ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সরকার গঠনে এনডিএ-ইন্ডিয়া জোটের তোড়জোড়

সরকার গঠনে এনডিএ-ইন্ডিয়া জোটের তোড়জোড়

ছবি-সংগৃহীত

শুভজিৎ পুততুন্ড, কলকাতা

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৪ | ২২:৫৯ | আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪ | ২২:৫৯

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) ও ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বুধবার নির্বাচন পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে দুই জোটের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয় নয়াদিল্লিতে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে চন্দ্রশেখর-নীতিশের সমর্থনের লিখিত বিবৃতি নিয়েছেন এনডিএ নেতারা। 

ভোট পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করতে বুধবার বিকেলে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পক্ষেও বৈঠক ডাকা হয়। এদিন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের দিল্লির রাজাজি মার্গের বাসভবনে বৈঠকে যোগ দেন কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, ডিএমকে প্রধান ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব, এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, দলের নেতা সুপ্রিয়া সুলে, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জি। আম আদমি পার্টির সংসদ সদস্য রাঘব চাড্ডা, আপ নেতা সঞ্জয় সিং, সিপিআইএমের সর্বভারতীয় সভাপতি সীতারাম ইয়েচুরি, সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভার সংসদ সদস্য রামগোপাল যাদব, ঝাড়খান্ড মুক্তি মোর্চার নেতা এবং রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন প্রমুখ। তবে ভারতের সময় রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। 

তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এনডিএ শিবিরকে সরকার গড়তে না দেওয়ার সর্বশেষ চেষ্টার কথা বলেছেন একাধিক শরিক দলের নেতারা। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা লোকসভার স্পিকার পদের বিনিময়ে হলেও নিতিশ এবং চন্দ্রশেখরকে জোটে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব পাঠানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এম কে স্ট্যালিনসহ একাধিক নেতার। অন্যদিকে শিভ সেনার উদ্ভব গোষ্ঠীর সঞ্জয় রাউত সম্ভাব্য সরকারের প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে প্রস্তাব করেছেন রাহুল গান্ধীর নাম। তার দাবি জাতীয় স্তরের নেতা হিসেবে রাহুল গান্ধী নিজেকে প্রমাণ করেছেন। 

এদিকে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তুতির মধ্যেও বুধবার সকালে বিদায়ী মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে এই বৈঠকে লোকসভা নির্বাচনে দলের সার্বিক ফলাফল নিয়ে আত্মবিশ্লেষণের পাশাপাশি পরবর্তী সরকার গঠনের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। এটাই ছিল মোদির মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক। সেই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ১০ বছরে আমরা খুব ভালো কাজ করেছি এবং আগামী দিনেও এই কাজ করে যাব।  

পরে বিকেলের দিকে সরকার গঠনের লক্ষ্যে দিল্লিতে জোটের শরিক দলগুলো নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডাকে এনডিএ। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মোদির নেতৃত্বে এই বৈঠকে যোগ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা, তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু, জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) প্রধান ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার,  শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠী) প্রধান মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, হিন্দুস্থানী আওয়াম মোর্চার (হ্যাম) প্রধান জিতেন রাম মাঝি, জনতা দলের (সেকুলার) প্রধান এইচডি কুমারস্বামী, জন সেনা দলের প্রধান পবন কল্যাণ, লোক জনশক্তি পার্টির (রাম-বিলাস) প্রধান চিরাগ পাশওয়ান, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী) প্রফুল্ল প্যাটেল প্রমুখ। ওই বৈঠকেই এনডিএ জোটের নেতা হিসেবে সর্বসম্মতভাবে বেছে নেওয়া হয় নরেন্দ্র মোদিকে। 

জানা যায়, ওই বৈঠকে চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নিতিশ কুমার লিখিতভাবে এনডিএ জোট সরকারকে সমর্থনের কথা জানান। এই নির্বাচনে জোটের সার্বিক ফলাফল, পরবর্তী সরকার গঠন এবং মন্ত্রিসভায় নিজেদের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও শরিক দলগুলোর সঙ্গে দরকষাকষি হয়। 

জানা যায়, ইতোমধ্যে শরিক দলগুলো তাদের নিজেদের দাবি পেশ করেছে। মোদির মন্ত্রিসভায় তিনটি ক্যাবিনেট মন্ত্রীর দাবি করেছে জেডিইউ, একটি ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং দুইটি প্রতিমন্ত্রীর দাবি জানিয়েছে শিব সেনা। লোকসভার স্পিকারের পদ দাবি করতে পারে টিডিপি, চিরাগ পাশওয়ানের নেতৃত্বাধীন লোক জনশক্তি পার্টি একটি ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং একটি প্রতিমন্ত্রীর পদ চাইতে পারে, নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হলে সেই মন্ত্রিসভায় একটি ক্যাবিনেট মন্ত্রীর পদ দাবি করতে পারে শরিক দল হিন্দুস্থানী আওয়াম মোর্চার (হ্যাম) প্রধান জিতেন রাম মাঝি, জনতা দল সেকুলার দলের তরফে নতুন মন্ত্রিসভায় কোনো মন্ত্রিত্ব দাবী না করলেও তাদের প্রত্যাশা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামীকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়া হতে পারে। 

দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভা গঠনে মূলত টিডিপি, জেডিইউ এবং জনসেনা দলের ওপরে ভরসা করতে হচ্ছে বিজেপিকে। গত দুই নির্বাচনে বিজেপি একাই ম্যাজিক ফিগার (২৭২) ছুঁয়ে রেকর্ড করেছিল। ২০১৯ সালে এককভাবে বিজেপি ৩০৩ আসনে জয়লাভ করে, তার আগে ২০১৪ সালে ২৮২ আসন পায় বিজেপি। সেক্ষেত্রে শরিক দলগুলোকে পরোয়া করতে হয়নি বিজেপিকে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অন্যরকম, স্বাভাবিকভাবে এত দরকষাকষি। এমনকি ভোট গণনার দিন মঙ্গলবার রাতেই জোটের দুই প্রধান শরিক দল জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) এবং তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এর সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এমনকি রাতে নিজের বক্তব্যে জোটের জয়ের পেছনে এই দুই দলের অবদানও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।  

এর আগে বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাতে নিজের পদত্যাগ পত্র তুলে দেন নরেন্দ্র মোদি। রাষ্ট্রপতিও তার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাজ চালিয়ে যাওয়ার আবেদন জানান রাষ্ট্রপতি। আর এনডিএ ক্ষমতায় আসলে জহরলাল নেহেরুর পর মোদিই হবেন দ্বিতীয় রাজনীতিবিদ, যিনি তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদে বসবেন। 

আরও পড়ুন

×