শঙ্খ চরে সবজি উৎপাদনে শঙ্কা

চন্দনাইশে শঙ্খ নদের চরে একটি ক্ষেতে মুলার বীজ বপন করছেন চাষিরা সমকাল
মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:১৩
দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি মৌসুমে শঙ্খ নদের চরে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ঘটেছে ছন্দপতন। দুই মাস দেরিতে শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হলেও এবার কৃষকরা লোকসানে পড়বেন।
সরকারি হিসেবে রবি মৌসুম শুরুর দুই থেকে আড়াই মাস আগেই শীতকালীন শাকসবজির আবাদ শুরু করেন চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলা সীমান্তের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শঙ্খ নদের চর ও তীরবর্তী অঞ্চলের কৃষকরা। কিন্তু বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় চলতি মৌসুমে এখনও পুরোপুরি শীতকালীন সবজি উৎপাদনে যেতে পারেননি কৃষকরা। অথচ বিগত মৌসুমগুলোয় অক্টোবর মাসের শুরু থেকেই আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে বিক্রি করে প্রচুর লাভবান হতেন তারা।
জানা যায়, চলতি মৌসুমে আগাম শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষকরা ২ মাস আগে থেকে জমি প্রস্তুত করে আগাম বীজ বুনলেও বৃষ্টিতে তা নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে কৃষকরা ২-৩ বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বৃষ্টির বাধায় অনেক কৃষক জমি প্রস্তুত করে রাখলেও এখনও বীজও রোপণ করতে পারেননি। তবে গত সপ্তাহ থেকে কৃষকরা জমি প্রস্তুত ও শীতকালীন সবজির বীজ বপন শুরু করেছেন। তাই চলতি মৌসুমে শঙ্খ চরের সুস্বাদু শীতকালীন অন্যতম সবজি মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, টমেটো, ধনেপাতাসহ অন্য সবজি পেতে আরও ২ মাস অপেক্ষা করতে হবে। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক লাখ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছেন।
কৃষকরা জানান, সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের বাজারগুলোয় শঙ্খ চরে উৎপাদিত আগাম শীতকালীন শাকসবজি বিক্রি শুরু হতো।
সরেজমিন দেখা যায়, শঙ্খের চরে এখনও খালি পড়ে রয়েছে চাষযোগ্য বিস্তীর্ণ জমি। অনেক কৃষক জমি প্রস্তুত করে ফেলে রেখেছেন। আবার অনেকে এখনও জমি প্রস্তুত করেননি। কিছু কিছু জমিতে কৃষকরা সবজির বীজ বপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিছু জমিতে সবজির চারা গজিয়ে উঠেছে। অথচ বিগত মৌসুমগুলোয় অক্টোবর মাসের এ সময় হরেক রকম সবজিতে পুরো চরাঞ্চল ভরে উঠত। পুরোদমে শীতকালীন সবজি বাজারে বিক্রি শুরু হতো। অথচ এখন সবেমাত্র জমি প্রস্তুত, নতুন চারা রোপণ, সার, কীটনাশক প্রয়োগসহ ক্ষেতের পরিচর্যা চলছে।
শঙ্খ চরের কৃষক আবু বক্কর, নুরুল ইসলাম নুরু ও মোজাম্মেল হক জানান, গত মৌসুমে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যেই একই জমি থেকে শীতকালীন অন্যতম সবজি মুলা দুই চালানের মতো বিক্রি শেষ করেছিলেন তারা। কিন্তু চলতি মৌসুমে বৃষ্টির কারণে তা সম্ভব হয়নি। একবার জমি প্রস্তুত করলেই নেমে আসে অঝোর ধারার বৃষ্টি। এতে প্রস্তুতকৃত জমি নষ্ট হয়ে যায়। এভাবেই কেটে গেছে ২ মাস।
নতুনভাবে জমি প্রস্তুত করে সবজি চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শঙ্খ চরের প্রবীণ ও সফল কৃষক কালিয়াইশের নুরুল ইসলাম নুরু। তিনি প্রতি মৌসুমে শঙ্খের চরে প্রায় ১০ থেকে ১২ কানি জমিতে বিভিন্ন প্রকারের শীতকালীন সবজির আবাদ করেন। গত ২ মাস ধরে জমি প্রস্তুত করতেই তার প্রায় ৮ লাখ টাকার উপরে লোকসান হয়েছে। সামনে আবারো বৃষ্টির বাধা আসলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।
ধনেপাতা ক্ষেত পরিচর্যা করা রায়জোয়ারা এলাকার কৃষক আবু তৈয়ব জানান, তিনি দেড় মাস আগে একবার জমি প্রস্তুত করেন। বৃষ্টিতে তা নষ্ট হয়ে যায়। ১৫ দিন আগে পুনরায় জমি প্রস্তুতের পর ধনে পাতার বীজ বপন করেন। দেড় মাস আগে বীজ বপন করতে পারলে এতদিনে ধনেপাতা বিক্রি শেষ হতো।
কৃষক আহমদ নবী, মো. মোস্তফাজ্জামান, আবদুল আজিজ মুন্সি, মো, হাসান, মো. মারুফসহ অনেকেই জানান, শ্রাবণ মাসের শেষ থেকেই শীতকালীন সবজি মুলা, বেগুন, বরবটির চাষ শুরু হয়। তা কার্তিক মাসের শুরু থেকেই বাজারে বিক্রি হতো এসব সবজি। ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা আশ্বিন মাসের শেষের দিকে রোপণ করা হয়। অথচ অব্যাহত বৃষ্টিতে চলতি মৌসুমে শীতকালীন সবজি চাষে ঘটলো ছন্দপতন।
কৃষকরা জানান, শীতকালীন সবজি আগাম চাষাবাদ করতে পারলেই লাভবান হন তারা। আশ্বিন মাসের শেষের দিকে ও অগ্রহায়ন মাসের শুরু থেকেই সকল প্রকার শীতকালীন সবজি বাজারে পুরোদমে বিক্রি করেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে দেড় দুই মাস পিছিয়ে পড়ায় এবার লোকসান গুণতে হবে। কারণ ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের কিছু সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে চন্দনাইশের শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে দেরি হওয়ায় দামও নাগালের বাইরে রয়েছে। বর্তমানে সব রকমের সবজিই প্রকারভেদে ৮০ থেকে ১৫০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে।
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হোসেন জানান, আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হবে রবি মৌসুম। চলতি মৌসুমে ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগাম শীতকালীন সবজির মধ্যে ইতিমধ্যে খরিপ-২ এর আওতায় ৭০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বৃষ্টি থাকায় এরমধ্যে ৪০০ হেক্টরের মতো জমিতে কৃষকরা চাষাবাদ করতে পেরেছেন। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। আরো কিছুদিন পর জানা যাবে রবি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীত কি পরিমাণ জমিতে কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করেছেন। বৃষ্টিপাত থাকায় চলতি মৌসুমে আগাম শীতকালীন সবজি চাষাবাদে কৃষকরা কিছুটা বিপাকে পড়েছেন।
- বিষয় :
- সবজি চাষ