ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

দুর্যোগঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, জীবিকা ও সামাজিক নিরাপত্তায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদার ভিন্নতা বিবেচনায় নিতে হবে

দুর্যোগঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, জীবিকা ও সামাজিক নিরাপত্তায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদার ভিন্নতা বিবেচনায় নিতে হবে

মামুনুর রশিদ

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:২০ | আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৩:৪৬

দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ ক্ষেত্রে শিশু, নারী ও প্রবীণ, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রতিবন্ধিতা মানব-বৈচিত্র্যের একটা অংশ। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদাও ভিন্ন ভিন্ন। এই বৈচিত্র্য এবং চাহিদার ভিন্নতা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা প্রয়োজন। গত ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সমকালের সভাকক্ষে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু সহনশীল দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, জীবিকা এবং সামাজিক নিরাপত্তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অতিথিরা এসব কথা বলেন। সমকাল এবং ডিজএ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশন (ডিসিএফ) যৌথভাবে এর আয়োজন করে। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল কারিতাস বাংলাদেশ এবং সিবিএম গ্লোবাল ডিজএ্যাবিলিটি ইনক্লুশন।

রেজওয়ানুর রহমান
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যেসব দেশ সর্বাপেক্ষা ঝুঁকিতে থাকে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়গুলো আমরা প্রাণহানি ছাড়াই মোকাবিলা করতে পেরেছি। কারণ আমরা আগাম সতর্কতা দিতে পারছি। ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও মৌসুমি বন্যা, হিটওয়েভ এবং শৈত্যপ্রবাহের আগাম সতর্কবার্তা দিতে পারছি। আকস্মিক বন্যা, ভূমিকম্প এবং বজ্রপাত বিষয়ে আমরা কাজ করছি। জাতিসংঘের লক্ষ্য, ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশে সবাইকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কতার আওতায় আনা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে আমরা কাজ করছি। আগাম সতর্কতার সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কীভাবে সংযুক্ত করা যায়, এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।


সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রামের (সিপিপি) অধীনে ৮০ হাজার ভলান্টিয়ার রয়েছে। তারা প্রধানত উপকূলীয় এলাকায় কাজ করে থাকে। কাউকে পেছনে ফেলে আমরা এগোতে চাই না। আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২ রয়েছে। এর অধীনে নীতিমালা রয়েছে। এ আইনের আওতায় জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে থাকি। আমাদের বিভাগীয় কমিটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। পৌরসভার কমিটিগুলোতেও এই প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিনিধিত্ব না থাকলে কমিটির প্রধানরা এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। প্রতিটি দুর্যোগেই আমরা নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থা আইনের নীতিমালায় তহবিলের বিষয়টি রয়েছে। এ তহবিলের ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে, স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের যে তহবিল সংগ্রহ হয়, অর্থবছর শেষ হলেই সেটা আবার সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হয়। এই বিষয়টি আমরা যুগোপযোগী করতে চাচ্ছি। ‘স্ট্যান্ডিং অর্ডার অন ডিজাস্টার’কে আমরা রিভিউ করব। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে কীভাবে আরও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিমূলক করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।

আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন পরিকল্পনা চলমান। দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করা বড় বিষয়। আমরা যত ঝুঁকি হ্রাস করতে পারব, ক্ষয়ক্ষতি তত কম হবে।
আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলার পরিকল্পনা নিয়ে যখন বসব, তখন ইন্স্যুরেন্সের বিষয়টি কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে কথা বলব। এই ইন্স্যুরেন্সের আওতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কীভাবে সংযুক্ত করা যায়, তা নিয়েও কথা বলব।

