আইসিজের রায়ের পর আবারও উন্মোচিত যুক্তরাষ্ট্রের ভণ্ডামি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৪ | ০৫:৫৯
মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইনের বৈশ্বিক নেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে জাহির করে থাকে। তবে শুক্রবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলকে গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে তার ‘দায়বদ্ধতা’ মেনে চলার এবং গাজার রাফায় ‘অবিলম্বে আক্রমণ বন্ধ’ করার নির্দেশ দেওয়ার পর স্পষ্টতই নীরব ছিল ওয়াশিংটন।
বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবার কোনো প্রকাশ্য বিবৃতি দেওয়া না হলেও ২০২২ সালের মার্চে একই আদালতের প্রায় অভিন্ন রায়ের পর ঘটেছিল সম্পূর্ণ বিপরীত ব্যাপার।
রাশিয়াকে অবিলম্বে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হেগের আইসিজে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আদেশটিকে স্বাগত জানিয়েছে বলেছিল, এ আদালত জাতিসংঘ সনদের অধীনে বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওই আদেশ মস্কোকে মেনে চলার আহ্বান জানায় বাইডেন প্রশাসন।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবার আদেশের পর এ ধরনের কোনো বিবৃতি দেওয়ার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্রদের এক বাক্যে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। তাদের মুখস্থ করা জবাব ছিল, ‘রাফা সম্পর্কে আমাদের অবস্থানে স্পষ্টতা এবং ধারাবাহিকতা রয়েছে।’
কিন্তু ওয়াশিংটন নীরব থাকলেও তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই রায় ইসরায়েলকে এবং এর প্রধান সামরিক ও কূটনৈতিক পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব জনমত থেকে আরও বিচ্ছিন্ন করতে কাজ করে।
ইয়েল ল স্কুলের অধ্যাপক এবং ওবামা প্রশাসনের সময়ের পররাষ্ট্র দপ্তরের আইন উপদেষ্টা হ্যারল্ড হংজু কোহ ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, ‘আমাদের সবার স্বীকার করা উচিত, ব্যাপারটি খুব নেতিবাচক দিকে মোড় নিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। কারণ, লোকেরা এখন ইসরায়েলকে সহায়তা করা এবং তাদের অবৈধ পদক্ষেপে মদদ দেওয়াকে সমান ভাবতে শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘১৫ সদস্যের আইসিজের ১৩ বিচারকই অভিন্ন মত পোষণ করেছেন। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বিচারকরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা যে রাজনৈতিক বার্তা পাঠাচ্ছেন, তা হোয়াইট হাউস উপেক্ষা করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে ভুল দিকে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের চোখে পৃথিবীর বাকি অনেক অংশই রাফা আগ্রাসনকে দেখে না। আইসিজের আদেশের আগেই রাফায় হামলা বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দেশটিকে সতর্ক করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ জোটের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ১৫ মে সতর্ক করে দেন, ‘রাফায় হামলা অব্যাহত রাখলে তা অবশ্যই ইসরায়েলের সঙ্গে ইইউর সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভীষণ চাপ সৃষ্টি করবে।’
এই আদেশের এক সপ্তাহ আগেই ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক সমালোচনা চরমে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে আইসিসির উদ্যোগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তাঁর প্রশাসন।
একই সময় তিনটি ইউরোপীয় দেশ– নরওয়ে, স্পেন এবং আয়ারল্যান্ড বলেছে, তারা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ১৪০টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
- বিষয় :
- যুক্তরাষ্ট্র
- ফিলিস্তিন
- ইসরায়েল
- আইসিজে