করোনা প্রতিরোধ করবে সাপের বিষ, দাবি গবেষকদের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ০৪:২৮ | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ০৪:২৮
সাপের বিষ দিয়ে যে অনেক জটিল রোগ সারানো সম্ভব তা বিভিন্ন পরীক্ষা ও গবেষণায় প্রমাণিত। সম্প্রতি এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, সাপের বিষ দিয়ে করোনা সংক্রমণও কমিয়ে আনা সম্ভব।
ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক পরীক্ষা করে দেখেছেন, সাপের বিষে থাকা বিশেষ একটি উপাদান প্রাণীকোষে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। খবর রয়টার্সের
আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নাল মলিকিউলে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে, সাপের বিষ থেকে পাওয়া ওই উপাদান প্রাণীদেহে করোনাভাইরাসের বিস্তার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিরোধে সক্ষম।
প্রাথমিকভাবে বানরের কোষে এই বিষের প্রয়োগ করে এ ফলাফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
ব্রাজিলের ওই সাপের নাম জারারাকুসু পিট ভাইপার। প্রকৃতিগত ভাবে মারাত্মক বিষধর এই রাপ। তারই বিষের একটি অণু-উপাদান করোনাভাইরাসের গুরুত্বপূর্ণ এক স্পাইক প্রোটিনকে অকেজো করতে পারছে বলে দাবি করছেন গবেষকরা।
ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং এই গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক রাফায়েল গুইডো জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, সাপের বিষের এই উপাদানটি ভাইরাসটির বিস্তারে বাধা দিতে সক্ষম। তিনি আরও জানান, মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীদেহে প্রবেশের পর অকল্পনীয় দ্রুতগতিতে বংশবিস্তার করতে থাকে করোনাভাইরাস, যার পরিণতিতে অসুস্থতা, গুরুতর অসুস্থতা ও সবশেষে মৃত্যু ঘটে থাকে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর। ভাইরাসটির ভেতরকার এক প্রকার এনজাইম বা জৈব উপাদান পিএলপ্রোর প্রভাবেই এত দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে এটি।
গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসকে রোধ করতে সক্ষম হয়েছে জারারাকুসুর বিষে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিডের একটি শৃঙ্খল। এই শৃঙ্খল করোনা ভাইরাসে থাকা এক ধরনের এনজাইমের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে দেয়। ওই এনজাইমের নাম পিএল প্রো। প্রাণীকোষের ভিতর করোনা ভাইরাসকে সংখ্যায় বাড়তে সাহায্য করে এই এনজাইমই। অ্যামিনো অ্যাসিডের শৃঙ্খল একে অকেজো করতে পারে বলে দাবি করছেন গবেষকরা।
অধ্যাপক রাফায়েল গুইডো বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, জারারাকুসু পিট ভাইপারের বিষে এক ধরনের বিশেষ কোষ থাকে। একে আমরা বলছি পেপটাইড বা অ্যামাইনো এসিডের যৌগ, যা করোনাভাইরাসের এনজাইম পিএলপ্রোর নিঃসরণ ব্যাপকমাত্রায় হ্রাস করতে সক্ষম। এই কোষটির উপস্থিতি মানবদেহে থাকলে করোনাভাইরাসের বংশবিস্তার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকী মলিকিউলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জারারাকুসু পিট ভাইপারের বিষ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার পর ব্রাজিলের পরিবেশবাদী ও প্রাণী সংরক্ষণবাদী সংগঠনসমূহ উদ্বেগ বোধ করছে।
এ ব্যাপারে ব্রাজিলের একজন পরিবেশকর্মী ও সাওপাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গিউসেপ্পে পুয়োর্তো এ বলেন, আমাদের ভয় হচ্ছে, এসব তথ্য জানার পর অনেকেই হয়তো পৃথিবীকে বাঁচাবে মনে করে সাপের বিষ সংগ্রহে নামবে। বিষযটা এমন নয়, সাপের বিষ নিজেই করোনা সারাবে।
গবেষকরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে এখনও অনেক গবেষণা বাকি। জারারাকুসু বিষের ওই বিশেষ অণু উপাদান কতটা পরিমাণে কী ভাবে দেওয়া হতে পারে, কতটা প্রয়োগ করলে শরীরের ক্ষতি হবে না— এই সব প্রশ্নের উত্তর এখনও জানা যায়নি। এর পাশপাশি বিজ্ঞানীরা আরও একটি বিষয়ও জানার চেষ্টা করছেন। তা হল, করোনা ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর তাকে ঠেকানোর ক্ষমতা যেমন আছে তেমনই প্রাণীকোষে করোনার প্রবেশও কি আটকাতে পারবে ওই উপাদান? গবেষকরা জানিয়েছেন, জবাব পেলে তবেই পরীক্ষামূলক ভাবে মানবদেহে প্রয়োগ করা হবে উপাদানটি।
জারারাকুসু ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম বড় সাপ। এই সাপের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ ফুট।
- বিষয় :
- করোনাভাইরাস
- সাপের বিষ
- করোনা সংক্রমণ