ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকার: সৈয়দ আব্দুল মোমেন

ব্র্যাক ব্যাংকের বেশির ভাগ এসএমই ঋণ জামানতবিহীন

ব্র্যাক ব্যাংকের বেশির ভাগ এসএমই ঋণ জামানতবিহীন

সৈয়দ আব্দুল মোমেন, অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব এসএমই ব্যাংকিং ব্র্যাক ব্যাংক

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫ | ০০:৫৬ | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৫ | ২১:০০

আমরা ২০ লাখ সিএমএসএমই গ্রাহককে দুই লাখ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছি। এটি তাদের পরিবার এবং কর্মীদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কোটি মানুষের জীবন স্পর্শ করেছে

সমকাল: এসএমই খাতে ব্র্যাক ব্যাংকের যাত্রা এবং অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাই 

সৈয়দ আব্দুল মোমেন: ২০০১ সালে যাত্রার পর থেকে ব্র্যাক ব্যাংক ক্ষুদ্র ব্যবসা বিশেষ করে মফস্বল ও গ্রামীণ এলাকায় সহজে ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে থাকা ‘মিসিং মিডল’দের কাছে সেবা নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ব্র্যাক ব্যাংক এখন কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে (সিএমএসএমই) বাংলাদেশের বৃহত্তম জামানতমুক্ত অর্থায়নকারী। এ খাতে আমাদের ৮৫ শতাংশের বেশি ঋণ জামানতবিহীন। আমরা ২০ লাখ সিএমএসএমই গ্রাহককে দুই লাখ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছি। এটি তাদের পরিবার এবং কর্মীদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কোটি মানুষের জীবন স্পর্শ করেছে। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য নিছক একটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান হওয়ার চেয়ে বেশি কিছু। আমরা তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের পরিপূর্ণ ব্যাংকিং ও আর্থিক অংশীদার হতে চাই। গতানুগতিক ব্যাংকিংয়ের বাইরে গিয়ে আমরা সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের সেবা দিয়ে থাকি। তাদের সক্ষমতা বাড়ানো, নেটওয়ার্কিং ও বাজারে প্রবেশের সুবিধা দেওয়াসহ অনেক ধরনের সহায়তা দিই। আমাদের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি যেমন ‘উদ্যোক্তা ১০১’ এবং ‘আমরাই তারা’ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের উদ্যোক্তা হিসেবে সাফল্য পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতা এনে দেয়। আমাদের উদ্ভাবনী ডিজিটাল লোন প্রোডাক্ট যেমন ‘সাফল্য’, ‘জীবিকা’ ও ‘স্বাবলম্বী-রেমিট্যান্স প্রাপকের জন্য ঋণ সুবিধা’-এর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা সেগমেন্টে পৌঁছে যাচ্ছি। 

সমকাল: আরও কোন কোন লক্ষ্য নিয়ে আপনারা কাজ করছেন? 

সৈয়দ আব্দুল মোমেন: সব সিএমএসএমই উদ্যোক্তাকে আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থার আওতায় আনতে আমাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। আমাদের আরও আগে যদি বর্তমানের মতো ‘আস্থা’ ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপ, ই-ল্যাপ, স্বয়ংক্রিয় লোন অরিজিনেশন সিস্টেম, ডিজিটাল লোন ‘সাফল্য’, ‘জীবিকা’ প্রভৃতির মতো ডিজিটাল অবকাঠামো থাকত, তাহলে আমরা অনেক আগেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরও বেশি উদ্যোক্তার কাছে পৌঁছাতে পারতাম। সিএসএসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল সলিউশনসের মাধ্যমে যাতে দ্রুত, সাশ্রয়ীভাবে এবং আরও সহজভাবে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য। এসএমই খাতের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত করতে সম্প্রতি ‘এসএমই ইনোভেশন ল্যাব’ চালু করেছে ব্র্যাক ব্যাংক; যার ফলে উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন নতুন উদ্ভাবনী সেবা চালু করা সম্ভব হবে। 

সমকাল: এসএমই অর্থায়ন আরও এগিয়ে নিতে আপনাদের ভাবনা কেমন? 

