ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

চেয়ারম্যান ছাড়াই যুবলীগের বৈঠক

চেয়ারম্যান ছাড়াই যুবলীগের বৈঠক

ওমর ফারুক চৌধুরী -ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০১৯ | ০৯:৫০ | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ | ১০:১১

বিতর্কের মুখে থাকা যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে ছাড়াই প্রথমবারের মতো সংগঠনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠক হলো। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ।

শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই জরুরি বৈঠক হয়।

ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর ওমর ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়। এরই মধ্যে তার ব্যাংক হিসাব তলব এবং সরকারের অনুমতি ছাড়া তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে তিনি কার্যালয়েও যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

প্রেসিডিয়াম বৈঠকে আত্মগোপনে থাকা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিসকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন এবং সংগঠনের তহবিল তছরুপের দায়ে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এ ব্যবস্থা নেওয়া হলো।

তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দীপু সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে কাজী আনিসকে বহিষ্কারের ব্যাপারে প্রেসিডিয়াম সদস্যরা একমত হয়েছেন। তাই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে কি-না, সে সিদ্ধান্ত বৈঠকে হয়নি।

সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে ছাড়াই বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে তিনি বলেন, সভা ডাকার অনুমতি চেয়ারম্যান দিয়েছেন। চেয়ারম্যানের নির্দেশেই এই সভা হয়েছে। তবে তিনি কেন আসেননি সে বিষয়টি জানা নেই। হয়তো অসুস্থতার কারণে আসেননি।

কী কারণে আনিসকে বহিষ্কার করা হয়েছে জানতে চাইলে যুবলীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক এ বি এম আমজাদ হোসেন বলেন, কাজী আনিসের দুর্নীতির কথা পত্রপত্রিকায় এসেছে। এ ছাড়া তহবিল তছরুপের কারণেও তাকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

যুবলীগের আসন্ন সম্মেলনে সভাপতিত্ব কে করবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে। চেয়ারম্যান একটি বড় পদ। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন, যুবলীগ সেটাই করবে। বৈঠক শেষে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।

চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দরপত্র থেকে কমিশন আদায় এবং সংগঠনের বিভিন্ন কমিটিতে পদ-বাণিজ্য করে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। ১৫ দিন ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ২০০৫ সালে কাজ শুরু করেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের ছেলে কাজী আনিস। কম্পিউটারে নিয়মিত সারাদেশের যুবলীগ কমিটির তালিকা তৈরি করতে গিয়ে সব তথ্য তার মুখস্থ ছিল। কাজের মাধ্যমে সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হয়ে যান তিনি। ২০১২ সালে যুবলীগের সম্মেলনের পর নতুন কমিটি গঠনের সময় আনিসকে উপ-দপ্তর সম্পাদক করা হয়। দপ্তর সম্পাদক পদটি খালি থাকায় ছয় মাসের মধ্যে ওই পদ পেয়ে যান তিনি। এর সাত বছরের মাথায় এখন একাধিক গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমির মালিক তিনি।

শুক্রবারের বৈঠকে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন শহীদ সেরনিয়াবাত, শেখ শামসুল আবেদীন, আলতাব হোসেন বাচ্চু, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মজিবুর রহমান চৌধুরী, ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরন, আবদুস সাত্তার মাসুদ, আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন, আবুল বাশার, মোহাম্মদ আলী খোকন, আনোয়ারুল ইসলাম, প্রকৌশলী নিখিল গুহ, শাহজাহান ভূঁইয়া মাখন, ডা. মোখলেছুজ্জামান হিরু প্রমুখ।

আরও পড়ুন

×