তানিয়া খান
আমাদের মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের মধ্যে দুর্যোগকালে শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি রয়েছে। শিশু একাডেমিতে শিশুদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুদের বিষয়টি আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী শিশুদের অংশগ্রহণের বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এটি আমাদের নীতিমালার মধ্যেই রয়েছে। শিশু একাডেমির আওতায় ছয়টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষাসহ আর্লি চাইল্ডহুড কেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়। এসব ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আলাদা করে সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। অন্যান্য শিশুর চেয়ে প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য সুযোগ-সুবিধা একটু বেশিই থাকে। সাম্প্রতিক বন্যায় আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে কমিটি করা হয়েছে, সেই কমিটি ক্লাস্টার করে অনেক ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করেছিল। এ গ্রুপগুলো যেসব অঞ্চল বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, সেখানে অনেক কাজ করেছে।

 

ড. মো. হাবিব উল্লাহ বাহার
দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারী ও প্রবীণ বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। আমাদের লক্ষ্য হলো দুর্যোগকালে এবং দুর্যোগের পূর্বাপর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে, এমন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সংবেদনশীল একটা সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আমরা জানি, প্রতিবন্ধিতা মানব-বৈচিত্র্যের একটা অংশ। তাদের চাহিদাও ভিন্ন ভিন্ন। এই বৈচিত্র্য এবং চাহিদার ভিন্নতা দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সব দিক থেকেই বিবেচনা করা প্রয়োজন।  ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় দুর্যোগকবলিত এলাকাগুলোয় ‘মাল্টিপারপাস অ্যাক্সেসিবল রেসকিউ বোট’ তৈরির মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিমূলক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। 

দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আইন, নীতিমালা, স্থায়ী আদেশাবলি এবং কর্মপরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব কর্মপরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়নে আমাদের এনজিও-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজনের মধ্যে সমন্বয় করে আরও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কাউকে পেছনে রেখে নয় বা কাউকে বাদ দিয়ে নয়; সামাজিক অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সব পর্যায়ে অন্যদের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী নারী, শিশু ও প্রবীণ ব্যক্তিদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা দুর্যোগ সহনশীল, বৈষম্যহীন জাতি গঠন, টেকসই উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রাখবে। 

ফরিদ আহমেদ মোল্লা
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং  এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৩১৬। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটিগুলো এই কাজ করে থাকে। তাদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ডেটাবেজ তৈরি করা হয়। ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়, যাকে আমরা সুবর্ণ নাগরিক কার্ড বলে থাকি। সব সুবিধা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ কার্ডটি একটি মানদণ্ড। তবে অনেক ক্ষেত্রে এ কার্ডটি গ্রহণ করা হয় না। সে ক্ষেত্রে যারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করেন, তারা যেন স্থানীয় প্রশাসন ও সংস্থাগুলোকে এটা বোঝান– তারা যেন এ কার্ডটি মূল্যায়ন করেন।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা এখন সর্বজনীন। কেউ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পরপরই এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন। ইতোমধ্যে ৩৩ লাখ ৩৫ হাজার ব্যক্তিকে এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বাকিদেরও নতুন অর্থবছরে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা ২০০ টাকা থেকে শুরু হয়েছিল। তা এখন ৮৫০ টাকা করা হয়েছে। সরকার তার সক্ষমতা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এই ভাতা বৃদ্ধি করছে। সামনে হয়তো আরও বৃদ্ধি পাবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তিও চালু আছে। চারটি স্তরে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত উপবৃত্তি দেওয়া হয়। এ কর্মসূচি চালু হওয়ার ফলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে, আগ্রহী হচ্ছে। তাদের ঝরে পড়ার প্রবণতা কমছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক ১৩টি প্রোগ্রাম রয়েছে। এই প্রোগ্রামের মধ্যে তাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (জেপিইউএফ), এনডিডি ট্রাস্ট-অটিজম, বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা, ডাউন সিনড্রোম এবং সেরিব্রাল পালসি– চার ধরনের প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইনে উল্লিখিত ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা নিয়ে আমরা কাজ করছি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সম্প্রতি আমাদের উপদেষ্টা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ধরন অনুযায়ী পৃথক কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সে অনুযায়ী কাজ শুরু করেছি। আগের কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা নতুন কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করব। সমাজসেবা অধিদপ্তর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অধিদপ্তরের ১১ হাজার কোটি টাকা বাজেটের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়েই বাজেট প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকার কাজ করছে। সরকারের উদ্যোগ আছে, প্রচেষ্টা আছে, কর্মসূচি আছে।

