাহমুদ
সিইও, গ্রিনবাড
মমশাদ আলী খান
কান্ট্রি লিড, পাবলিক অ্যাফেয়ার্স
সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড কমিউনিকেশন, কোকা কোলা বাংলাদেশ
মুসতাফাইন মুনির
ডিরেক্টর, সাইক্লো
মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান
সিনিয়র রিসার্চ অফিসার, ওয়েস্ট কনসার্ন
নাভিদ জামান
প্রতিষ্ঠাতা, হাম্বল বি
মো: মাসুদ রুমী
বিজনেস এডিটর, কালের কণ্ঠ
জাকির হোসেন
সহযোগী সম্পাদক, সমকাল
দৌলত আক্তার মালা
বিশেষ প্রতিনিধি, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস
এ এস এম মারজান নূর
জলবায়ু পরিবর্তন নীতি ব্যবস্থাপক
ব্রিটিশ হাইকমিশন, ঢাকা
মোঃ রবিউল ইসলাম রবি
কনসালটেন্ট, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক
- বিষয় :
- গোলটেবিল