ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ফের টার্গেট রোহিঙ্গারা!

যুদ্ধে কামানের খোরাক বানানো হচ্ছে রোহিঙ্গাদের!

‘আরাকান বিদ্রোহীদের দমনে রোহিঙ্গাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পর্যদস্ত সেনাবাহিনী

এ কে এম ওবায়দুর রহমান

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪ | ১৫:১৫ | আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১:১৩

এবার ‘আরাকান আর্মি’ বিদ্রোহীদের দমনে রোহিঙ্গাদের সাহায্য চাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। প্রায় সাত বছর আগে দেশটির যে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠির হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা করেছিল, জাতিসংঘ যাকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে অভিহিত করেছিল বিপদ থেকে উদ্ধারে সেই রোহিঙ্গাদেরই শরণাপন্ন হলো একই সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের প্রতি নির্মম আচরণের জন্য মিয়ানমার এখন হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার বিচারের মুখোমুখি।

সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান যোদ্ধাদের ব্যাপক সংঘাত চলছে। এরই মধ্যে রাখাইনের বিশাল এলাকার দখল হারিয়ে ফেলেছে জান্তা সরকার। এ অবস্থায় অনেকটা পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে সেনাবাহিনী। পরিস্থিতি সামলাতে তাই মিয়ানমার সরকার কাজে লাগাতে চায় রোহিঙ্গা যুবকদের। একই সেনাবাহিনী এখন রোহিঙ্গাদের তাদেরই বাহিনীতে জোরপূর্বক নিয়োগ করছে। আর রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন যে, যুদ্ধে কামানের খোরাক হতে তাদের আবারও টার্গেট করা হচ্ছে। জান্তা হেরে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে তাদের কাছে।

বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে জানতে পেরেছে, যুদ্ধরত জান্তার পক্ষে লড়াইয়ের জন্য সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অন্তত ১০০ জন রোহিঙ্গাকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিযোগ করা হয়েছে। যেসব রোহিঙ্গা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেনি বিবিসি। তাদেরই একজন ৩১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি ভীত ছিলাম। কিন্তু আমাকে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়। একদিন গভীর রাতে তার কাছে আসেন শিবিরনেতা। বলেন, তাকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সেই রাতের কথা স্মরণ করে মোহাম্মদ বলেন, তাকে বলা হয়েছিল, এটা সেনাবাহিনীর আদেশ। আদেশ পালন না করলে তার পরিবারের ক্ষতি হবে।

বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কমপক্ষে সাতজন রোহিঙ্গা সবাই একই কথা বলেছে যে- তারা অন্তত ১০০ জন রোহিঙ্গার কথা জানে যাদের এই বছর নিয়োগ করা হয়েছে এবং যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। তারা বলেছে, সৈন্য ও স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের দল ফেব্রুয়ারিতে ক্যাম্পে এসে ঘোষণা করেছিল যে, অল্পবয়সী পুরুষদের নিয়োগ করা হবে। বলা হয় যে, প্রশিক্ষণে যোগ দিলে তারা খাবার, মজুরি এবং নাগরিকত্ব পাবে। 

আরও বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। তারাও জানিয়েছেন, সেনা কর্মকর্তারা শিবিরগুলোর আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন। তারা তরুণ রোহিঙ্গাদের সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য হাজিরার নির্দেশ দিচ্ছেন।

সেনাবাহিনীতে নাম লেখাতে বাধ্য করা আরেক দল রোহিঙ্গার একটি ভিডিওর দৃশ্য তুলে ধরে বিবিসি জানিয়েছে- ওই ভিডিওতে রোহিঙ্গাদের বিএ-৬৩ রাইফেল চালানো শেখানো হচ্ছে। ভিডিওতে রোহিঙ্গাদের আরেকটি দলকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত একটি পুরানো ক্যাম্পে রাইফেল কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শেখানো দেখা গেছে।

তবে সামরিক বাহিনী আরাকান আর্মির সাথে যুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করার কথা অস্বীকার করেছে। জান্তার মুখপাত্র জেনারেল জাও মিন তুন বিবিসিকে বলেছেন, তাদের সামনের সারিতে পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। তাই আমরা তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষায় সাহায্য করতে বলেছি। 

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে- সেনাবাহিনী গত শনিবার থাইল্যান্ডের সঙ্গে পূর্ব সীমান্তের একটি শহর মায়াওয়াদির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। দেশের অধিকাংশ স্থল বাণিজ্য এই গুরুত্বপূর্ণ পথ দিয়ে যায়। এছাড়া জান্তা বাহিনীও বিপুল সংখ্যক সৈন্য হারিয়েছে। অনেকেই বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। 

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস নিধন অভিযান শুরু করে। এ অভিযানের মুখে সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। সে সময় মিয়ানমারে হাজারো রোহিঙ্গা হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হন। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী ও জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে গৃহযুদ্ধ তিন বছর ধরে চলছে। 

আরও পড়ুন

×