সা ক্ষাৎ কা র
জাপানি কন্যার বাঙালি হয়ে ওঠা

--
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৩ | ০৪:১৪
ফ্রি স্টাইলার ফুটবলার হিসেবে প্রথমে পরিচিতি পান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফুটবল নিয়ে তাঁর শারীরিক নানা কসরতের ভিডিও এবং ছবিগুলো মুগ্ধতা ছড়ায়। মাতসুশিমা সুমাইয়াকে জাতীয় দলের জন্য বিবেচনায় নেন বাফুফের সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি ও কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। জাপানের নাগোয়া শহরে জন্ম নেওয়া এ ফুটবলারকে এরপর দলে নেয় বসুন্ধরা কিংস। মা মাতসুশিমা তমোমি জাপানি এবং বাংলাদেশি বাবা মাসুদুর রহমানের মেয়ে এখন বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ইতিহাসের পাতায়। পুরুষ ফুটবলে জাতীয় দলে প্রবাসী খেলোয়াড় হিসেবে জামাল ভূঁইয়া ও তারিক কাজী নাম তুলেছেন। এবার নেপালের বিপক্ষে ১৩ জুলাই প্রীতি ম্যাচে প্রথম প্রবাসী নারী ফুটবলার হিসেবে লাল-সবুজে অভিষেক হয়েছে সুমাইয়ার। মাত্র ৯ বছর বয়সে বাংলাদেশে আসেন তিনি। শৈশবের ফুটবল আর বাংলাদেশে খেলার স্বপ্নপূরণসহ নানা বিষয়ে মাতসুশিমা সুমাইয়া কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন তা সাখাওয়াত হোসেন জয়
সুমাইয়া : যখনই আমি বাংলাদেশে আসি, তখন থেকেই এ দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখে আসছিলাম। বসুন্ধরা কিংসে ডাক পাওয়ার পর মনে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম এবং একাগ্রতা থাকলে আমার স্বপ্ন পূরণ হবে। তার পর থেকেই কঠোর পরিশ্রম করে আসছি। বলতে পারেন, তার ফল প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়ানোর সুযোগ পেয়েছি। দুটি ম্যাচ তো খেলেছি, এখন ভালো লাগছে। প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার পর একটু নার্ভাস লেগেছিল। বাবার দেশ মানে তো আমার দেশ। নিজেকে এখন বাঙালি মনে হয়।
সমকাল : পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আপনার পথচলা কবে?
সুমাইয়া : আমি ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলতাম। তবে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আগমন হয় ২০২০ সালে, বসুন্ধরা কিংসে। সেই ক্লাবের হয়ে গত মৌসুমে কয়েকটা গোল করেছি। এরই মধ্যে এই দলটির হয়ে আমি তিন মৌসুম খেলেছি। আমি কিন্তু মালদ্বীপের ক্লাবে সাবিনা আপুর সঙ্গে খেলেছি।
সমকাল : দুটি ম্যাচ খেলেছেন। নিজের পারফরম্যান্সে কতটা খুশি আপনি?
সুমাইয়া : প্রথম ম্যাচে খেলার তেমন একটা সময় পাইনি। দ্বিতীয় ম্যাচে আরও বেটার করার চেষ্টা করেছি। নিজের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। ভালোর তো কোনো শেষ নেই। আমি মনে করি আরও ভালো করতে হবে আমাকে।
সমকাল : বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচ খেলেছেন। বাবা-মা তো নিশ্চয়ই দেখেছেন?
সুমাইয়া : আমার ভাগ্য ভালো, বাংলাদেশে প্রথম ম্যাচ খেলার সময় আমার বাবা এবং মা ঢাকাতেই ছিলেন। তারা টিভিতে দেখেছেন। তারা অনেক খুশি হয়েছেন। আমার বাবার বাড়ি নবাবগঞ্জে। গ্রামবাসী আমার খেলা দেখে তাদের কাছে গিয়ে বলেছেন। এগুলো আমার কাছে শেয়ার করেছেন বাবা-মা। বলতে পারেন, আমাকে নিয়ে তারা এখন গর্বিত।
সমকাল : জাপানে বেড়ে ওঠা। চাইলে তো সেখানেই ফুটবল খেলতে পারতেন?
