বর্ষাবরণ
গান-কবিতায় বর্ষাবন্দনা

এইচএসবিসির ‘আবার এসেছে আষাঢ়’ অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন অদিতি মহসিন - সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫ | ০১:২৪ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫ | ০৮:৪২
‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে/আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে/এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি/পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি/নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে...।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে আষাঢ় প্রাণ পেয়েছে এভাবেই । আষাঢ়ে ঘনকালো মেঘরাশি আকাশ ছেয়ে রাখে। কখনও প্রকৃতিতে নামে তুমুল বারিধারা। পুরোনো সব গ্লানি ধুয়েমুছে দিতে প্রকৃতিতে বর্ষার আগমন। তৃষ্ণাকাতর জগৎসংসার এ বর্ষায় ফিরে পায় প্রাণের স্পন্দন। আর নগরে বর্ষা মানেই সংগীতের আসর এখানে-ওখানে। এর ব্যতিক্রম হয়নি এবারও।
বর্ষার শুরু থেকেই রাজধানীর সাংস্কৃতিকপাড়া জমজমাট বর্ষাবরণের আনন্দে। গান, কবিতা ও কথামালার ছন্দে বর্ষাকে বরণ করে নিতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে এইচএসবিসি বাংলাদেশ গান-কথামালায় ‘আবার এসেছে আষাঢ়’ শীর্ষক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ওই আয়োজনে ছয় শতাধিক গ্রাহক, অংশীদার এবং অতিথি একত্র হয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানেই শুরুতেই ছিল বর্ষাঋতুর ওপর ডকুমেন্টারি প্রদর্শন। বর্ষার প্রকৃত রূপ ফুটে ওঠে এতে। পরে এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উর রহমান অতিথিদের স্বাগত জানাতে মঞ্চে আসেন।
তিনি বলেন, ‘এ দেশের প্রতিটি ঋতুই নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। বর্ষায় বাংলাদেশ যেন এক অপরূপ চিত্রে ফুটে ওঠে। ঋতুচক্রের পালায় এক সময় বর্ষা আসে দেশে। আবার এসেছে বর্ষা। প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। প্রতিটি সংস্কৃতিরই কিছু কালজয়ী উপাদান থাকে। আমাদের গান, কবিতা এবং সাহিত্যের সমৃদ্ধি প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং অনুপ্রাণিত করে।’
পরে বরেণ্য শিল্পী অদিতি মহসিনের রবীন্দ্রসংগীতের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন। ‘আবার এসেছে আষাঢ়’ গানটি গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্ষার আবহ ছড়িয়ে পড়ে বলরুমজুড়ে। গানের মাঝে নন্দিত আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথের কবিতার খণ্ড খণ্ড প্রাণবন্ত আবৃত্তি শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলেন। তাঁর কণ্ঠে বর্ষার গৌরবের মর্মস্পর্শী মূর্ত প্রতীক ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
অদিতি মহসিনের একের পর এক ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল’, ‘ওই মালতীলতা দোলে’, ‘বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা’, ‘আমার নিশীথরাতের বাদলধারা’, ‘আজি ঝরঝর মুখর বাদর-দিনে’ গান পরিবেশনা এবং রবীন্দ্রনাথের বেশকিছু স্নিগ্ধ কবিতা শ্রোতারা বেশ উপভোগ করেন। জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের আবৃত্তি দিয়েই শেষ হয় পরিবেশনা। বর্ষার রোমান্টিকতায় ভরা প্রতিটি গান, যন্ত্রাণুষঙ্গ, ভাগাভাগি করা ভাষা অনুভূতির এক আনন্দঘন মুহূর্ত হয়ে ওঠে আয়োজনে।
অনুষ্ঠানে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বর্ষাকাল মানে মেঘ, বৃষ্টি, প্রেম, নতুন প্রাণ ও জেগে ওঠার গান। বর্ষা মানেই অন্যরকম সাংস্কৃতিক আয়োজন। ইট-কাঠের যান্ত্রিক এই নগরীর মানুষ আবহমান বাংলার অনন্য ঋতু বর্ষার সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত। নগরের মানুষের কথা বিবেচনা করেই এইচএসবিসির এ আয়োজন। রবীন্দ্র রচনাবলি থেকে টুকরো টুকরো নিয়ে আমরা ‘আবার এসেছে আষাঢ়’ সাজিয়েছিলাম। আমাদের কথা, রবীন্দ্রনাথের গদ্য থেকে নিজেরা ন্যারেশন তৈরি করেছি। আলাদা করে পুরো কবিতা আবৃত্তি করিনি। এটি কোনো গতানুগতিক অনুষ্ঠান ছিল না। পুরোপুরি কম্পোজড আয়োজন। মনোযোগী শ্রোতাদের কারণে আবৃত্তি ও লিংকআপটা বেশ ভালোভাবেই শেষ করতে পেরেছি। বর্ষার জলধারায় সিক্ত হোক সবার জীবন, হোক আনন্দময় ও কল্যাণব্রতী। পরিশেষে এ কামনাই করছি।’
- বিষয় :
- উৎসব পালন