ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর অবস্থা কী

ছবি: আল-জাজিরা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫ | ২০:৫১
ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় শুক্রবার হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। বিবিসি হামলার বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ যাচাই করে পাঁচটি স্থানের তথ্য নিশ্চিত করেছে, যেগুলো দেশটির গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা। এর কয়েকটি রাজধানী তেহরানে, আর বাকিগুলো দেশের অন্যত্র। নিচে ইসরায়েলের হামলায় পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর অবস্থা জানানো হলো:
নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র
নাতাঞ্জ ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্লান্ট (এফইপি) হচ্ছে ইরানের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যা ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু হয়। এখানে ‘সেন্ট্রিফিউজ’ নামের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই প্লান্টের দুটি ইউনিট রয়েছে। এই দুটি ইউনিটেরই অবস্থান মাটির নিচে বিশেষ সুরক্ষা দিয়ে তৈরি, যাতে বিমান হামলার আঘাত থেকে বাঁচানো যায়। তবে শুক্রবারের হামলায় এই কেন্দ্রের ‘অনেক ক্ষতি’ হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
ফোর্দো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র
ফোর্দো কেন্দ্রে হামলার প্রমাণ এখনও মেলেনি। তবে এটিও ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্র। এই স্থাপনাটি তেহরান থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে কোম শহরের কাছে অবস্থিত। এই স্থাপনাটি পাহাড়ের নিচে অনেক গোপনে ও সুরক্ষিত উপায়ে তৈরি হয়েছে, যা ২০০৯ সালে বিশ্বের নজরে আসে।
খোনদাব হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর
খোনদাব রিঅ্যাক্টর আগে আরাক হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর নামে পরিচিত ছিল। এই পারমাণবিক কেন্দ্রটি ইরানের মারকাজি প্রদেশের খোনদাব শহরের কাছে অবস্থিত। এই রিঅ্যাক্টরটি শুরুতে তৈরি করা হয়েছিল গবেষণার জন্য। তবে, এই রিঅ্যাক্টরটি প্লুটোনিয়াম উৎপাদন করতে পারে, যা পারমাণবিক বোমা বানানোর উপাদান। এই রিঅ্যাক্টরের ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল বেশ উদ্বিগ্ন।
ইস্পাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কেন্দ্র
ইস্পাহান পারমাণবিক প্রযুক্তি কেন্দ্র ইউরেনিয়ামকে নানাভাবে প্রক্রিয়াজাত করে ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইড (ইউএফ৬) তৈরি করে। ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইড হলো রিঅ্যাক্টরের জ্বালানি, যা পরে নাতাঞ্জ বা ফোর্দোতে পাঠানো হয় সমৃদ্ধ করতে। এ ছাড়া এখানেই তৈরি হয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি, যার মধ্যে বুশেহর বিদ্যুৎকেন্দ্রও পড়ে।
বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
বুশেহর হলো, ইরানের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা বুশেহর শহরের দক্ষিণে পারস্য উপসাগরের উপকূলে অবস্থিত। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৭৫ সালে জার্মানির সহায়তায়। এখানে ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম রাশিয়া থেকে আনা হয়, আর ব্যবহৃত জ্বালানি আবার রাশিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়। যাতে তা প্রক্রিয়াজাত করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপাদান বানানো না যায়।
তেহরান রিসার্চ রিঅ্যাক্টর
১৯৬৭ সালে আমেরিকার সহায়তায় বানানো এই রিঅ্যাক্টর চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে ক্যান্সারসহ নানা রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় আইসোটোপ তৈরি করতে। আর আইসোটোপ তৈরি করতে এই রিঅ্যাক্টরে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হতো।
পারচিন সামরিক কমপ্লেক্স
তেহরানের দক্ষিণ-পূর্বে পারচিন হলো একটি গোপন সামরিক ঘাঁটি। আইএইএ আগের রিপোর্টে সন্দেহ করেছিল, ইরান পারচিনের এই কমপ্লেক্সটি পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে ব্যবহার করতে পারে। তবে ইরান শুরু থেকেই এমন দাবি অস্বীকার করে আসছে।
তবে ইসরায়েলের হামলার পর ইরানের পারমাণবিক ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে– সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।