কোন পথে দক্ষিণ কোরিয়া
সামরিক আইন জারির জেরে নিজ দলেই বিরোধের মুখে প্রেসিডেন্ট

দক্ষিণ কোরিয়ায় বিক্ষোভ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৯:৩৯ | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩:৩৪
আকস্মিক সামরিক আইন জারি ও দুই ঘণ্টা পর তা তুলে নিয়ে মঙ্গলবার রাতে নিজ দেশের জনগণের পাশাপাশি পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইয়ল। এর জেরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখা দেয় এবং বিরোধী দলের নেতারা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলনে রাস্তায় নামেন। সম্ভবত ইউন সুক-ইয়লের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আর অবশিষ্ট নেই। ইতোমধ্যে পিপল পাওয়ার পার্টির এ নেতা নখদন্তহীন প্রেসিডেন্টে পরিণত হয়েছেন। কারণ, বিগত বছরে বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত টাইম অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
এতে বলা হয়, নানা কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত প্রেসিডেন্ট ইউনের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালে। কিন্তু বিরোধী দলগুলো তাঁর পদত্যাগ দাবি করছে, তা না করলে তাঁকে অভিশংসনের মুখে পড়তে হবে বলেও তারা জানিয়েছে। এ অবস্থায় নিজ দলের ভেতরেই বিদ্রোহের মুখে পড়েছেন ইউন সুক-ইয়ল। নেতারা তাঁকে দেশের জন্য ‘বিপদ’ মনে করছেন। শুক্রবার পিপল পাওয়ার পার্টির প্রধান হ্যাঙ ডং-হুন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বরখাস্ত করা না হলে প্রেসিডেন্ট ইউন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের ‘ভয়ানক বিপদে’ ফেলতে পারেন। তিনি প্রেসিডেন্ট পদে থাকলে সামরিক আইন জারির মতো আরও কঠোর পদক্ষেপ ভবিষ্যতের নিতে পারেন, যা কোরিয়া প্রজাতন্ত্র ও জনগণকে বিপদে ফেলবে। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, সামরিক আইন জারির ঘটনায় ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট ও অন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কৌঁসুলিরা। আজ শনিবার তাঁকে সরাতে অভিশংসনের ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে।
সামরিক আইন জারি প্রসঙ্গে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গি-উক সিন বলেন, এটা ছিল রাজনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী সিদ্ধান্ত। আর সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একই বিভাগের অধ্যাপক ক্যাঙ অউন-তায়েক বলেন, প্রেসিডেন্ট ইউন রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, প্রেসিডেন্ট ইউন কি আদৌ পদত্যাগ করবেন? বিশ্লেষকরা মনে করেন, তিনি পদত্যাগ নাও করতে পারেন। বুসানের ডংসিও ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক সিন ও’মালি বলেন, তাঁর মনে হচ্ছে, ইউন পদত্যাগ করবেন না। কিন্তু তাঁকে বাদ দেওয়া হোক বা না হোক, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর ক্ষমতা এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
৩০০ সদস্যের দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হলে ইউন অবধারিতভাবে পদচ্যুত হবেন। পার্লামেন্টে তাঁর দলের আইনপ্রণেতা আছেন মাত্র ১০৮ জন। এর মধ্যে সবাই তাঁকে ভোট দেবেন না। এক হিসাবে দেখা গেছে, নিজ দলের ১০১ আইনপ্রণেতার সমর্থন তিনি পেতে পারেন। বিরোধী দলের আইনপ্রণেতার সংখ্যা ১৯০ জন। তারা সবাই ইউনের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। ইউন যে স্বল্পকালীন সামরিক আইন জারি করেছিলেন, সেটাকে ‘ভুল’ ও ‘অসাংবিধানিক’ বলে বর্ণনা করেছেন খোদ তাঁর দলের শীর্ষ নেতা হ্যাঙ ডং-হুন।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল থেকে আলজাজিরার ইউনিক কিম জানান, প্রেসিডেন্ট ইউনের পদত্যাগের দাবি নতুন কিছু নয়। তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এ দাবির পালে হাওয়া দিয়েছে। এ অবস্থায় অভিশংসনের মুখে তাঁকে সরে যেতে হলে প্রধানমন্ত্রী হ্যান ডুক-সু তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০২২ সালে নির্বাচিত হন হ্যান ডুক-সু।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতেও। বছরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ইউন শেয়ার মার্কেট চাঙ্গা করার বিষয়ে আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেছিলেন। বছরের যখন শেষ হচ্ছে, তখন ইউন উল্টো চিত্র দেখছেন। তাঁর সামরিক আইন জারির ঘোষণার জেরে এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এখন সংকটে পড়েছে। স্যামসাং রাইজিংয়ের লেখক জিওফ্রে কেইন বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে অর্থনীতি নিরাপদ নয়। সামরিক আইন বাজারকে ভূতুড়ে পরিস্থিতিতে ফেলেছে।
- বিষয় :
- দক্ষিণ কোরিয়া
- বিদ্রোহ