ইরাবতীর বিশ্লেষণ
তিন যুগের লড়াইয়েও গণতন্ত্র অধরা মিয়ানমারে

ছবি: ইরাবতী
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫ | ০৬:২২
১৯৮৮ সালে মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল লাখো মানুষ। ছাত্রদের হাত ধরে শুরু হওয়া সেই গণআন্দোলন দেশটির সামরিক একনায়ক নিও উইনের পদত্যাগ নিশ্চিত করলেও প্রকৃত অর্থে দেশটি কখনোই গণতন্ত্রে পৌঁছতে পারেনি। ৩৭ বছর পরও মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চলছে। প্রশ্ন উঠছে, এত সময়েও কেন গণতন্ত্র অধরাই রয়ে গেছে মিয়ানমারে।
মিয়ানমারের জনগণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বহু পথ বেছে নিয়েছে। অহিংস আন্দোলন, নির্বাচন, আন্তর্জাতিক কূটনীতি, ধর্মীয় প্রতিবাদ– এমনকি সশস্ত্র প্রতিরোধও। কিন্তু প্রতিবারই সেনাবাহিনী শক্তি প্রয়োগ করে সব উদ্যোগ দমন করেছে। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থি দল ঐতিহাসিক জয় পেলেও সেনাবাহিনী সেই ফলাফল মানেনি। তিন দশক পর ২০২০ সালের নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বের অনেক দেশেই এমন অহিংস বিপ্লব সফল হলেও মিয়ানমারের বেলায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। দেশটির সেনাবাহিনী কখনোই জনগণের ইচ্ছাকে মর্যাদা দেয়নি।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও। ২০০৭ সালের ‘স্যাফরন বিপ্লব’ যার বড় প্রমাণ। তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও বর্বর হামলা চালায় সেনারা।
মিয়ানমারকে গণতন্ত্রে ফেরাতে আন্তর্জাতিক মহল থেকেও নানা চেষ্টা করা হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সহযোগিতা স্থগিত করেছে। আবার কিছু সময় ‘গঠনমূলক সংলাপ’ বা ‘পরোক্ষ সহযোগিতা’র পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, যেভাবেই হোক, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছাড়ার চেয়ে দমননীতিকেই বেছে নিয়েছে। আসিয়ানের মতো জোট এই প্রশ্নে বরাবরই নীরব থেকেছে। আবার বেশির ভাগ সময়ই সেনাশাসকদের পক্ষ নিয়েছে চীন।
অবশেষে ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর সাধারণ তরুণদের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর যুবকরা সহিংস বিদ্রোহের চেষ্টায় অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। এই সশস্ত্র প্রতিরোধ প্রথমে বড় সাফল্য আনে। তবে চীনের হস্তক্ষেপ ও রাজনৈতিক চাপের কারণে এখন কিছুটা স্তিমিত তারা।
এত চেষ্টার পরও যখন গণতন্ত্র আসেনি, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, মিয়ানমারে গণতন্ত্র কি শুধুই এক স্বপ্ন? তবে মিয়ানমারের বহু নাগরিক মনে করেন, ‘যতদিন সংগ্রাম থাকবে, ততদিনই আশা থাকবে।’ কারণ এই সংগ্রাম মিয়ানমারের অস্তিত্ব, সংস্কৃতি ও ভবিষ্যতের লড়াই।
- বিষয় :
- মিয়ানমার