নাসরিন জাহান
ডিসিএফ কারিতাস বাংলাদেশের নেতৃত্বে ও সিবিএম গ্লোবালের সহযোগিতায় ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (ডিআইডিআরএম)’ প্রকল্প খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী এবং কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নে বাস্তবায়ন করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী বিশেষত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অভিযোজন উন্নত করা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। দুর্যোগে সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান– এগুলো একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রথম চাওয়া। এ বিষয়টি বিবেচনায় এনে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সব পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিকরণ নিশ্চিত করতে নীতিনির্ধারক ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের আহ্বান জানাচ্ছি।

 

হাফিজুর রহমান
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণে অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করতে পারলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। মূলধারায় প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমুলক উন্নয়ন জরুরি। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্যও এটি প্রযোজ্য। 

 

 

আবু হানিফ মোহাম্মদ ফরহাদ
জাতীয় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস পরিকল্পনা, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা, ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান, দুর্যোগের স্থায়ী আদেশাবলি, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিকরণ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এ কাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তাদের সংগঠনগুলো (ওপিডি) রিসোর্স পুল হিসেবে কাজ করতে পারে। কেননা, প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা অমূল্য। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে বরাদ্দ রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। দ্বৈততা পরিহার নীতির কারণে ঝুঁকিগ্রস্ত জলবায়ুজনিত দুর্যোগ ঝুঁকিগ্রস্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান ও জীবিকার জন্য দরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত উভয়ের দক্ষতা উন্নয়ন। জলবায়ু সহনশীল, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে বিদ্যমান নীতিমালা, কর্মসূচি ও ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করে গড়ে তোলা জরুরি। প্রকল্পে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিমূলক করে গড়ে তোলা যাবে এমন ‘মার্কেট সিস্টেম ও ভ্যালু চেইন বিশ্লেষণ’ এবং ‘কি লাইভলিহুড স্টেকহোল্ডার ও লাইভলিহুড অপশনস ম্যাপিং’ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে, যার ভিত্তিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অংশীজনের মতামতসহ একটি কর্মপরিকল্পনা ও একটি পজিশন পেপার প্রণীত হয়েছে। জলবায়ুজনিত দুর্যোগে ঝুঁকিগ্রস্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে এ গবেষণা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মূল ধারার প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা ও কর্মসূচিতে  এটি অন্তর্ভুক্তিকরণ জরুরি। 

এসএম মঞ্জুর রশীদ
বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় ২০ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। ধারণা করা হয়, এসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মধ্যে ৮২ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশগুলোয় দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এ অবস্থায় তাদের অবস্থা কেমন হতে পারে, সহজেই অনুমান করা যায়। উপকূল, চর এবং হাওর এলাকায় প্রতিবন্ধী নারীদের অবস্থা খুব খারাপ। জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সম্পর্কিত কনভেনশন (সিআরপিডি) প্রণয়ন ও অনুমোদনের ধারাবাহিকতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন (২০১৩), বিধিমালা (২০১৫) এবং কর্মপরিকল্পনা (২০১৯) প্রণীত হয়েছে। আমরা আশা করছি, এসডিজির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এসব নীতিমালা আরও এগিয়ে যাবে। 

 

সরদার এ. রাজ্জাক
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিকভাবে শনাক্তকরণ জরুরি। শনাক্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের মধ্যে প্রান্তিক ও অরক্ষিত গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের মধ্যে ডাউন সিন্ড্রোমে ভোগা ব্যক্তিদের নিয়ে আমরা কাজ করছি। এই জনগোষ্ঠীর জন্য সহযোগিতা এবং যত্ন প্রয়োজন। 

 

 


