সমুদ্রে ট্রলারডুবি: ভারতে আরও ১৭ বাংলাদেশি জেলেকে উদ্ধার

ভারতে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি জেলেরা- সমকাল
কলকাতা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২২ | ০০:৩৫ | আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২২ | ০০:৩৫
আবারও ১৭ জন বাংলাদেশি জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে। তাদের উদ্ধার করেছেন ভারতীয় কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। তবে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা উত্তাল সমুদ্রে ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করেছেন তারা।
জানা যায়, গত ১৫ অগস্ট বাংলাদেশের পাথরঘাটা থেকে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেয় এফবি ভাই ভাই ট্রলার। ট্রলারে বাংলাদেশের বরগুনা জেলার ১৯ জন জেলে মাছ ধরার জন্য রওনা দেন। ১৬ তারিখ ভালোভাবে মাছ ধরেন তারা, কিন্তু ১৭ তারিখ আবহাওয়া খারাপ হয়। প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ট্রলারটির নিচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জল ঢুকতে থাকে। জীবন বাঁচাতে লাইফ জ্যাকেট ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে বাঁচার জন্য ভেলা তৈরি করেন বাংলাদেশি ওই জেলেরা।
ভেলায় ভেসে দুদিন-দু'রাত কাটে উত্তাল সমুদ্রে। মৎস্যজীবী মোহাম্মদ বসির বিশ্বাস জানান, তারা এই দুই দিনে একটি ৭০০-৮০০ গ্রামের একটি কাঁচা লাউ খেয়েছেন ১৯ জনে ভাগ করে। তবে এর মধ্যেই উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ তাদের দুই সঙ্গীকে টেনে নিয়ে যায়। বাকি ১৭ জন শনিবার সবাই ভাসতে ভাসতে তীরে এসে পৌঁছায়। সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের কালিবাড়ি দ্বীপে তারা আশ্রয় নেন। সেখানেও সারারাত বাঘের ভয়। কোনমতে রাত কাটে জঙ্গলের গাছের উপর। প্রতি মুহূর্ত আতঙ্কে কাটতে থাকে। অবশেষে, রোববার দুপুর ১২টার দিকে একটি ছোট ভারতীয় কাকড়া ধরার নৌকা দেখতে পান তারা।তাদের কাছেই সাহায্যের জন্য আবেদন জানান বাংলাদেশি জেলেরা। পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মৈপিঠের কাকড়া ধরার ওই নৌকায় করে ১৭ বাংলাদেশিকে নিয়ে আসা হয় মৈপীঠ কোস্টাল থানায়। সেখানে বেশ কয়েকজনের শারীরিক অসুস্থতা লক্ষ্য করেন পুলিশ কর্মকর্তা মধুসূদন পাল। তখন রাত ১২টার দিকে তাদের পাঠানো হয় জয়নগর কুলতলী গ্রামীণ হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইতোমধ্যে প্রত্যেকের থাকার জন্য ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ব্যবস্থা করা হয়েছে পর্যাপ্ত খাবার এবং পোশাকের। প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে, গভীর সমুদ্রে উদ্ধার অভিযান শুরুর পরে গত ৩৬ ঘণ্টায় ভারতীয় নৌ-সেনা, কোস্ট গার্ড ও জেলেরা উদ্ধার করেছে মোট ১০৪ জন বাংলাদেশি জেলেকে। তাদের প্রত্যেকটি রাখা হয়েছে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃত সীমান্ত অতিক্রম হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রত্যেককেই দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।
গত শুক্রবার বঙ্গোপসাগর আচমকা উত্তাল হয়ে ওঠায় তীরে ফেরার সময় পায়নি মৎস্যজীবীরা। এ সময় সমুদ্রে ডুবে যায় একাধিক ভারতীয় এবং বাংলাদেশি জেলেদের ট্রলার। নিখোঁজ হন দুই দেশের প্রায় ৩০০ শতাধিক মৎস্যজীবী। এর পর ভারতীয়-বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে ভারতীয় কোস্টগার্ড ও নৌসেনারা।
এদিকে উপকূল রক্ষী বাহিনীর দুটি ডর্নিয়ার এয়ারক্রাফট গভীর সমুদ্রের বিচ্ছিন্ন এলাকায় দুর্যোগের পর থেকেই আকাশ পথে অনুসন্ধানের কাজ চালাচ্ছে এবং বাহিনীর দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ আই সি জি এস আনমোল এবং আই সি জি এস ভরত পানিতে থেকে নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের অনুসন্ধান কাজে যুক্ত রয়েছে।