অনিদ্রার কারণ

প্রতীকী ছবি
ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১১:৩৭
ঘুম সারাদিনের ক্লান্তি, পরিশ্রম দূর করে সতেজ করে তোলে। চাঙ্গা হয় দেহ-মন। ঘুম ঠিকমতো না হলে সারাদিন কাটে অসহ্য ক্লান্তিতে; মেজাজ হয় খিটখিটে।
অনেকেই রাতভর বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করেন। কয়েকবার ঘুম থেকে জেগে যান। আবার অনেকের সাত-আট ঘণ্টা ঘুমানোর পরও মনে হয়, ঘুম ভালো হয়নি। এরাই নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত। দীর্ঘদিন নিদ্রাহীনতা থাকলে হতে পারে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা।
বিভিন্ন কারণে নিদ্রাহীনতা দেখা দিতে পারে। ক্যান্সার, হাঁপানি, আর্থ্রাইটিস, মানসিক চাপ, অবসাদ, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, বেডরুমের বেশি আলো ও শব্দ ইত্যাদি।
যারা স্বল্প সময়ের জন্য নিদ্রাহীনতায় ভোগেন, তাদের সমস্যা মিটে যেতে পারে আপনাআপনি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি নিদ্রাহীনতার জন্য প্রয়োজন চিকিৎসা। এ জন্য পরিবর্তন করতে হবে ঘুমের অভ্যাস; মেনে চলতে হবে নিয়মকানুন। দিনে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে বাদ দিন। চা-কফি রাতে পান না করাই ভালো। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমান, এমনকি ছুটির দিনেও। ঘুমানোর আগে পড়তে পারেন মজার কোনো বই।
ঘুমের আগে জটিল কোনো আলোচনা থেকে বিরত থাকুন। রাতে কম্পিউটার ব্যবহার, ইন্টারনেটে বসে চ্যাট, টিভি দেখার অভ্যাস দূর করুন। বেডরুম হতে হবে ঘুমের উপযোগী। অতিরিক্ত আলো ও শব্দমুক্ত হতে হবে। রাতের খাবার শোয়ার দুই-তিন ঘণ্টা আগেই শেষ করুন। ডিনারে পরিহার করুন রিচ ফুড, চর্বিজাতীয় খাবার। অতিরিক্ত তরল পানে বারবার প্রস্রাব রাতের ঘুমে ব্যাঘাত করতে পারে। ঘুমের আগে ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। ব্যায়াম ঘুম গাঢ় করে। ঘুমানোর পাঁচ-ছয় ঘণ্টা আগে ব্যায়াম শেষ করুন। ঘুম না এলে বিছানায় শুধু শুধু শুয়ে থাকবেন না। বিছানা থেকে উঠে কম মনোযোগ দিতে হয়, এমন কাজ, যেমন– বই, পত্রিকা পড়া, মৃদু বাজনার গান শুনতে পারেন।
ঘুম না এলে করতে পারেন রিলাক্সেশন টেকনিক। শুয়ে বুক ভরে শ্বাস নিন। প্রতিবারের শ্বাস হতে হবে আগের বারের চেয়ে গাঢ়। পায়ের মাংসপেশিগুলো টানটান করে কিছুক্ষণ ধরে রেখে আগের অবস্থায় নিয়ে আসুন। এভাবে প্রতিটি মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণ করতে পারেন। ভাবতে থাকুন কোনো সুখস্মৃতি।
অনেকেই আছেন, একটু ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলেই শুরু করেন ঘুমের ওষুধ সেবন। এটি একেবারেই উচিত নয়। এতে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। একসময় এমন অবস্থা দেখা দেয়, ওষুধ সেবন ছাড়া ঘুম আসে না। ওষুধের ডোজও বাড়াতে হয়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করতে পারেন ওষুধ।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি, নিনস
- বিষয় :
- স্বাস্থ্যসেবা