নূরজাহান সুলতানা
ডিআইডিআরএম প্রকল্পের দুটি কর্ম এলাকায় ৯টি ক্লাস্টার আছে। একেকটা ক্লাস্টারে ৩০ জন সদস্য। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিমূলক কিছু চার্টবুক তৈরি করেছি আমরা। কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি, যাতে দুর্যোগে তাদের ঝুঁকিটা কমে। আমাদের কর্মএলাকায় ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ এবং সাইক্লোন আশ্রয়কেন্দ্রগুলো যেন প্রবেশগম্য হয়, সে বিষয়ে আমাদের প্রবেশগম্যতা অডিট সম্পন্ন হয়েছে। এ অডিট প্রতিবেদনের আলোকে তিনটি সাইক্লোন আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কারের কাজ চলছে। আমরা জীবন-জীবিকার ওপর দুটি স্টাডি করেছি। এতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন, সম্ভাবনা কী এবং করণীয় সম্পর্কে বলা আছে। ‘ইনক্লুসিভ আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ নিয়ে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। কর্মএলাকার দুটি ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মোট ১৮টি স্ব-সহায়ক দল গঠন করে তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করছি। দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে তাদের লিংকেজ করিয়ে দিচ্ছি এবং নিজেদের অধিকার ও মর্যাদায় নিজেদের নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষমতা উন্নয়নে কাজ করছি।

আরজু আফরিন ক্যাথি
ইউএনডিপি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়েও কাজ করছে। এ বছর আমরা সামাজিক সুরক্ষা ফ্রেমওয়ার্ক ‘জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল’ রিভিও করছি। এই ফ্রেমওয়ার্ক ধরে আমরা সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টা আরও কার্যকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার চেষ্টায় আছি।

 

 

নাঈমা ইসলাম অন্তরা
দুর্যোগকালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বললেও দুর্যোগ-পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কেউ কথা বলেন না। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, দুর্যোগের পর অনেকে নানা ধরনের ট্রমার শিকার হন। আবার বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে দুর্যোগে বেশি ঝুঁকিগ্রস্ত থাকেন। এ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোয় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। 

 


শরিফুল ইসলাম
আমি কয়রা উপজেলার সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বসবাসরত একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। আমাদের এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বেড়িবাঁধ।               প্রতি বছর বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পানি উঠে আমাদের এলাকা প্লাবিত হয়। আবার বেড়িবাঁধ ভেঙেও প্রতিবছর প্লাবিত হয়। যখন প্লাবিত হয়, তখন আমার এলাকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সরকারের যে ভাতা রয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। এই ভাতা এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ভাতা পান বলে অনেক সময় অন্যান্য সরকারি সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হন। দেখা যায়, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড থাকলে ভিজিডি কার্ড করতে গেলে তাদের তা দেওয়া হয় না। আমার দাবি থাকবে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি যেন শিথিল করা হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কর্মমুখী হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাদের ব্যাপক সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করে। 

আরিফুল ইসলাম
অনেক ক্ষেত্রে ইশারা ভাষার দোভাষী না থাকায় যোগাযোগ ব্যাহত হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যারা রয়েছেন, তারাও যদি শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ইশারা ভাষায় বোঝাতে পারেন, তাহলে তারা অনেকটা লাভবান হবেন। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় কাজ করা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ইশারা ভাষার দোভাষী রাখার ব্যবস্থা করে। 

 

 

মো. রওশন আলী
সাম্প্রতিককালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অর্থায়ন নিয়ে কথা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, এ বিষয়ে ভাবতে হবে। এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরকে কাজ করতে হবে। 

 

 

তরিকুল ইসলাম
আমি কয়রা উপজেলায় প্রকল্পের আওতাধীন একজন কমিউনিটি ফ্যাসিলিটেটর। আমার কাজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অবহেলার শিকার। এমনকি দুর্যোগকালে সাইক্লোন শেল্টারগুলোতেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যদি যান, সেখানেও প্রবেশগম্যতা তাদের জন্য সহজলভ্য নয়। এসব স্থান সহজে প্রবেশগম্য করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম করে তুলতে হবে। তাদের জন্য প্রয়োজনে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। 

 

 

