ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া মুখোমুখি, লড়াইয়ের আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া মুখোমুখি, লড়াইয়ের আশঙ্কা

রাশিয়ার ড্রোন হামলা ঠেকাতে বুধবার ইউক্রেনের কিয়েভের আকাশে সার্চলাইট দিয়ে নজরদারি। ছবি: এএফপি

 সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ০৩:৩৭ | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ০৮:৫১

ইউক্রেন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালানোয় ওয়াশিংটন ও মস্কো মুখোমুখি লড়াইয়ে নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। রাশিয়ার কঠোর সতর্কবার্তা সত্ত্বেও ইউক্রেন মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালায়। পাল্টা হামলার আশঙ্কায় এরই মধ্যে ইউক্রেনে মার্কিন দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে স্পেন, গ্রিস, ইতালিসহ আরও কয়েকটি দেশ।

জরুরি পরিস্থিতিতে বা সংকটকালে দুই পক্ষের মধ্যে আলাপের জন্য যে হটলাইন চালু থাকে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সেটিও আর সচল নেই। এ অবস্থায় ইউক্রেনকে মানববিধ্বংসী স্থলমাইন সরবরাহের অনুমতি দিয়েছে জো বাইডেন প্রশাসন। দেওয়া হবে আরও ২৭৫ মিলিয়ন ডলার অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা। সব মিলিয়ে ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছাচ্ছে। 

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বড় বিমান হামলার শঙ্কায় তারা কিয়েভে দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সামাজিক মাধ্যম এক্সে জানান, দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিয়েভ থেকে এক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, মঙ্গলবার রাতভর দূতাবাস এলাকায় বেশ কয়েকবার বিমান হামলার সাইরেন বেজেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে চরম উত্তেজনার বড় প্রমাণ দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগের গোপন হটলাইন বন্ধ হয়ে যাওয়া। বৈরিতার মধ্যেও বিভিন্ন দেশ এ হটলাইন চালু রাখে। এটি হলো সেই যোগাযোগমাধ্যম, যা সংকট থেকে বের হওয়ার ‘গোপন দ্বার’ হিসেবেও পরিচিত। যে কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে ১৯৬৩ সালে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে এ হটলাইন চালু হয়। 

গতকাল বুধবার রুশ সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, ক্রেমলিন ও ওয়াশিংটনের মধ্যে থাকা বিশেষ হটলাইন বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে না। এতে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে তীব্রতর হচ্ছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে যোগাযোগের অংশ হিসেবে একটি বিশেষ হটলাইন চালু ছিল। এটা এখন বন্ধ রয়েছে।     

সম্প্রতি ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি দেয়। রুশ আগ্রাসনের হাজার দিন পূর্তিতে ইউক্রেন ওই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। এতে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। কারণ, এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ায় আঘাত হানলে তারা ধরে নেবেন, ইউক্রেন নয়, এটা ‍যুক্তরাষ্ট্রেরই হামলা। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র রুশ সীমান্তে ৩০০ কিলোমিটার ভেতরে আঘাত হানতে সক্ষম। এতে রাশিয়ার অনেক বড় শহরই ইউক্রেনের হামলার আওতায় চলে আসতে পারে।    

চলমান উত্তেজনার মধ্যে রাশিয়া তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতিমালা হালানাগাদ করেছে। এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন নীতিমালা অনুমোদন করেছেন। এ নিয়ে গতকাল যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা এতে আশ্চর্য হয়নি। বুধবার পেন্টাগন মুখপাত্র সাবরিনা সিং বলেন, এ ধরনের নীতিমালার বিষয় তারা আগেও দেখেছেন, এখনও দেখছেন। এটা গত দুই বছর ধরেই ঘটছে। 

মস্কো বলেছে, ইউক্রেনকে দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রমাণ করে, পশ্চিমা দেশগুলো এ সংঘাতে উস্কানি দিতে চায়। এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু গতকাল আরেকটি বড় পরিবর্তন ঘটিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তারা ইউক্রেনকে মানববিধ্বংসী স্থলমাইন সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এ স্থলমাইন পেতে যুদ্ধের একেবারে শুরু থেকে লিবিং করছে ইউক্রেন। অবশ্য এরই মধ্যে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মাইন পেয়েছে। বুধবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন নিশ্চিত করেন, বাইডেন প্রশাসন এ স্থলমাইন ব্যবহারে ইউক্রেনকে অনুমতি দেবে। 

স্থলমাইন দেওয়ার মার্কিন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এ পদক্ষেপকে ‘বড় ভুল’ বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। এটা যুদ্ধকে আরও ‘উস্কে দেবে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

মেয়াদের শেষ প্রান্তে থাকা জো বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে বড় ধরনের অর্থ ও অস্ত্র সহযোগিতা দেওয়ারও ঘোষণা করেছে। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি কী হয়, তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, তারা ইউক্রেনকে ২৭৫ মিলিয়ন ডলারের সহযোগিতা দেবেন। অর্থ ছাড়াও রকেট সিস্টেমের বিস্ফোরক, কামান ও ট্যাঙ্কবিধ্বংসী অস্ত্র দেওয়া হবে।  

রাশিয়া ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে দখলে নিচ্ছে। ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারের (আইএসডব্লিউ) তথ্যের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, ২০২৪ সালে রাশিয়া আগের বছরের তুলনায় ছয় গুণ বেশি ভূমি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ইউক্রেন যে আকস্মিক দখলে নিয়েছিল, সে অর্জনও ফিকে হয়ে যাচ্ছে। রুশ সেনারা তাদের পিছু হটাতে বাধ্য করছে। 

আইএসডব্লিউর তথ্যমতে, ইউক্রেনের ১ লাখ ১০ হাজার ৬৫৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলে নিয়েছে রাশিয়া। অপরদিকে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে প্রথম মাসে ১ হাজার ১৭১ বর্গকিলোমিটার এলাকার দখল নেয়। বর্তমানে সেখানে রাশিয়ার হয়ে সম্মুখ লড়াইয়ে রয়েছে উত্তর কোরিয়ার সেনারা। 

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এর জেরে এরই মধ্যে ইউক্রেনের কয়েকশ শহর ধুলোর সঙ্গে মিশে গেছে; বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ; কয়েক হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। যুদ্ধে উভয় পক্ষের লাখের বেশি সেনাসদস্যের প্রাণ গেছে। এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে দেখা দিয়েছে সংকট। অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন

×