বিশ্বকাপেও কি মেকশিফট ওপেনার!

ছবি: ফাইল
নাজমুল হক নোবেল
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২২ | ০৬:০৭
ধ্রুপদি টেস্টের সঙ্গে ধুন্ধুমার টি২০'র একটি অদ্ভুত মিল রয়েছে। স্পেশালিস্ট ছাড়া নাকি এই দুই ফরম্যাটে সফল হওয়া কঠিন। আর খেলা যদি হয় বাউন্সি উইকেটে, তাহলে তো কথাই নেই! এসব উইকেটে পার্টটাইমার দিয়ে বোলিং করানো যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, ঠিক তেমনি যাঁকে-তাঁকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে দেওয়াটাও বোকামি। অস্ট্রেলিয়া অনুষ্ঠেয় টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এ ঝুঁকিপূর্ণ কাজটাই করতে যাচ্ছে। না হলে বিশ্বকাপের ২০-২৫ দিন আগে মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমানকে ওপেনিংয়ে পাঠাত না। প্রথম ম্যাচে ব্যর্থতার পরও হয়তো আজ আরব আমিরাতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি২০ তে তাঁদের দু'জনকে দিয়েই ওপেন করানো হবে।
হোবার্টের বেলেরিভ ওভাল কিংবা ব্রিজবেনের গ্যাবায় কী মিরাজ কুলিয়ে উঠতে পারবেন? আইসিসি ইভেন্ট বলে ওইসব পিচে হয়তো টেস্টের মতো কানের কাছে শিষ কেটে বল বেরিয়ে যাবে না। তাই বলে পিচের এত বছরের বৈশিষ্ট্যে তো আমূল পরিবর্তন আসবে না। নতুন বলে বাউন্স থাকবেই। আর এমন বাউন্সি উইকেটে মিরাজের মতো মেকশিফট ওপেনার সফল হওয়া বিরাট প্রশ্নসাপেক্ষ ব্যাপার। শট খেলা দূরের বিষয়, এসব পেস উইকেটে শুরুর দিকে দুরন্ত গতির সুইং-বাউন্সের মুখে টিকে থাকাই মিরাজের জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে যেতে পারে। সাব্বিরের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার হোবার্ট-ব্রিজবেনের মতো পেস উইকেট তো বটেই, সিডনি-অ্যাডিলেডের মতো স্পিন উইকেটেও নিখুঁত টেকনিকের ওপেনার ছাড়া সফল হওয়া সম্ভব নয়। এখানে লিটন হতে পারেন সবচেয়ে ভালো বিকল্প। সাদা বলের ক্রিকেটে লিটন ওপেনিংয়ে সফল হয়েছে। পজিশন নড়চড় করে তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলার চেয়েও বড় ক্ষতি হতে পারে দলের। নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ভাবতে পারেন নির্বাচকরা। শান্ত হয়তো এখনও সফল হতে পারছেন না, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি কন্ডিশনে মিরাজ-সাব্বিরের চেয়ে নিশ্চিতভাবেই তিনি উত্তম বিকল্প।
অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে মিরাজ ব্যাটিংয়ে ভালো করলেও জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর তিনি পুরোপুরি বোলিং অলরাউন্ডার হয়ে গেছেন। এর মধ্যে টি২০ তে গত জুলাইয়ে ওয়েস্টেইন্ডিজ সফরে দলেও সুযোগ পেতেন না তিনি। আর সাব্বির তো হারিয়েই গিয়েছিলেন। তাঁকে রীতিমতো খুঁজে বের করে ওপেনারের ভূমিকায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মিরাজ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৮ রান করলেও গত পরশু আমিরাতের বিপক্ষে স্বচ্ছন্দ ছিলেন না তিনি। সাব্বিরকে তো দুই ম্যাচেই অস্বস্তিতে ভুগতে দেখা গেছে। ঠিক মতো ব্যাটে-বলেই করতে পারেন না। মিরাজ যদিও গতকাল বলেছেন ওপেনারের ভূমিকা উপভোগ করছেন, 'টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে ওপেনিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আমি এই ভূমিকা উপভোগ করছি। কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটে এই পজিশনে আমি খেলেছি।' গত মৌসুমে বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে কয়েকটি ম্যাচে মিরাজ ওপেন করেছিলেন বটে, তবে এই ওপেন করা নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট তথা দলের প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভালো করতে হলে নিয়মিত ওপেনারই লাগবে, মেকশিফট দিয়ে কাজ হবে না। ক'দিন পরেই নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন অস্ট্রেলিয়ার মতো পেস সহায়ক। সেখানে বোল্ট-ফার্গুসনদের সঙ্গে শাহিন-নাসিমদের মতো গতি তারকাদের বিপক্ষে মিরাজ-সাব্বির নামলে আসল অবস্থাটা বেরিয়ে আসবে। তখন হয়তো শ্রীধরন শ্রীরামের নেতৃত্বাধীন টিম ম্যানেজমেন্ট বিষয়টা অনুধাবন করতে পারবেন। ততক্ষণে দেরি না হয়ে যায়!