ক্ষোভ ঝেড়ে তামিম বললেন আমাকে মনে রাইখেন

ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৯:৩১
তাঁর শেষ কথাটাই সবার মনে গেঁথে গেছে– ‘আমাকে মনে রাইখেন।’ কতটা অসহায় বোধ করলে তামিম ইকবালের মতো একজন ক্রিকেটার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসে এভাবে বলতে পারেন। গত তিন দিন তাঁর মনের ভেতরে যে ঝড় বয়ে গেছে, গতকাল আবেগ হয়ে তা প্রকাশ পেল এক ভিডিও বার্তায়। নিজের ভেতরে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, হতাশার বাষ্প, মিডিয়া প্রকাশিত ভুল বার্তার আন্দোলন এবং কিছু সত্য উপস্থাপন করে ভুল ভাঙাতে চেষ্টা করেন তামিম। টাইগার ওপেনার গতকাল দুপুরে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে ঘোষণা দেন, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ দল বিকেলে দেশ ছাড়ার পর সাম্প্রতিক ঘটনার একটা ব্যাখ্যা দেবেন ভিডিও বার্তায়। বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইট সাকিবদের নিয়ে গৌহাটির উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার পর বোমা ফাটান তামিম। তিনি পরিষ্কার বার্তা দেন– কেন বিশ্বকাপ দলে নেওয়া হয়নি তাঁকে।
সোমবার রাত থেকে দেশের কয়েকটি মিডিয়ায় ব্রেকিং নিউজ চলতে থাকে– বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ খেলার শর্ত দিয়েছেন তামিম। যেটা শুনে ক্ষিপ্ত ও বিরক্ত ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এমনও লেখা হয়েছে আনফিট তামিমকে দলে নেওয়া হলে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেবেন না তিনি। সাকিবের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। তবে এটা জানা গেছে বোর্ড থেকে চেষ্টা করা হয়েছে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করার। তামিমের মতে, ‘আমি অবসরে যাই। অবসর নেওয়ার পেছনেও একটা কারণ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে আমি ফিরে আসি। গত দুই মাস আমি প্রচণ্ড কষ্ট করি। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন, তারা সবাই একমত হবেন যে এমন কোনো সেশন নেই, যেটা আমি করিনি। গত তিন-চার মাসে যা কিছু ঘটে গেছে, সেটা নিয়ে আমি খুশি ছিলাম না। প্রথম ম্যাচে আমি ৩০-৩৫ ওভার ফিল্ডিং করেছি। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ এলো– ৪৪ রান করেও আমি খুবই খুশি ছিলাম, আত্মবিশ্বাস ছিল।’
এরপর একটু দম নিয়ে ভেতরের ঘটনায় প্রবেশ করেন ৩৪ বছর বয়সী এ টাইগার ওপেনার, ‘ওই ম্যাচের পর আমি খুশি ছিলাম। আমি আবার খেলার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। বিশ্বকাপ খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। এত দিন পর ক্রিকেট খেললে অস্বস্তি থাকেই। শরীরে ব্যথা থাকবে। আমারও তাই হয়েছে। প্রথম ম্যাচে কিছু ব্যথা অনুভব করি। পরের ম্যাচেও হয়েছে। খেলা শেষ হওয়ার পর আমি আমার অবস্থানটা ফিজিওকে বললাম। ঠিক ওই মুহূর্তে তিনজন নির্বাচক ড্রেসিংরুমে আসে। একটা জিনিস আপনাদের পরিষ্কার করে দিতে চাই। একমুহূর্তের জন্য কাউকে আমি বলিনি পাঁচটি ম্যাচের বেশি খেলতে পারব না। এই কথাটা কোনো সময় হয়নি। গতকাল নান্নু ভাইও বিষয়টি পরিষ্কার করেছে। আমি জানি না মিথ্যা কথা, ভুল কথাটা কীভাবে মিডিয়াতে ফিট করা হয়েছে। যে জিনিসটা আমি নির্বাচকদের বলেছিলাম, দেখেন আমার শরীর এ রকমই থাকবে। এখন যেমন আছে। একটু ব্যথা থাকবে। এই জিনিসটি মাথায় রেখে নির্বাচন করবেন। আমি আরেকটি বিতর্ক তৈরি করতে চাইনি। এজন্যই বলেছি এই জিনিসটি মাথায় রেখে আমাকে নির্বাচন করতে।’
বিশ্বকাপ দল নির্বাচন নিয়ে সবকিছু ঠিকমতোই এগোচ্ছিল। তামিম ইকবালকে রেখেই স্কোয়াড সাজানো হয়েছিল। কিন্তু গোল বাধায় একটি ফোনকল। তামিমের ভাষায়, ‘মিডিয়াতে যে জিনিসটা আসছে– ইনজুরি বা পাঁচ ম্যাচ খেলা। আমার কাছে মনে হয়নি বিশ্বকাপে না যাওয়ার পেছনে এগুলোর কোনো বড় অবদান ছিল। কারণ আমি তো ইনজুরড হইনি, ব্যথা থাকতে পারে। এর এক-দুই দিন পর বোর্ডের শীর্ষ পর্যায় থেকে একজন ফোন করেন, যিনি কিনা ক্রিকেটের সঙ্গে খুবই জড়িত। তিনি আমাকে বললেন, তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাতে হবে, এক কাজ করো আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলো না। আমি বললাম, এখনও ১২-১৩ দিন আছে। আমি তো ভালো কন্ডিশনে থাকব তখন। কেন খেলব না। তখন তিনি বলেন, “তুমি যদি খেলো তাহলে আমরা এ রকম একটা আলোচনা ও পরিকল্পনা করছি– তোমাকে আমরা নিচে ব্যাটিং করাব।” স্বাভাবিকভাবেই আপনাকে মনে রাখতে হবে আমি কোন মাইন্ড সেটআপ থেকে এসেছি। আমি একটি ভালো ইনিংস খেলেছি। হঠাৎ করে এ রকম একটি কথা আমার পক্ষে নেওয়া সম্ভব ছিল না। আমি ১৭ বছর ধরে এক পজিশনে ব্যাটিং করেছি। জীবনে কোনো দিন তিন-চারে ব্যাটিং করিনি। স্বাভাবিকভাবেই আমি কথাটা ভালোভাবে নিইনি। উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে জোর করে অনেক জায়গায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। তখন আমি বললাম, দেখেন আপনাদের যদি এ রকম চিন্তাভাবনা থাকে, তাহলে আমাকে পাঠাইয়েন না। আমি নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। প্রতিদিন আমাকে একটা নতুন জিনিসের মোকাবেলা করাবেন, আমি তাতে থাকতে চাই না।’
তামিম আশা করেছিলেন মানসিকভাবে ফ্রি থেকে বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন। জাতীয় দল থেকে সেই রকম একটি পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হবে। কিন্তু তিনি উল্টো একটি মহলের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বিশ্বকাপ খেলা থেকে বঞ্চিত হলেন। তামিমকে বিশ্বকাপ দলে না নেওয়া ও তাঁর বড় ভাই নাফিস ইকবালকে ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় প্রতিশোধের একটা গন্ধ পাচ্ছেন সবাই। সেই যে বিসিবি সভাপতিকে অন্ধকারে রেখে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম। তার শোধ।