মো. রুহুল কুদ্দুস রিপন
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সব সময় বঞ্চিত হয়ে আসছে। কোনো তথ্য আমাদের কাছে ওইভাবে পৌঁছায় না। আমাদের মূল বাধা হলো যোগাযোগের সমস্যা। ইশারা ভাষা দোভাষী সেবা না থাকায় আমরা অনেক তথ্য জানতে পারি না। অনেক কথা বুঝতে পারি না। এ জন্য আমাদের ইশারা ভাষা দোভাষীর ব্যবস্থা রাখতে হবে। 

 

 

রোকেয়া বেগম
যে কোনো দুর্যোগে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা খুব দুরবস্থার মধ্যে থাকেন। দুর্যোগকালে উদ্ধারকর্মীরা যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের সহযোগিতা করেন। তাদের যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উদ্ধার করা হয়, সে বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। 

 

 


শাহানা আক্তার
প্রতিবন্ধী নারী বিশেষত শ্রবণ প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীরা দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। যারা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কাজ করেন, তাদের অনেকেই জানেন না শ্রবণ প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারীদের প্রতি কীভাবে খেয়াল রাখতে হয়। শ্রবণ প্রতিবন্ধী নারীদের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা বহু গুণ বেড়ে যায় যখন তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা, প্রসূতি ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়গুলো সামনে আসে। এ ছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ের শ্রবণ প্রতিবন্ধী নারীরা এমনকি ইশারা ভাষায়ও অতটা পারদর্শী নন। তারা ঘরোয়া কিছু ইশারা-ইঙ্গিতে অভ্যস্ত। এমন ইশারায় দক্ষ দোভাষীর সংখ্যাও কম। যার ফলে শ্রবণ প্রতিবন্ধী নারীরা পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত তথ্য পান না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হওয়ার কারণে তারা সব ধরনের তথ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন, যা তাদের আরও বেশি ঝুঁকিগ্রস্ত করে রাখে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী নারীদের চাহিদা অনুযায়ী সব ব্যবস্থা গ্রহণে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। 

 

আরিফ হোসেন
একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যদি কোনো একটি সামাজিক নিরাপত্তা জালের আওতায় আসেন, তাহলে তিনি অন্য কোনো সামাজিক সুরক্ষায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন না। যারা দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বাস করেন, তাদের জন্য এ বিষয়টি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। কেননা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতায় যা দেওয়া হয়, তা দিয়ে একজন ব্যক্তির কিছুই হয় না। এ জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এই ভাতা ছাড়াও অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা যায় কিনা, তা ভাবতে হবে। প্রতিবন্ধিতার মাত্রা এবং এলাকার ওপর নির্ভর করে পরিকল্পনা করা যেতে পারে।

 

 

তায়েফুর রহমান রাহাত
উপকূলীয় অঞ্চলের প্রান্তিক পর্যায়ের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। পরিবার থেকেই তারা বঞ্চনার শিকার হন। পর্যাপ্ত তথ্য, যথাযথ যত্ন ও সরকারি পরিষেবার প্রায় কোনো ব্যবস্থাই তাদের জন্য থাকে না। এ কারণে দুর্যোগে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাদের উপযোগী সেবা প্রয়োজন। 

 

 


শেখ রোকন
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য যদি উপযুক্ত সুযোগের ব্যবস্থা করা হয়, তারা অনেক এগিয়ে যাবেন। তারা যেন মূল স্রোতে আসতে পারেন, ক্ষেত্রবিশেষে তারা যেন আমাদের চাইতে এগিয়ে যেতে পারেন, এ ক্ষেত্রে সরকার একটা ভূমিকা রাখতে পারে। সংবাদমাধ্যমকে তাত্ত্বিকভাবে বলা হয় ‘অবলার কণ্ঠস্বর’। সমকাল ব্যবহারিকভাবে এই কাজটা করার চেষ্টা করে। এ কারণে এ ধরনের আয়োজনের সফলতার জন্য সমকাল সবসময় সচেষ্ট। সমকাল সবসময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ের ওপর সম্পাদকীয় নীতির অংশ হিসেবে জোর দিয়ে থাকে। 

 

 

