ক্রাইস্টচার্চ বিভীষিকার এক বছর
'দিনটি আর মনে করতে চাই না'

ছবি: বিসিবি
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২০ | ০২:৩৫
দিনটি ভুলে থাকতে চান মুশফিকুর রহিম। মনে করতে চান না ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ কী ঘটেছিল তার এবং সতীর্থদের সামনে; ভাবতে চান না কীভাবে ফিরে এসেছিলেন মৃত্যুর মুখ থেকে। যে কোনো মুহূর্তে গুলি এসে বুক বিদীর্ণ করে দেবে, মাথা এফোঁড়ওফোঁড় করে দেবে- এমন শরীর অসাড় করে দেওয়া অনুভূতির স্মৃতিতে কেইবা ফেরত যেতে চায়!
চোখের সামনে প্রাণ বাঁচানোর আকুতিতে রক্তাক্ত মানুষের দৌড়ঝাঁপ, মাটিতে পড়ে থাকা গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ আর বন্দুকের নল থেকে বাঁচতে বাসের ভেতর মাথা নিচু করে শুয়ে থাকার সেই মুহূর্তের কথা ভুলে থাকাই যে ভালো থাকা!
শুধু মুশফিক নন, ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদের ভয়াবহ ঘটনাটির কথা ভুলে থাকতে চাইবেন সেদিন বাংলাদেশ দলের টিম বাসে থাকা ১৭-১৮ জন ক্রিকেটার-কোচিং স্টাফের সবাই। কিন্তু আজীবনের জন্য মস্তিস্কের আয়নায় স্থায়ী এক ক্ষত তৈরি করে যাওয়া ঘটনা কি আর চাইলেই মুছা যায়! কেউ না চাইলেও ক্যালেন্ডার তো অন্তত মনে করিয়ে দেয়। আজ সেই ভয়াল, বিভীষিকাময় ঘটনার এক বছর পূর্তি।
গত বছরের এই দিনে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মরণের খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। ব্রেন্টন টেরান্ট নামের বন্দুকধারীর গুলিতে ৫১ জন নিহতের ঘটনায় সেদিন ভাগ্যগুণে বেঁচে গিয়েছিলেন মুশফিক, তামিম, মাহমুদুল্লাহরা। এক বছর পর ওই দিনটির স্মৃতি কতটা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ক্রিকেটারদের? মুশফিক কিছু বলতেই চাইলেন না, 'আমি ওই দিনের কথা মনে করতে চাই না।'
গত বছরের এই সময়ে কিউইদের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ চলছিল বাংলাদেশ দলের। ১৬ মার্চ শুরুর কথা ক্রাইস্টচার্চ। রীতি অনুসারে খেলার আগের দিন হ্যাগলি ওভালে সংবাদ সম্মেলন করতে যান বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ (চোটের কারণে সাকিব সফরে যাননি)। আনুষ্ঠানিক অনুশীলন দুপুর ২টায় হলেও লিটন দাস ও নাঈম হাসান ছাড়া বাকি সব খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফের সদস্যরাও চলে যান মাঠে।
অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলন একটু দীর্ঘায়িত হওয়ায় খানিকটা দেরি করে জুমা পড়তে মসজিদে রওনা দেয় বাংলাদেশ দলের টিম বাস। এক কিলোমিটার দূরের আল নুর মসজিদ চত্বরে পৌঁছতেই হামলার কবলে পড়ে যায় বাংলাদেশ। বাস থেকেই শোনা যায় ভেতরে গুলি চলছে। রক্তাক্ত শরীর নিয়ে দৌড়ে আসছেন কোনো কোনো মুসল্লি। ওই সময় ব্রেন্টন টেরান্ট নামের এক ব্যক্তি মসজিদের ভেতরে ঢুকে মুসল্লিদের লক্ষ্য করে টানা গুলি চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
আতঙ্কে, বিভীষিকায় মসজিদের মাত্র ৫০ গজ দূরে তখন বাংলাদেশ দলের টিম বাস। যে কোনো মুহূর্তে গুলি এসে মাথার খুলি উড়িয়ে দিতে পারে, এমন এক দমবন্ধ অবস্থা তখন। একপর্যায়ে বাসের ভেতরে মাথা নিচু করে শুয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। গুলির শব্দ থামার পর বাস থেকে নেমে পাশের পার্কের ভেতর দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ দল। এর পরদিনই নিউজিল্যান্ড ছেড়ে দেশে রওনা দেয় পুরো দল।
- বিষয় :
- খেলা
- ক্রিকেট
- বাংলাদেশ
- ক্রাইস্টচার্চ
- এক বছর