সামান্য বৃষ্টি ছাড়া ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাব নেই পশ্চিমবঙ্গে, অল্প প্রভাব ওড়িশায়

কলকাতা স্টেশন ফাঁকা দেখা যায়। ছবি: সমকাল
শুভজিৎ পুততুন্ড, কলকাতা
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪ | ১৪:৫১ | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৪ | ১৪:৫১
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাব ব্যাপক হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও তেমন ভয়াবহ আঘাত করেনি। সামান্য বৃষ্টি ও কালবৈশাখীর মতো সাময়িক দমকা হাওয়াতেই পশ্চিমবঙ্গে মিলিয়ে গেল ঘূর্ণিঝড়টি। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব তেমন না থাকলেও ভারী বৃষ্টিপাতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে ওড়িশার জনজীবনে। সব মিলিয়ে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় দানার প্রশাসনিক আতঙ্ক কাটিয়ে ক্রমশ জনজীবন স্বাভাবিক হচ্ছে ভারতের ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে।
সব মিলিয়ে সাড়ে পাঁচশ’র বেশি ট্রেন, তিনশ’র বেশি বিমানযাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ওড়িশার ১৪ জেলাকে বিপজ্জনক ঘোষণা, ৬ হাজার সাইক্লোন শেল্টারে ১০ লাখ ৬৬ হাজার মানুষকে রাতারাতি স্থানান্তর, ২৮৮ উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে ৪ জেলাকে বিপজ্জনক ঘোষণা, ৮৯১ সেন্টারে ১ লাখ ৬৬ হাজার মানুষকে স্থানান্তর। ১৫০ বেশি উদ্ধারকারী দল মোতায়েন। ব্যাপক ত্রাণের ব্যবস্থা। ঘূর্ণিঝড় দানাকে কেন্দ্র করে প্রশাসক তৎপরতা ছিল তুঙ্গে।
ঝড়ের পরিবেশ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য শুক্রবার রাতভর পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক কার্যালয় নবান্নের রাত কাটান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ তার সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। ওড়িশায় সাইক্লোন কমান্ড শেল্টারের রাতভর পর্যবেক্ষণে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি।
পশ্চিমবঙ্গ ওড়িশার পাশাপাশি বিপত্তি এড়াতে অন্ধ্রপ্রদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী পর্যটন কেন্দ্রগুলো পর্যন্ত পর্যটক শূন্য করে দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের তরফ থেকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে কলকাতা ও ভুবেনশ্বরসহ দুই রাজ্যেই সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল বিমান ও রেল পরিষেবা। তবে ঘূর্ণিঝড়ে তেমন কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতি কিংবা জীবনহানির ঘটনার কোনো খবর নেই। তবে অমাবস্যার মড়া কটালের জেরে সৃষ্ট সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস ও দমকা হাওয়ায় ওড়িশার পুরী ও ভদ্রকসহ ১৪টি জেলায় ভারী বৃষ্টি, গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়া। বেশ কয়েকটি কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ওড়িশার ভদ্রক জেলার ধামারা ও ভিতরকণিকা অঞ্চলে সমুদ্রতীরবর্তী বাঁধ ভেঙে বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত খবর নিশ্চিত করেছে ওড়িশা প্রশাসন।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায় এবং পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় ভাঙন এবং জলোচ্ছ্বাসের ফলে বেশ কিছু গ্রাম জলমগ্ন হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার। তবে বড় কোনো বিপত্তি ছাড়াই উতরে গেছে ডানা সংকট।
আজ শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে রেল ও বিমান পরিষেবা পুনরায় চালু হয়ছে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জনজীবন।
কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর বলছে, বঙ্গোপসাগরে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ডানার কারণে অতিরিক্ত নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে শনিবার দিন ভোর বৃষ্টি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের জন্য সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্ত পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বিহার, ঝাড়খন্ড ও উত্তরপ্রদেশের দিকে এগোচ্ছে। যার ফলে এই রাজ্যগুলোতেও মেঘলা আকাশ ও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। আজ
শুক্রবার দুপুর থেকে ফের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল নামে। শারদীয়া মশরুম চলছিল। তার মধ্যে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় দানা এসে পড়ায় রীতিমতো কপালে চিন্তার ভাজ ফেলেছিল কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত কালীপূজা উদ্যোক্তাদের কপালে। যদিও দুর্যোগ কাটিয়ে উঠে পুনরায় উৎসবমুখী হতে পারবে বাঙালি এমনটাই আশা।
অন্যদিকে দুই রাজ্যেই ঘূর্ণিঝড়ের নামে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ত্রাণ বাণিজ্যের অভিযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা।
আবহাওয়া দপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বালেশ্বরে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার। সেখানে হলদিয়ায় বৃষ্টি হয়েছে ৮০ মিলিমিটার আর ডায়মন্ডহারবারে বৃষ্টি হয়েছে ৯৩ মিলিমিটার। ওড়িশার কেন্দ্রাপাড়া সদরে বৃষ্টি হয়েছে ৬৭ দশমিক ২ মিলিমিটার। সেখানে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সাগরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৯০ মিলিমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ভদ্রকের চাঁদবালিতে। ২৪ ঘণ্টায় সেখানে বৃষ্টির পরিমাণ ১৫৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার। ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে কেন্দাপাড়ার রাজকণিকায়।
- বিষয় :
- ঘূর্ণিঝড়
- ঘূর্ণিঝড় ডানা