সৈয়দ আব্দুল মোমেন: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রভাব বিস্তারকারী ব্যাংক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক। সর্ববৃহৎ ব্যাংকে পরিণত হওয়ার কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে এসএমই ব্যাংকিং। কেননা ব্র্যাক ব্যাংকের ঋণের প্রায় ৪২ শতাংশ হচ্ছে এসএমই। ব্র্যাক ব্যাংক দুই যুগের অভিজ্ঞতা, নিবেদিত কর্মীবাহিনী এবং উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় দেশের বৃহত্তম ব্যাংক হতে চায়। ব্র্যাক ব্যাংক তৃণমূল পর্যায়ের সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের সহজে অর্থায়নের সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের এসএমই ঋণ পোর্টফোলিও ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং এসএমই আমানতের পোর্টফোলিও ১৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ১৬ শতাংশ এবং ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। এটি অর্জিত হয়েছে দেশের চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে, যা আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রবৃদ্ধির কৌশলের নিদর্শন। আমরা আগামী বছরগুলোতে এ ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বর্তমানে দেশে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট এসএমই অর্থায়নের ১৬ দশমকি ৭ শতাংশই আমাদের, যা আগামী পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। 

সমকাল: এসএমই খাত ডিজিটাইজেশনে অনেক পিছিয়ে। আপনারা এসএমই ডিজিটাইজেশনে কী কী করছেন? 

সৈয়দ আব্দুল মোমেন: এসএমই খাতের প্রথাগত পদ্ধতিকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় রূপান্তর করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে প্রধান ডিজিটাল রূপান্তর প্রকল্পগুলো রিটেইল ও করপোরেট ব্যবসায় কেন্দ্রীভূত। সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের ডিজিটাল রূপান্তর যাত্রার সঙ্গে তাল মেলাতে এসএমইকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। এসএমই ব্যাংকিংয়ের বিকাশের জন্য প্রযুক্তি ঢেলে সাজানো অত্যাবশ্যক। আমাদের উপাত্ত থেকেও দেখা যাচ্ছে যে, প্রযুক্তি গ্রাহকদের পথচলা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করে, প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং সুবিধা বাড়ায়। আমাদের ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিরলসভাবে তা বাস্তবায়ন করছে এবং এসএমই ব্যাংকিংয়ের ডিজিটাইজেশনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। 

ব্র্যাক ব্যাংক এসএমই লোন অরিজিনেশন সিস্টেমের (ই-ল্যাপ) মাধ্যমে দেশব্যাপী ডিজিটাল এসএমই ঋণ প্রক্রিয়াকরণ চালু করেছে। এর ফলে ঋণের আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে এবং ঋণ প্রক্রিয়াকরণের সময় কমিয়ে দিয়েছে। প্রান্তিক অঞ্চলে ঋণ পাওয়া সহজ করার জন্য ব্র্যাক ব্যাংক দেশের প্রথম ডকুমেন্ট-লেস রিয়েল-টাইম ডিজিটাল এসএমই ঋণ ‘সাফল্য’ এবং ব্যক্তি ডিজিটাল ঋণ ‘জীবিকা’ চালু করেছে। এর ফলে ব্যাংক দেশব্যাপী অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে আধুনিক ব্যাংকিং সেবা নিয়ে যেতে পেরেছে, যা আগে সম্ভব ছিল না। ব্র্যাক ব্যাংক বিদ্যমান প্রক্রিয়া ও প্রোডাক্টের একটি সামগ্রিক প্রযুক্তিচালিত রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করবে, যা দ্রুত প্রক্রিয়াকরণের সুযোগ করে দেবে এবং সেবার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে। সারাদেশে সিএমএসএমই খাতের মধ্যে বৈচিত্র্যময় সেগমেন্টে ব্যাপকভাবে ব্যাংকিং সেবা দিতে ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে এসএমই ব্যবসা রূপান্তর করাই এর লক্ষ্য। 

আরও পড়ুন

×