ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ওমর ফারুক চৌধুরীর বিদায় কি সমাগত

ওমর ফারুক চৌধুরীর বিদায় কি সমাগত

অমরেশ রায়

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০১৯ | ১৫:৩৬ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯ | ১৫:৫৬

এক সময় দোর্দণ্ড প্রতাপে সংগঠন চালিয়েছেন। যুবলীগে তার কথাই ছিল 'চূড়ান্ত'। সব সময় তোপের মুখে থাকতে হতো কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। সেই যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এখন সংগঠনের মধ্যে অনেকটাই কোণঠাসা। মনে হচ্ছে তার বিদায় সমাগত। ওমর ফারুককে বাদ দিয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন তথা জাতীয় কংগ্রেস আয়োজনের দাবি উঠেছে সংগঠনের নেতাদের মধ্য থেকেই। একজনকে 'ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান'-এর দায়িত্ব দিয়ে সংগঠনের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার দাবিও তুলে ধরেছেন নেতারা। তবে তাকে বাদ দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন বেশিরভাগ নেতা। চলমান ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মধ্যে  ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব ও বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এরপর থেকে তিনি অনেকটাই লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন। তিন সপ্তাহ ধরে আসছেন না সংগঠনের কার্যালয়েও।

সর্বশেষ গত শুক্রবার তাকে ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের জরুরি বৈঠক। সেখানে তার 'ক্যাসিয়ার' হিসেবে পরিচিত যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিসকে বহিস্কার করা হয়েছে সংগঠন থেকে। যুবলীগের কম্পিউটার অপারেটর থেকে দপ্তর সম্পাদক পদে উঠে আসা আনিসের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দরপত্র থেকে কমিশন আদায় এবং সংগঠনের বিভিন্ন কমিটিতে পদ-বাণিজ্য করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তবে গত পনেরো দিন ধরে আত্মগোপনে থাকা কাজী আনিস সংগঠনের কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন না। এমনকি বাড়িতেও পাওয়া যাচ্ছে না তাকে।

কয়েকজন যুবলীগ নেতা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত মাসে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই এমনিতেই যুবলীগে টালমাটাল অবস্থা। এই অভিযান শুরুর একদিন পরই যুবলীগ চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাব-পুলিশের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সংগঠনকে আরও বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেন। প্রকারান্তরে প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থান ও সিদ্ধান্তকেই চ্যালেঞ্জ করে বসেন তিনি। সেই সঙ্গে সংগঠনের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ করেন। ফলে সংগঠনের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য নিজের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না ওমর ফারুক চৌধুরী। এসব কারণেই তাকে ছাড়াই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজন এবং স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা গেলে সংগঠনকে বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে কিছুটা হলেও উত্তরণ ঘটানো যেতে পারে।

একাধিক নেতা জানান, ওমর ফারুক চৌধুরী সংগঠনে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছিলেন, তার কথাই সবাইকে মানতে হতো। এমনকি তাকে 'স্যার' বলেও সম্বোধন করতে বাধ্য করা হতো কেন্দ্রীয় নেতাদের। কথায় কথায় গালাগাল, হুমকি-ধমকিসহ অস্বাভাবিক আচরণ প্রদর্শনও ছিল নিয়মিত ঘটনা।

সূত্র মতে, ওমর ফারুককে ছাড়া অনুষ্ঠিত শুক্রবারের বৈঠকেও যুবলীগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তার কারণেই যুবলীগের বর্তমান অবস্থা বলে অভিযোগ করেন অনেক নেতা। প্রেসিডিয়ামের অনেক সদস্য পদবাণিজ্যসহ ক্যাসিনো, দরপত্র ও চাঁদাবাজির কমিশন পেয়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার অভিযোগও করেন তার বিরুদ্ধে। তার প্রশ্রয়ে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও তার বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে পরিচিত নগর দক্ষিণের সহসভাপতি এনামুল হক আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা, ঠিকাদার জি কে শামীমসহ অন্য নেতারা অপকর্ম করে আসছিলেন বলেও অভিযোগ করছেন অনেকে। এ অবস্থায় কাউকে 'ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান' করে ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসকে এগিয়ে নেওয়ার দাবিও ওঠে ওই বৈঠকে।

অবশ্য ওমর ফারুকের অনুপস্থিতিতে শুক্রবারের বৈঠকে সভাপতিত্ব করা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ পরে সাংবাদিকদের জানান, সংগঠনের চেয়ারম্যানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন শুধু প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

সংগঠনের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি এবং মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের শীর্ষ কয়েকজন নেতার গ্রেফতার ও সিংহভাগ আত্মগোপনে থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এক ধরনের অচলাবস্থা চলছে যুবলীগে। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদের ওপরও ক্ষুব্ধ অনেকেই। এ অবস্থায় ২৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সম্মেলনসহ এর আগেই মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন অনুষ্ঠান নিয়েও নানা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কে কীভাবে এই সম্মেলন আয়োজনে নেতৃত্ব দেবেন কিংবা ভূমিকা রাখবেন, সেটা নিয়েও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। সংগঠনের কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিনিয়র নেতা শিগগিরই এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

×