সম্মেলনে বিদায়ী বক্তৃতা
আমেরিকা, তোমাকে আমার সেরাটা দিয়েছি: বাইডেন

ডেমোক্র্যাটিক দলের জাতীয় সম্মেলনে উদ্বোধনী মঞ্চে জো বাইডেন
এ কে এম ওবায়দুর রহমান
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪ | ১২:৩১ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪ | ১৫:৪৯
‘আমেরিকা, আমি তোমাকে আমার সেরাটা দিয়েছি। হৃদয় ও আত্মা দিয়ে সেবা করেছি। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমেরিকা ‘সম্ভাবনার একটি জাতি’। শিকাগোতে ডেমোক্র্যাটিক দলের জাতীয় সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় এসব কথা বলে আবেগাপ্লত হয়ে পড়েন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সময় মেয়ে অ্যাশলি বাইডেন জড়িয়ে ধরেন বাবাকে, মুছে দেন চোখের পানি। সোমবার রাতে দলীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। খবর-বিবিসি
ডেমোক্রেট দলের সম্ভাব্য প্রার্থী, ভাইস পেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হয়ে তিনি হোয়াইট হাউসে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন এমন আশাবাদ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘একজন প্রেসিডেন্টের কাজ হলো সকল আমেরিকানের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা। আপনার (কমলা হ্যারিস) কারণে, আমাদের চার বছরের অগ্রগতি অসাধারণ ছিল।
যদিও তিনি নিজের প্রশাসনের কৃতিত্বের বিষয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছেন। তার মধ্যে কিছুটা এড়িয়ে গেছেন কমলা হ্যারিসের প্রচারণা ইস্যু। তবে তিনি কমলার প্রচারাভিযানে ‘সেরা স্বেচ্ছাসেবক’ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে জনতা মাথা নেড়ে হাততালি দেন।
সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের ২০২০ সালে গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হয়েছে। ২০২৪ সালে আমাদের আবার এটিকে বাঁচাতে হবে। এটি সহজ, এটি গুরুতর এবং এটি আপনাদের হাতে।’
আসন্ন নির্বাচনকে ‘গণতন্ত্রের আত্মার জন্য যুদ্ধ’ অভিহিত করেন তিনি। বলেন, আমেরিকা ‘সম্ভাবনার একটি জাতি’। অবকাঠামো বিল, ওষুধের দাম এবং জলবায়ু বিলের দিকে ইঙ্গিত করে নিজের আইন প্রণয়নের সাফল্যগুলো তুলে ধরেন।
বাইডেন ‘ভুল’ স্বীকার করেছেন, তবে বলেছেন, তিনি দেশকে তার ‘হৃদয় ও আত্মা’ দিয়ে সেবা করেছেন। তিনি বলেন, আমি আপনাদের জানাতে চাই, আমি আপনাদের সকলের প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ।
বক্তব্যে তিনি অবকাঠামো বিল, ওষুধের দাম এবং জলবায়ু বিলের দিকে ইঙ্গিত করে নিজের আইন প্রণয়নের সাফল্যগুলো তুলে ধরেন।
এদিকে সোমবার রাতে শিকাগোতে ডেমোক্র্যাটিক দলের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চে দেওয়া বক্তৃতায় দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারীকে হোয়াইট হাউসে বসাতে দলের প্রার্থী মনোনয়নে নিজের সমর্থন জোরালোভাবে তুলে ধরেন ডেমোক্র্যাটিক নেতা হিলারি ক্লিনটন। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হিলারি আট বছর আগের বক্তৃতার প্রতিধ্বনি শোনালেন আবারও।
একজন নারীর জন্য প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নের বাধা প্রথম ভেঙে দিয়েছিলেন তিনি। নভেম্বরে আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের উদ্দেশে বলেছেন, সময় এসেছে ‘কাঁচের ছাদ’ ভেঙে ফেলার। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে একজন নারীর জয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতার ইঙ্গিত দিয়ে হাজার হাজার জনতার সামনে তিনি বলেন, ‘একটি বড় দলের (ডেমোক্র্যাটিক) মনোনয়ন জিতে প্রথম নারী হিসেবে আমেরিকার বৃহত্তম কাচের ছাদ ভেঙে দিয়েছিলাম। যখন আমাদের একজনের জন্য একটি বাধা পড়ে, তখন এটি আমাদের সকলের পথ পরিষ্কার করে। ওই নির্বানে শেষ পর্যন্ত রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পরাজয় ঘটে হিলারির।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেন, কমলা হ্যারিসের কাছে মশালটি (দলীয় মনোনয়ন) দেওয়ার সময় এসেছে। কারণ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি হোয়াইট হাউসে একজন নারীকে আনার জন্য মনস্থির করেছে। তিনি বলেন, একসাথে আমরা সর্বোচ্চ শক্ত কাঁচের সিলিংয়ে অনেক ফাটল ফেলেছি। এই কাঁচের ছাদের অন্যদিকে কমলা হ্যারিস তার হাত তুলে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন।
দলীয় সম্মেলেনে যোগ দেওয়া একাধিক নারী প্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদের মতে, হিলারি ক্লিনটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করার পর থেকে সময় অনেক বদলে গেছে। হিলারি নিজেকে একজন নারী হিসেবে তার নির্বাচনী প্রচারে জোর দিয়েছিলেন। তবে কমলা হ্যারিস আপাতদৃষ্টিতে তা এড়িয়ে গেছেন।
তবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একজন নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকে দেশের সর্বোচ্চ পদে পৌঁছানোর মনোভাব যথেষ্ট পরিবর্তিত হয়েছে কিনা তা একটি বড় প্রশ্ন। এ ব্যাপারে হিলারি ক্লিনটন বলেন, এটা সহজ নয়। আমরা মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের চেষ্টা করছি।
নারী রাজনীতিবিদ ও দলীয় প্রতিনিধিরা বলেছেন, তারা রাজনীতিতে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এমন একটি বাধার ঘটনা তুলে ধরেছেন মিশিগানের ইতিহাসে দ্বিতীয় সিনেটর ম্যালরি ম্যাকমরো। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে মিশিগানের রাজ্য সিনেটর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য যখন লড়াই করছিলাম তখন আমার জেলার একজন নারী আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আমি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছি কিনা।’
ম্যাকমরো বলেন, ‘তিনি আমার মুখের ওপর আমাকে বলেছিলেন, এটি মায়ের জন্য কোনো কাজ নয়। তিনি সিনেটর থাকা অবস্থায় সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন।
ফ্লোরিডায় ডেমোক্র্যাটদের প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী চেয়ার জুডি মাউন্ট বলেন, নারীদের জন্য তাদের রাজ্যে রাজনৈতিক পদগুলোতে কাজ করতে সক্ষম হতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। মানুষ শুধু শুধু একজন নারীকে কোনো কিছুর দায়িত্বে দেখতে চায় না।