গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তি: বিশ্বাসঘাতকতা না নতুন শুরু

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২১ | ২১:৫১ | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২১ | ২১:৫১
অনেক আশা নিয়ে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হওয়া কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলন শেষ হলো বিতর্কিত এক চুক্তির মাধ্যমে। এই চুক্তির নাম দেওয়া হয়েছে 'গ্লাসগো ক্লাইমেট প্যাক্ট'।
স্থানীয় সময় শনিবার রাতে চুক্তি ঘোষণার পরই এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছেন বিশ্বনেতা ও পরিবেশবাদীরা। দু'পক্ষ দুই মেরুতে অবস্থান করছে। এক পক্ষের অভিযোগ, কপ২৬ সম্মেলন থেকে বিশ্ববাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। তবে ধনী দেশগুলোর নেতা ও মধ্যস্থতাকারীরা একে বিশ্বকে বাঁচানোর নতুন যাত্রা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। খবর বিবিসি, এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান ও আলজাজিরার।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার সর্বসম্মত প্রতিশ্রুতিকে গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তির বড় সাফল্য দেখানো হচ্ছে। এবারই প্রথম কয়লার ব্যবহার ধীরে ধীরে হ্রাস করার বিষয়টি চুক্তিতে যুক্ত হয়েছে। প্যারিস চুক্তিতে এটি ছিল না।চুক্তিতে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে প্রতি বছর সব দেশকে বিস্তারিত পরিকল্পনা জাতিসংঘকে জানাতে হবে। আগে যেখানে পাঁচ বছর অন্তর এই পরিকল্পনা প্রকাশ করা হতো, সেখানে এটি এক বছর অন্তর করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।
গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলন থেকে আর যেসব সাফল্য এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে- তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির নিচে রাখতে দশকজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যৌথ ঘোষণা, ২০৩০ সালের মধ্যে বন ধ্বংস বন্ধ করা নিয়ে ১০০টি দেশের নেতার ঘোষণা, ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমাতে ১০০টি দেশের ঘোষণা এবং কয়লা ব্যবহার বন্ধে ৪০টি দেশের ঘোষণা।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া ২০০টি দেশের প্রতিনিধিদের বেশিরভাগই অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন। শেষ মুহূর্তে সম্মেলনের সভাপতি যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী অলোক শর্মা চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে না পেরে ভেঙে পড়েছিলেন। এ জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন।
গতকাল চুক্তির প্রতিক্রিয়ায় অলোক শর্মাই বলেছেন, এটি একটি ভঙ্গুর চুক্তি হয়েছে। তবে এই ব্যর্থতার জন্য তিনি ভারত ও চীনকে দুষেছেন। কয়লার ব্যবহার হ্রাস নিয়ে দুই দেশকে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলেছেন তিনি।
এর পরও গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তিকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় 'ঐতিহাসিক পথনির্দেশক' হিসেবে অভিহিত করেছেন কপ২৬ সম্মেলনের আয়োজক দেশ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তবে তিনি এ-ও স্বীকার করেছেন, এখনও অনেক কাজ করা বাকি রয়েছে। জনসনের সুরেই কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি। তিনি এই চুক্তিকে নতুন দিনের পথচলার নির্দেশক হিসেবে বর্ণনা করে একে ঐতিহাসিক অর্জন বলে অভিহিত করেছেন।
জলবায়ু চুক্তি নিয়ে কিছুটা আশার আলো অনেক নেতার মুখে উচ্চারিত হলেও পরিবেশবিদ ও জলবায়ু রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা একেবারেই হতাশ। জলবায়ু সম্মেলনকে ঘিরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিবেশবিষয়ক এনজিও নিয়ে গড়ে ওঠা সবচেয়ে বড় জোট 'কপ২৬ কোয়ালিশন' গ্লাসগো চুক্তিকে উন্নত দেশের নেতাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হওয়ার নজির বলে বর্ণনা করেছে। কারণ, এই চুক্তি দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পথ দেখায়নি। তহবিলের নিশ্চয়তা দেয়নি।
জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা টুনবার্গ এই চুক্তিকে 'ভুয়া' বলে বর্ণনা করে বিশ্বনেতাদের সঠিক পথে আনতে তরুণ সমাজকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই বলেছেন, বিশ্বনেতারা প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। দ্বীপ দেশগুলোর জোট বলেছে, তারা খুবই হতাশ। এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে গতকাল দেশে দেশে বিক্ষোভ হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চুক্তিকে স্বাগত জানালেও তিনি একে খুবই অপ্রতুল পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা জলবায়ু বিপর্যয়ের দুয়ারে কড়া নাড়াচ্ছি। এখনই জরুরি ভিত্তিতে উত্তরণের জন্য কাজ করতে হবে।