বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্লোভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক উদ্যোগ

স্লোভেনিয়া সংবাদদাতা
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২১ | ২৩:১৭
করোনার ভয়াল থাবায় থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। সেই সাথে গোটা পৃথিবীর অর্থনীতিতে বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন।
তবে করোনার আঘাতে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় নেমে এসেছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। প্রায় এক বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন তাদের অবস্থা সবচেয়ে বেশি সঙ্কটাপন্ন।
ইউরোপ কিংবা আমেরিকা অথবা অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে যেসব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান তাদের অনেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকুরিতে মনোনিবেশ করেন। যার মাধ্যমে তাদের অনেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের সংস্থান করেন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে তাদের অনেকে দীর্ঘ সময় ধরে সাময়িকভাবে এসব খণ্ডকালীন চাকরি থেকে বিচ্ছিন্ন। বিভিন্ন দেশে সরকারের পক্ষ থেকে কর্মজীবীদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করা হলেও শিক্ষার্থীরা থেকে গিয়েছেন তার বাইরে। অনেক দেশে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের নিজেদের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কোনও উদ্যোগ এসব দেশের সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়নি।
মধ্য ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়ার অবস্থাও অনেকটা এরকম, করোনা পরিস্থিতিতে স্লোভেনিয়ার সরকার সকল শিক্ষার্থীদেরকে ১৫০ ইউরো আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন, তবে যেসব শিক্ষার্থীর স্লোভেনিয়ার পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পারমিট নেই তাদেরকে এ প্রণোদনার আওতায় আনা হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তা করার জন্য নিজেদের উদ্যোগে এগিয়ে এসেছে দেশটির অন্যতম প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা।
শুক্রবার ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছার স্কুল অব সায়েন্সের ডিন প্রফেসর ড. সান্দ্রা গার্দোনিও এক জুম মিটিংয়ে বলেন, করোনা পরিস্থিতি সত্যি আমাদের সবার জীবনকে এক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে, আমাদের অধীনে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছেন যাদের অবস্থা এ মুহূর্তে সবচেয়ে সঙ্কটাপন্ন। সরকারের পক্ষ থেকে স্লোভেনিয়ান শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার কথা বলা হলেও বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কোনও ঘোষণা তারা দেয়নি। তাই এ মুহূর্তে যদি কোনও শিক্ষার্থী কোনও ধরনের আর্থিক সঙ্কটে পড়েন তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে সহায়তা করা হবে। আমরা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো এবং তাদের বাড়ি ভাড়ার খরচ আমরা ফ্যাকাল্টির পক্ষ থেকে বহন করার চেষ্টা করবো।
প্রফেসর সান্দ্রা আরও বলেন, করোনা মোকাবেলায় প্রথম ধাপে স্লোভেনিয়া ছিল ইউরোপের সবচেয়ে সফল দেশগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে এসে এতোটা খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা যাবো সেটা কখনও ভাবিনি। প্রত্যেক দিন গড়ে এ দেশের দেড় হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে কোনোভাবে আগামী সেমিস্টারে ইউনিভার্সিটি খোলা সম্ভব নয়, তবে কিছু কিছু কোর্স আছে বিশেষত ল্যাব কোর্সগুলোতে স্টুডেন্টদেরকে স্বশরীরে ইউনিভার্সিটিতে উপস্থিত থাকতে হয়। আমরা তাই সীমিত পরিসরে আগামী মাস থেকে ইউনিভার্সিটি খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ সময় শুধু ল্যাব ক্লাসগুলো চালু থাকবে এবং কোনো ক্লাসে একজন শিক্ষার্থী ও একজন প্রশিক্ষকের বাইরে অন্য কেউ উপস্থিত থাকতে পারবে না। সবাইকে এ সময় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, ল্যাব ক্লাসগুলোর ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার তালিকায় আমরা বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রথম দিকে রাখছি। তারা তাদের নিজেদের দেশ ছেড়ে এখানে এসেছেন উচ্চশিক্ষার জন্য, তাই তাদেরকে সবার প্রথমে সহায়তা করা আমাদের দায়িত্ব।
প্রফেসর সান্দ্রার এ ঘোষণায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সকল শিক্ষার্থী। ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছার স্কুল অব সায়েন্সের স্প্যানিশ শিক্ষার্থী আদ্রিয়ান গঞ্জালেজ জানান, যদিও এ মুহূর্তে আমি স্পেনে অবস্থান করছি কিন্তু এ ধরনের ঘোষণা আমরা যারা বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছি আমাদের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী এখনও নোভা গোরিছা কিংবা আইডোসচিনার আশেপাশে রয়েছেন বাসা ভাড়া নিয়ে অন্তত তাদের কোনও সমস্যা হবে না। পাশাপাশি ল্যাব ক্লাসগুলোর ক্ষেত্রেও আমাদেরকে অগ্রাধিকারে রাখা হয়েছে যাতে আমাদের মধ্য থেকে কেউ ক্লাস যদি দ্রুত শেষ করে আবার নিজ দেশে ফিরে আসতে চায় তাহলে কোনও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে না।
এদিকে স্কুল অব সায়েন্সের এক স্লোভেনিয়ান শিক্ষার্থী পিটার ব্রুম্যাট সমকালকে বলেন, স্লোভেনিয়া অত্যন্ত ছোটো দেশ। তবে এ দেশটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধা রয়েছে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় স্লোভেনিয়াতে অনেক কম খরচে পড়াশুনা করা যায় এবং এখানে জীবনযাত্রার ব্যয়ও খুব বেশি উচ্চ নয়। অল্প কিছু সংখ্যক স্লোভেনিয়ান ছাড়া আমাদের মধ্যে প্রায় সবাই ইংরেজিতে পারদর্শী এবং আমি মনে করি বর্ণবাদ সমস্যাও এখানে তেমন একটা প্রবল নয়। তবে আমরা এখনও জাতি হিসেবে অনেকটা রক্ষণশীল এবং এ কারণে আমরা আমাদের দেশকে সেভাবে বাইরের পৃথিবীর কাছে পরিচয় করাতে পারি নি। ব্যক্তিগতভাবে আমি আমাদের দেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমনকে আরও উৎসাহ করি এবং আমি চাই মেধা ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তারাও আমাদের দেশে অবদান রাখুক।
- বিষয় :
- করোনাভাইরাস
- স্লোভেনিয়া