চাকরি ফটিকছড়িতে তিনি থাকেন শহরে

হাসপাতালের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীর ভিড় জমে গেছে, তবু ডাক্তারের দেখা নেই। গত ১২ ডিসেম্বর তোলা ছবি সমকাল
ইকবাল হোসেন মনজু, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:৩৯
ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বহির্বিভাগে অনেক রোগীর ভিড়। চারদিকে হইচই। সবার অপেক্ষা চিকিৎসকের। ৯টা বাজলেও চিকিৎসকের দেখা নেই। অবশেষে চিকিৎসক এলেন ১০টার দিকে। ততক্ষণে রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সরকারি নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না। চিকিৎসকরা অফিসে আসা শুরু করেন ১০টার দিকে। কেউ কেউ ১১টার দিকেও আসেন, আবার চলে যান দুপুর দেড়টার আগে। রোগীর সংখ্যা বেশি হলে অনেককে বলেন পরের দিন আসতে। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত অবস্থান করে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের বেশির ভাগই শহরে অবস্থান করেন। সে কারণে যথাসময়ে তারা হাসপাতালে আসতে পারেন না, আবার প্রাইভেট চেম্বার করার জন্য আগেভাগে হাসপাতাল ত্যাগ করেন বলে অভিযোগ।
দেরিতে আসা প্রসঙ্গে কোনো চিকিৎসকই কথা বলতে চাননি। আবার একাধিক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘কাগজে-কলমে ৮টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সকাল ৮টায় আসতে হলে চিকিৎসকদের ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে, অন্যথায় শহর থেকে সময়মতো আসা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।’
উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের বারমাসিয়া গ্রাম থেকে আসা মনজুর আলম বলেন, ‘প্রতিদিনই চিকিৎসকেরা আসেন দেরিতে, আবার চলে যান আগেভাগে। এটা কোনো অবস্থাতেই হতে পারে না।’ একই কথা বলেন রোগী শাহীন আকতার, আনোয়ারা বেগম, কাশেম আলী, মিজানুর রহমান, মমতাজ বেগম। তারা বলেন, ‘চিকিৎসকদের কারণে প্রতিদিন দুর্ভোগে পড়ি আমরা। অনেকে উপজেলার দুর্গম এলাকা থেকে আসেন। চিকিৎসক দেখিয়ে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। চিকিৎসক যথাসময়ে না থাকায় আমাদের কষ্ট হয়।’
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্র জানায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল আটটা থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টায় রোগীরা হাসপাতালে আসেন। কিন্তু এ সময় শুধু জরুরি বিভাগ ছাড়া সব চিকিৎসকের কক্ষের দরজা খোলা থাকলেও চিকিৎসক থাকেন না। তখন বন্ধ থাকে পুরো চিকিৎসা কার্যক্রম। টিকিট নিয়ে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার অপেক্ষায় থাকেন অনেক রোগী।
এদিকে, বহির্বিভাগে সকাল নয়টার আগে টিকিট দেওয়া হয় না। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩৫০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। আন্ত বিভাগে শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকে প্রায় সময়।
জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক আছেন ৯ জন। এর মধ্যে কমবেশি সবাই চট্টগ্রাম শহরে থেকেই স্বাস্থকেন্দ্রে আসা-যাওয়া করেন। এ কারণে শহর থেকে কোনো চিকিৎসক সকাল সাড়ে ১০টা বা ১১টার আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে পারেন না। আবার দুপুর একটা থেকে দেড়টার মধ্যে চলে যান তাঁরা। ফটিকছড়িতে চিকিৎসকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ শহরে অবস্থান করেন।
৫ ডিসেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল নয়টায় শতাধিক রোগী টিকিট হাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করছে। অনেকে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। সকাল সাড়ে নয়টায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিম তার কক্ষে প্রবেশ করেন। প্রথমে তিনি কয়েকজন চিকিৎসক নিয়ে চা-নাস্তা খান। ১০টার দিকে ৪০ নম্বর কক্ষে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জয়নাল আবেদিন মুহুরী। ৪৭ নম্বর কক্ষে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দেন চিকিৎসক নাজমুল হাসান। পৌণে ১১টার দিকে কয়েকজন চিকিৎসক আসেন কার্যালয়ে। ১১টার দিকে আসেন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা খান আবদুল্লাহ আল মামুন। দুইজন চিকিৎসক ১১টায়ও আসেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিম বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকেরা থাকতে চান না। শহরে বাসা হওয়ায় তাদের আসতে একটু দেরি হয়। কিন্তু রোগী না দেখে ফেরেন না কোনো চিকিৎসক।’
- বিষয় :
- স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স