সুপারিশ

  • বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা বাড়াতে হবে। ভাতার পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি ভাতা বা সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। দ্বৈততা পরিহার নীতি শিথিল করতে হবে। 
  • প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম করে তুলতে হবে। তাদের জন্য প্রয়োজনে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহজ প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে। 
  • শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেন তথ্যের প্রবাহে অবাধে বিচরণ করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য সরকারিভাবে ইশারা ভাষা শেখা, সহজে ইশারা ভাষা দোভাষী সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা করা। 
  • দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক উপকরণ ও সহায়ক প্রযুক্তি সরবরাহ করা।
  • ২০২৭ সালের মধ্যে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক আগাম সতর্কবার্তা প্রবেশগম্য করে গড়ে তুলতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের সংগঠনগুলোকে (ওপিডি) সম্পৃক্ত করা।
  • দুর্যোগ ঝুঁকিগ্রস্ত এলাকায় দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
  • দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি গৃহায়ন প্রকল্পে অন্তুর্ভুক্ত করা।
  • ওয়াশ ও স্যানিটেশন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী/ প্রবেশগম্য করা। সুপেয় পানির বন্দোবস্ত করা।
     

প্রধান অতিথি

রেজওয়ানুর রহমান
মহাপরিচালক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর

বিশেষ অতিথি

তানিয়া খান
অতিরিক্ত সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়
মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি

ড. মো. হাবিব উল্লাহ বাহার
যুগ্ম সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

সম্মানিত আলোচক

ফরিদ আহমেদ মোল্লা
অতিরিক্ত পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা)
সমাজসেবা অধিদপ্তর

স্বাগত বক্তব্য

নাসরিন জাহান
নির্বাহী পরিচালক, ডিসিএফ

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন

আবু হানিফ মোহাম্মদ ফরহাদ
টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর, 
ডিআইডিআরএম প্রজেক্ট, ডিসিএফ 

ডিআইডিআরএম প্রকল্পের নলেজ 
অ্যান্ড লার্নিং শেয়ারিং

নূরজাহান সুলতানা
প্রোগ্রাম অফিসার, কারিতাস বাংলাদেশ

আলোচক

এসএম মঞ্জুর রশীদ
সিনিয়র অ্যাডভাইজার, ইউএনডিপি

সরদার এ. রাজ্জাক
নির্বাহী পরিচালক, আমদা 

আরজু আফরিন ক্যাথি
রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, ইউএনডিপি

 মো. রুহুল কুদ্দুস খান রিপন
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থা

নাঈমা ইসলাম অন্তরা
প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর
মেন্টাল হেলথ প্রজেক্ট, ডিসিএফ

মো. রওশন আলী
কোঅর্ডিনেটর, নাহাব

আরিফুল ইসলাম
বাংলা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ নিউজ প্রেজেন্টার,
বাংলাদেশ টেলিভিশন 

শরিফুল ইসলাম
গোলাপফুল সেলফ-হেল্প গ্রুপ সভাপতি,
মহারাজপুর ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা

তরিকুল ইসলাম
কমিউনিটি ফ্যাসিলিটেটর, ডিআইডিআরএম প্রকল্প, মহারাজপুর ইউনিয়ন, কয়রা, খুলনা

রোকেয়া বেগম
নির্বাহী সদস্য, ডিসিএফ 

শাহানা আক্তার
নির্বাহী সদস্য, ঢাকা বধির সংস্থা

আরিফ হোসেন
সদস্য, ভিপস

তায়েফুর রহমান রাহাত
সদস্য, মিরপুর অ্যাসোসিয়েশন অব দি ডেফ 

সভাপতি

হাফিজুর রহমান
চেয়ারম্যান, ডিসিএফ

সঞ্চালনা

শেখ রোকন
সহযোগী সম্পাদক, সমকাল

অনুলিখন

মাজহারুল ইসলাম রবিন
স্টাফ রিপোর্টার, সমকাল

সমন্বয়

হাসান জাকির
হেড অব ইভেন্টস, সমকাল

আরও পড়ুন

×