অনাকাঙ্ক্ষিত ফোনকলে ভীত আম্পায়াররা

ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৩ | ০৭:০৮
বিকেএসপিতে ম্যাচ সম্পন্ন করে সবে বাসায় ফিরেছেন এক আম্পায়ার। এর কিছুক্ষণ পরই এক ক্লাব কর্মকর্তার ফোন। জনৈক কর্মকর্তা খুব বেশি কিছু বলেননি। ‘ম্যাচে যে সিদ্ধান্তটা দিয়েছেন সেটা ভুল না ঠিক?’– প্রচ্ছন্ন একটা হুমকি ছিল তাতে। আরও কয়েকজন আম্পায়ারও এ রকম ফোন পেয়েছেন।
এবারের লিগে আম্পায়ারদের সঙ্গে এ রকম কিছু ঘটনা ঘটে গেলেও কেউই লিখিত অভিযোগ দেননি। ক্লাব কর্মকর্তারা বিসিবি-সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বাহ্যিক চাপের বিষয়টি নিজেদের মধ্যেও মন খুলে আলোচনা করতে পারেননি আম্পায়াররা। বিষয়টি পাঁচ কান হলে পরে ম্যাচ না পাওয়ার ভয়ও রয়েছে। তাই কোন কোন ম্যাচের পর এই ঘটনা ঘটেছে, সেটাও প্রকাশ না করার শর্ত জুড়ে দেন সংশ্লিষ্ট আম্পায়ার। কারণ, ম্যাচের নাম লেখা হলে আম্পায়ারদের খুঁজে বের করে নেবে বিসিবি।
আসলে খেলার মাঠে ঢাকার আম্পায়ারদের স্লেজিংয়ের শিকার হওয়া নতুন কিছু নয়। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে যুগ যুগ ধরে ক্রিকেটারদের স্লেজিংয়ের শিকার হচ্ছেন আম্পায়াররা। প্রকাশ্যে প্রতিবাদের ঘটনাও তো ঘটে। বাংলাদেশের আম্পায়ারদের এভাবে হেয় হওয়ার বিষয়টি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশিদেরও জানা। সিনিয়র আম্পায়াররাই যেখানে ছাড় পান না, সেখানে নবাগতদের হাল অনুধাবন করা যায় সহজেই।
এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) উদীয়মান কয়েকজন আম্পায়ার খুঁটিনাটি ভুল করেছেন সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে। এ নিয়েই মাঠের ভেতরে স্লেজিংয়ের শিকার হতে হয় সিনিয়র আম্পায়ারের সামনেই। বড় দলগুলোর ম্যাচে এমন ঘটনা বেশি ঘটে বলে অভিযোগ।
একজন সিনিয়র আম্পায়ার জানান, আবাহনীর নাঈম শেখ, মোহামেডানের ইমরুল কায়েস, মেহেদী হাসান মিরাজ এভাবে স্লেজিং করেছেন। মিরাজকে এজন্য জরিমানাও করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বিসিবি আম্পায়ার্স বিভাগে যোগাযোগ করা হলে অভি আব্দুল্লাহ নোমান বলেন, ‘এ বছর মাঠে আম্পায়ারদের সঙ্গে খুব একটা অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছে বলে জানা নেই। ম্যাচ শেষে ক্লাব কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ফোন পাওয়ার বিষয়েও কেউ অভিযোগ করেনি। সে ক্ষেত্রে আমরা ধরে নেব, মাঠে এবং মাঠের বাইরের পরিবেশ ভালো ছিল। বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্ট আম্পায়ারের উচিত ছিল আমাদের জানানো। সেটা না করে মিডিয়াকে জানানো ঠিক হয়নি।’
ঢাকা লিগে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ রয়েছে আম্পায়ারদের একাংশের বিরুদ্ধে। যে কারণে বিসিবি থেকে ম্যাচের লাইভ স্টিমিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এ উদ্যোগ নিয়েছেন। এতেই যে পক্ষপাতিত্বের ঘটনা বন্ধ হয়ে গেছে সে দাবি করতে পারছেন না বোর্ড-সংশ্লিষ্টরাও।
পক্ষপাতিত্বের সুবিধা নিতে কৌশল বদলেছে বলে অভিযোগ নিচের দিকের ক্লাব কর্মকর্তাদের। দু-একটি ক্লাবের ম্যাচ নির্দিষ্ট কয়েকজন আম্পায়ারকেই দেওয়া হয় পরিচালনা করার জন্য। এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে খোদ আম্পায়ারদের মধ্যেও। যদিও একঘরে হওয়ার ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি তাঁরা।
আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বের একটি নমুনা ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখান মাশরাফি বিন মুর্তজা। আবাহনী ও লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ম্যাচে ফিল্ড আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান লিটু স্টাম্প ভাঙার পরও আউট দেননি। কয়েকদিন আগে বিসিবি একাডেমিতে নড়াইল এক্সপ্রেস ভিডিও দেখিয়ে অনুযোগ জানান আবাহনী ক্রিকেট দলের কর্মকর্তা শেখ মামুনকে। যেখানে লাইভ ভিডিওতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে আবাহনীর ব্যাটার আউট ছিলেন। মাশরাফি শুধু এটুকু বললেন, ‘আম্পায়ারের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারিনি।’
- বিষয় :
- ডিপিএল
- ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ
- আম্পায়ার
- বিসিবি