বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন নীতিশ কুমার

নীতীশ কুমার।
কলকাতা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২২ | ১০:২৯ | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২২ | ১০:২৯
ফের বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন নীতিশ কুমার। বুধবার দুপুর দুইটার দিকে রাজ্যটির রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। নীতিশের সঙ্গেই উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন লালু প্রসাদ যাদবের ছেলে তথা রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব।
এদিন রাজভবনে তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল ফাগু চৌহান।
এদিকে জেডিইউর এনডিএ ত্যাগের পরই বুধবার একই দিনে বিহারে জোড়া ধাক্কা খায় বিজেপি। ঘোষণা দিয়ে বিজেপির সঙ্গ ছাড়ে জিতেন রাম মাঝির দল হাম।
নীতীশ কুমার ইস্তফা দেওয়ার পরই দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন হামের প্রধান জিতেন রাম মাঝি। সেই বৈঠকের পরই নীতীশের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থনের কথা জানায় হাম। যার অর্থ, এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে গেল তারাও।
বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জিতেন রাম মাঝির দলের চার জন বিধায়ক রয়েছে। মহাজোটের দলগুলোর সঙ্গে জিতেন রামের দলের সমর্থন পাওয়ায় নীতীশের মসনদ আরও পোক্ত হয়েছে।
মোট সাত দলের সহযোগিতায় ‘মহাজোট’ এর এই সরকার গঠিত হলো।
বুধবার তেজস্বী যাদবকে সঙ্গে নিয়েই ফের রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান নিতীশ কুমার এবং তার সামনে সরকার গঠনের দাবি পেশ করেন। মোট ১৬৪ জন বিধায়কের সমর্থনের চিঠি রাজ্যপালের কাছে জমা দেন।
এর মধ্যে জেডিইউ ৪৫ জন, আরজেডির ৭৯, কংগ্রেসের ১৯, বামেদের ১৬, হাম পার্টির ৪ জন, স্বতন্ত্র দলের ১ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। ২৪৩ আসন বিশিষ্ট বিহার বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ১২২। সেখানে মহাজোটের সংখ্যা অনেক বেশি রয়েছে।
সেক্ষেত্রে মন্ত্রিসভা তৈরি হতে পারে আগের ফর্মুলাতেই। অর্থাৎ নীতীশের পূর্বতন জোটসঙ্গী বিজেপি যে মন্ত্রিসভার পদগুলো পেয়েছিল, সেগুলোই চলে যেতে চলেছে আরজেডি ও জোট সঙ্গীদের হাতে। আর জেডিইউর যে পদগুলো ছিল, সেগুলো থাকছে নীতীশের দলের বিধায়কদের হাতেই। তবে এদিন মাত্র এই দুজনেই শপথ নিয়েছেন। আগামী ১৫ আগস্ট বাকি মন্ত্রিসভা গঠন হবে বলে জানা গেছে।
এ দিন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবীসহ লালু প্রসাদের পরিবারের সদস্যরা এবং বেশ কিছু ভিআইপি ব্যক্তি।
এদিন শপথ নেওয়ার পরই নীতিশ ও তেজস্বী একে অপরকে শুভেচ্ছা জানান।

এর পরই সংক্ষিপ্ত ভাষণে মোদিকে চ্যালেঞ্জ ছোড়েন নীতিশ।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য লালায়িত নই। কিন্তু আমার একটাই প্রশ্ন, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যিনি ২০১৪ সালে দিল্লিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন, ২০২৪ এর সাধারণ নির্বাচনে তিনি কি ফের ক্ষমতায় আসবেন?
মানুষের রায়কে অবমাননা করার যে অভিযোগ বিজেপি তার বিরুদ্ধে তুলেছে সে প্রসঙ্গে তিনি জানান, ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমি থাকি বা না থাকি, তারা (বিজেপি) কি চায়, সেটি তারাই বলতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের নির্বাচনী ফলাফলের পর আমি মুখ্যমন্ত্রী হতে চাইনি। কিন্তু আমার উপরে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। দলের বাকিদের জিজ্ঞাসা করুন, তাদের কোথায় নামিয়ে আনা হয়েছে। তারপর আপনারাও দেখেছেন কি হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন নীতিশ কুমার। সেই বৈঠকেই বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙ্গে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নীতিশ। এরপর বিকেলে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগ পত্র জমা দেন। রাজভবন থেকে সরাসরি লালু প্রসাদ যাদব-রাবড়ি দেবীর বাসভবনে গিয়ে তেজস্বী যাদবের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেই বৈঠকে মহাজোটের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক শুরু করার উপরে জোর দেন তিনি।
বিজেপিকে ঠেকাতে ২০১৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে, নীতিশের দল জেডিইউ, লালু প্রসাদ যাদবের দল আরজেডি ও কংগ্রেস মিলিয়ে মহাজোট গঠিত হয়। ২০১৭ সালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আরজেডি-সঙ্গ ছেড়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়েন নীতীশ। ২০২১ সালে বিধানসভায় বিজেপির তুলনায় কম আসন পাওয়া সত্ত্বেও নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী করে পুরনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিল বিজেপি।
- বিষয় :
- শপথ
- মুখ্যমন্ত্রী
- বিহার