ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সাক্ষাৎকারে ফিরোজা খাতুন

‘এটা গর্ব করার মতো পুরস্কার’

‘এটা গর্ব করার মতো পুরস্কার’

স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন ১০বারের দ্রুততম মানবী ফিরোজা খাতুন

সাখাওয়াত হোসেন জয়

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৪ | ১১:১৭

শুক্রবার সকাল থেকেই অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন। কাছের-দূরের অনেকের কাছ থেকে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছেন। মোবাইলে অপ্রত্যাশিত অনেক ফোনও এসেছে ফিরোজা খাতুনের। বর্তমান প্রজন্মের কাছে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের সাবেক এ নারী অচেনা হলেও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে ফিরোজা খাতুন হলেন অনন্যা। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ১০ বার দ্রুততম মানবী হয়েছেন। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ছাড়াও ২০০ মিটার এবং হাইজাম্পে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। দেশের বাইরে ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে পদক জেতা ফিরোজা পেয়েছিলেন ২০১২ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। ২০১৬ সালে সেটা নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে। এবার  সাবেক এ দ্রুততম মানবী তাঁর কীর্তির জন্য এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন। পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি এবং ক্রীড়াঙ্গনের অতীত ও বর্তমান নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন ফিরোজা খাতুন। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল : দ্বিতীয় নারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন। নিশ্চয়ই অনেক ভালোলাগা কাজ করছে?
ফিরোজা :
আমি যখন শুনলাম, তখন বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমি এক বাসা থেকে আরেক বাসায় যাচ্ছিলাম। রাস্তায় অপরিচিত নাম্বার থেকে আমার ফোন বেজে উঠল। মন্ত্রিপরিষদ থেকে একজন বলল– আপনি তো স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন। ওই মুহূর্তে এটা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু হঠাৎ করে শুনে আমি কেমন জানি হয়ে গিয়েছিলাম। সেই সময় আমার কান্না চলে এসেছিল। আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এটা কী করে সম্ভব। বিষয়টি আমার জন্য প্রত্যাশিত ছিল না। শান্ত হয়ে ভাবলাম, সত্যিই তো আমি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পদক স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়ে গেলাম। এটার জন্য আমি আবেদন করেছিলাম। তবে মনে একটা ধারণা ছিল, এবার হয়তো নাও আসতে পারে। পরেরবার আবার আবেদন করব, তখন হয়তো পেয়ে যাব। এবারই যে পেয়ে যাব, তা আমার চিন্তায় ছিল না। বলতে পারেন এটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিতই।

সমকাল : অনেক কৃতী ক্রীড়াবিদ আছেন, যারা রাষ্ট্রের পুরস্কার পাওয়ার জন্য আবেদন করেন না। তাদের কথা হলো রাষ্ট্রই তাদের মূল্যায়ন করবে। আপনি কীভাবে আবেদন করেছেন?
ফিরোজা :
আমিও নিজ থেকে আবেদন করিনি। মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফিরোজা করিম নেলি আপা আমাকে জোর করে আবেদন করিয়েছেন। তিনি আমাকে কাগজপত্র সবকিছু ঠিক করে দিয়েছেন। তাঁর কথাতেই আমি আবেদন করেছি। আর তিনি না বললে আমি আবেদন করতাম না, আর এখন পুরস্কারও পেতাম না।

সমকাল : প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেবেন। কেমন লাগছে?
ফিরোজা :
এটা তো আমার জন্য অনেক বড় অর্জন, প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেব। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আর এই পুরস্কারটা আমি দ্বিতীয় নারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে পাচ্ছি বলে আরও বেশি ভালো লাগছে। আর প্রথম যিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন, তিনিও (প্রয়াত সুলতানা কামাল) অনন্যা ছিলেন একজন। অবশ্যই এটা গর্ব করার মতো পুরস্কার। যদি সুযোগ হয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কিছু কথা বলব। এর আগে আমি তাঁর হাত থেকে একটা পুরস্কার নিয়েছিলাম। তখন আমি তাঁকে বললাম, আমার অনেক দিনের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। তখন তিনি বললেন, তাই?

সমকাল : এবার কী বলবেন?
ফিরোজা :
এবার কী বলব, তা এখনও জানি না। দেখা গেল‌ ওই সময় মুখ ফসকে কিছু একটা বলে ফেললাম। আর তাঁর কাছে আমার নিজের জন্য কোনো চাওয়া থাকবে না।

সমকাল : খেলাধুলায় মেয়েরা এখন অনেক এগিয়ে...
ফিরোজা :
মেয়েদের এগোতেই হবে। আর এটা এখন স্বাভাবিক। আমরা যে সময় খেলাধুলা করেছি, সে সময় অনেক বাধা-বিপত্তি পাড়ি দিতে হয়েছে। আমরা যদি বছর আগে কঠিন সব পরিস্থিতির মধ্য থেকে বের হয়ে আসতে পারি, তাহলে এখন তারা কেন পারবে না। এখন শুধু পারতে হবে না, তাদের করে দেখাতে হবে।

সমকাল : পুরস্কারটি কাকে উৎসর্গ করতে চান?
ফিরোজা :
আমার খেলার জগতে আসার মূলেই আমার আব্বা আমির-উল-হক। তিনি না চাইলে আমার খেলাধুলায় আসা হতো না। আর এই পুরস্কার পেতামও না। এ জন্য আমি পুরস্কারটি আমার আব্বাকে উৎসর্গ করতে চাই। তিনি বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। ২০২১ সালে তিনি মারা যান। 

সমকাল : এই প্রজন্মের অ্যাথলেটদের উদ্দেশে আপনার কোনো বার্তা আছে কিনা?
ফিরোজা :
‌তারা খেলে বাংলাদেশের জন্যই। আমি তো চাই, আমার বাংলাদেশ সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাক। এটা মাথায় রেখেই এই প্রজন্মের অ্যাথলেটদের খেলা উচিত।

সমকাল : আপনার সময় অ্যাথলেটিকসের যে অবস্থান ছিল, এখন কি সেই অবস্থায় আছে, নাকি নেই?
ফিরোজা :
অনেককেই বলতে শুনি আমাদের সময় যথেষ্ট দর্শক টানত, এখন ‌ওই সমর্থনটা তারা পান না। বর্তমানে যারা মাঠে যান, তাদের এই কথা বলতে শুনি। আমি যেহেতু ঢাকার খেলাধুলা থেকে অনেক দূরে আছি, তাই সেভাবে কারণগুলো বলতে পারব না। খেলাধুলা নেই বললে ভুল হবে, আমি ময়মনসিংহ ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদিকা। আমি এখানকার খেলাধুলা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। অন্য কিছু নিয়ে ভাবি না।

আরও পড়ুন

×