সুমাইয়া : আমি ২০১০ সালে বাংলাদেশে এসেছি। এই দেশেই ফুটবল খেলা শুরু করি। জাপানে তো আমি ফুটবল খেলিনি। এখানে আসার পর দেখেই ফুটবল শিখেছি। আমার স্বপ্নই ছিল বাংলাদেশের হয়ে ফুটবল খেলব। সত্যি কথা বলতে কী, জাপানে থাকলে হয়তো ফুটবলার হতে পারতাম না।
সমকাল : জাপান আর বাংলাদেশের খাবারের মধ্যে তো পার্থক্য আছে। শুরুতে তো সমস্যায় পড়তে হয়েছে? সুমাইয়া : হ্যাঁ। প্রথম প্রথম তো আমি খেতেই পারতাম না। বাংলাদেশের খাবারে মসলা এবং ঝাল বেশি, যেটা জাপানের খাবারের মধ্যে নেই। এখন আস্তে আস্তে মানিয়ে নিয়েছি। আলু ভর্তা আর ডাল খুব ভালো লাগে।
সমকাল : প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জামাল। ভবিষ্যতে এমন স্বপ্ন দেখছেন আপনি?
সুমাইয়া : জামাল ভাই প্রথম এসে এখানে অনেক দিন ফুটবল খেলেছেন। নিজেকে গড়ে তুলেছেন। এর পর তাঁর পারফরম্যান্সের কারণেই তাঁকে অধিনায়ক করা হয়েছে। আমাকে এখন নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। আগে পারফরম্যান্স দেখিয়ে দলে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে হবে। এর পর কখনও যদি কোচের মনে হয়, তাহলে আমাকে অধিনায়ক করতে পারেন। তবে আমি এখন অতদূর ভাবছি না। আগে দলে নিজের অবস্থাটা শক্ত করতে চাই।
সমকাল : সুন্দর বাংলা বলতে পারেন। লিখতেও কি পারেন?
সুমাইয়া : না (হেসে)। আসলে আমি ছোটবেলায় ছিলাম জাপানে। এর পর বাংলাদেশে এসে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা শুরু করি। তাই কখনও বাংলায় লেখা হয়নি। বাবা বাংলাদেশি বলে, তাঁর কাছে থেকে বাংলা ভাষা শিখেছি। এখন তো সবার সঙ্গেই বাংলায় কথা বলি, কিন্তু লিখতে পারি না।
সমকাল : ক্যাম্পে থাকা আর পড়াশোনা করা; একসঙ্গে দুটি জিনিস চালিয়ে যেতে কতটা কষ্ট?
সুমাইয়া : যখন স্কুলে ছিলাম, তখন অনেক চাপ ছিল। বাবা-মা বলতেন, পড়াশোনাকে অগ্রাধিকার দাও। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ হয়েছে, এখন তারা খুব একটা চাপ দেন না। তবে এটা ঠিক, ক্যাম্পে থেকে বিশ্ববিদ্যালের পড়াশোনাটা চালানো অনেক কঠিন। এখন আমি নর্থ সাউথে এনভায়ারমেন্টাল সায়েন্সে প্রথম বর্ষে পড়ছি। যখন দরকার হয়, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই।
সমকাল : ফুটবলে আপনার আইডল কে?
সুমাইয়া : সাবিনা খাতুন। এর বাইরে বিশ্ব ফুটবলে মেয়েদের খেলা তেমন একটা দেখা হয় না। তাই ওইভাবে কাউকে অনুসরণ করি না। তবে আমি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে খুব পছন্দ করি। যখনই গোল করি, আমার উদযাপনটা কিন্তু সিআর সেভেনের মতোই।
সমকাল : সিনিয়রদের কাছ থেকে কতটুকু শিখছেন?
সুমাইয়া : সবাই অনেক অভিজ্ঞ। ৮-৯ বছর ধরে খেলছে। নতুন আসা আমার। আমার লক্ষ্য আছে বাংলাদেশকে আরও দীর্ঘদিন সার্ভিস দেওয়ার।
- বিষয় :
- ফুটবল
- মাতসুশিমা সুমাইয়া
- জাপান
- বাফুফে