দিবস
ডিম্বাশয় ক্যান্সার: অবহেলা নয়, অভিযোজন

প্রতিবছর ৮ মে বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫ | ১৮:৫৭
প্রতিবছর ৮ মে বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবস পালন করা হয়, যার লক্ষ্য ডিম্বাশয় ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পেট ফাঁপা, পেলভিক ব্যথা এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের মতো লক্ষণ প্রায়ই অলক্ষিত থাকে। অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করা হয় উন্নত পর্যায়ে, যা চিকিৎসাকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবস প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়, উন্নত চিকিৎসার বিকল্প এবং আক্রান্তদের জন্য শক্তিশালী সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবসের ইতিহাস এবং তাৎপর্য সম্পর্কে জানা যায়, বিশ্ব ওভারিয়ান ক্যান্সার দিবস ২০১৩ সালে বিশ্বজুড়ে ডিম্বাশয় ক্যান্সারের পক্ষে প্রচারণাকারী সংস্থাগুলোর একটি দল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিভিন্ন দেশের নেতাদের একটি বৈঠক থেকে এ ধারণা এসেছে, যারা প্রায়ই উপেক্ষিত এ রোগ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির জরুরি প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন। ভারতের বিশেষায়িত হাসপাতাল ম্যাক্স হেলথকেয়ার ইনস্টিটিউট লিমিটেডের অনকোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. সুমন লাল এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সবচেয়ে ভয়াবহ স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত ক্যান্সারের মধ্যে একটি হওয়া সত্ত্বেও ওভারিয়ান ক্যান্সার অন্যগুলোর তুলনায় অনেক কম মনোযোগ পায়! এর মূল কারণ হতে পারে লক্ষণগুলো অস্পষ্ট এবং রোগটি উন্নত পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত প্রায় সময়ই উপেক্ষা করা হয়। এ ছাড়া পারিবারিক এবং সামাজিক সীমাবদ্ধতা তো আছেই।’
ডিম্বাশয় ক্যান্সার ডিম্বাশয়ে শুরু হয়। নারীদের পেলভিসের ছোট অঙ্গ– যা ডিম্বাণু এবং হরমোন উৎপন্ন করে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামে। এটি তখন ঘটে যখন ডিম্বাশয়ের অস্বাভাবিক কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং যদি দ্রুত শনাক্ত না করা হয়, তবে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিভিন্ন ধরনের ডিম্বাশয় ক্যান্সার রয়েছে, যার মধ্যে এপিথেলিয়াল ডিম্বাশয় ক্যান্সার সবচেয়ে সাধারণ। এই রোগটি বিশেষভাবে গুরুতর হয়ে ওঠার কারণ এটি প্রায়ই প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো স্পষ্ট লক্ষণ দেখায় না, যা ইতোমধ্যে অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত শনাক্ত করা কঠিন করে তোলে। প্রাথমিক রোগ নির্ণয় সফল চিকিৎসার সম্ভাবনা উন্নত করতে পারে, যে কারণে সচেতনতা এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডিম্বাশয় ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি বোঝা যায়নি। তবে ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু কারণ জানা যায়। এর মধ্যে জিনগত, পরিবেশগত এবং হরমোনজনিত প্রভাবের সংমিশ্রণ অন্তর্ভুক্ত। সাধারণ ঝুঁকির কারণ হচ্ছে ডিম্বাশয়, স্তন বা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস; বংশগত জিন পরিবর্তন; বয়স, বিশেষ করে ৫০ বছরের বেশি বয়সী বা মেনোপজের পরে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে; এন্ডোমেট্রিওসিস, এমন একটি অবস্থা– যেখানে জলবায়ুর আস্তরণের মতো টিস্যু এর বাইরে বৃদ্ধি পায়; হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি) দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার; বন্ধ্যত্ব অথবা কখনও অন্তঃসত্ত্বা না হওয়া। ডিম্বাশয় ক্যান্সার প্রায় তখনই শুরু হয়, যখন ডিম্বাশয়ের কোষগুলো তাদের ডিএনএতে পরিবর্তন করে। ফলে অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটে। তবে এই ঝুঁকিপূর্ণ কারণের এক বা একাধিক থাকার অর্থ এই নয় যে, একজন নারীর অবশ্যই এই রোগ হবে। এটি শুধু আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। গবেষকরা এখনও অনুসন্ধান করছেন যে এই পরিবর্তনগুলো কী কারণে শুরু হয় এবং কীভাবে আগে থেকে শনাক্ত করা যায়।
ডিম্বাশয় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যান্সার কোয়ালিশন। ২০১৩ সালে বিশ্বজুড়ে ডিম্বাশয় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একদল নেতার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি ৮ মে বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবস পালনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। প্রতিবছর এই দিনটিকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী ডিম্বাশয় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়। বিশ্ব ওভারিয়ান ক্যান্সার দিবস হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রধান উদ্যোগ। বিশ্বজুড়ে ২০০টিরও বেশি দেশ ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যান্সার কোয়ালিশন সংস্থার সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যান্সারবিষয়ক সচেতনতার ব্যাপ্তি ত্বরান্বিত করে আসছে।
বিশ্ব ডিম্বাশয় ক্যান্সার দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় সচেতনতার ফলে যে কোনো রোগের সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। সুতরাং এসব ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। রোগকে অবহেলা নয়, অভিযোজন জরুরি।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: সাংবাদিক
[email protected]