ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

অসহায়ের মাথা গোজার ঠাঁই করে দেন যিনি

অসহায়ের মাথা গোজার ঠাঁই করে দেন যিনি

ঘর, হুইলচেয়ারসহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান দোলন 3 ছবি : সংগ্রহ

রুবেল মিয়া নাহিদ

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫ | ০০:০৫

লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার ৬ নম্বর পাটারীর হাট ইউনিয়নের খায়েরহাট এলাকার বাসিন্দা মো. কাদির মিয়া। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর দিন কাটাতেন। নিঃসন্তান কাদেরের স্ত্রী ১২ বছর ধরে প্যারালাইজড হয়ে ঘরে শয্যাসায়ী। উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তি না থাকায় খুব কষ্টে দিন কাটান তারা। এরই মধ্যে ট্রলারডুবিতে স্বামী মারা যাওয়ায় তাঁর ছোট মেয়ে দুই নাতনি নিয়ে আশ্রয় নেন বাবার বাড়ি। কাদির মিয়া পলিথিন টাঙানো ঘরটিতে বসবাস করতেন চার সদস্য নিয়ে। বিধবা মেয়ে, দুই নাতনি ও প্যারালাইজড স্ত্রীকে নিয়ে খুব মানবেতর দিন কাটাতেন কাদির মিয়া। যেখানে দুই বেলা খাবার জোটাতে হাত পাততে হতো মানুষের কাছে সেখানে ভালো ঘরে থাকা ছিল আকাশচুম্বী স্বপ্ন। পৈত্রিক ভিটাতে বসবাস করলেও ঘর করার সামর্থ্য ছিল না কাদিরের। একই এলাকার বাসিন্দা পুলিশ সদস্য মো. দোলন তাঁর প্রতিবেশীদের মাধ্যমে কাদির মিয়ার নিদারুণ কষ্টের জীবনযাপনের কথা জানতে পারেন। দোলন ছাত্রজীবন থেকেই অসহায় মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় চাকর জীবনেও কাজ করে যাচ্ছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া অসহায় মানুষের কল্যাণে। পুলিশ সদস্য দোলনের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগে সাড়া দেন পরিচিতজনেরা। ফেসবুকের মারফতে অনেকেই এগিয়ে আসেন তাঁর নেওয়া কল্যাণমূলক উদ্যোগে। কাদির মিয়ার জীবনের কষ্টের কথা ছবিসহ ফেসবুকে আপলোড করেন দোলন। সেই ছবি দেখে পুলিশ সদস্য দোলনের সৌদি আরবপ্রবাসী বন্ধু শাহিন এগিয়ে আসেন এবং কাদির মিয়ার জীবনের অপরাহ্ণে তাঁর স্বপ্নের ঠিকানা–একটি ঘর নির্মাণ করে দেন। সেই সঙ্গে কাদির মিয়ার সংসারে উপার্জনের লক্ষ্যে বিধবা মেয়ে আসমা বেগমকে সেলাই কাজ শেখানোর ব্যবস্থা করেন এবং একটি সেলাই মেশিন ও কিছু কাটা কাপড় কিনে দেন দোলন। কাদির মিয়ার অসুস্থ স্ত্রীর জন্য ব্যবস্থা করেন একটি হুইলচেয়ারের। দোলনের মানবিকতায় বদলে যায় কাদিরের জীবনধারা। বর্তমানে মেয়ের সেলাই কাজের আয় দিয়ে ভালোভাবে চলছে তাদের জীবন। ঝড় বৃষ্টি এলে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে আগে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হলেও এখন থাকেন নিজের ঘরেই। কাদির মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘১২ বছর ধইরা অসুখে পইড়া রইছি কেউ খবর নেয় নাই, বাইরে বের হইতে পারি নাই, চলার মতো এই গাড়িটা পাই আমি অনেক খুশি, আমি আমনেগো জন্য দোয়া করমু, আমি অহন নিজে নিজে বের হইতে পারি গাড়িতে চড়ে, ঈদের দিন আমি আশেপাশের সব বাড়িতে ঘুইরা ঘুইরা সবারে দেখতে গেছি।’ 
নিজের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে দোলন বলেন, ‘আমি এমন অসংখ্য অসহায় মানুষের হাসি মুখের কারণ হয়েছি। ছোট্ট এই জীবনে চেষ্টা করেছি অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করার; বাকি জীবনটাও করে যাব ইনশাআল্লাহ। চাকরিজীবনের শুরুটা বান্দরবান পার্বত্য জেলায় এবং পরে চট্টগ্রাম জেলায়। সেই সব কর্মস্থলেও রেখেছি প্রশংসনীয় ভূমিকা। অসহায় নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং পরিবেশ-প্রকৃতি নিয়ে কাজ করি আমি।’
পুলিশ সদস্য দোলন এই মানবিক ও সমাজসেবামূলক কাজের জন্য পুলিশপ্রধানের কাছ থেকে পেয়েছেন আইজিপি ব্যাজ ও বিভিন্ন সম্মাননা। u

আরও পড়ুন

×